দি স্টেটসম্যান
১৫ মে ১৯৭১
দূতাবাস কর্মচারি বিনিময়ে সুইস প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত
– আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি
নয়া দিল্লি, ১৪ মে – পাকিস্তান সরকারকের সুইস সরকার তাদের দূতাবাস কর্মচারি ঢাকা, কলকাতা থেকে ইসলামাবাদে বিনিময়ের প্রস্তাব দিয়েছিল যাতে ভারতের সাথে তাদের দ্বন্দ্ব উপশম হয় – কিন্তু পাকিস্তান তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা আশ্চর্যজনক। গতকাল শেষরাতে এই খবর আসে।
একদিন আগে পাকিস্তান সরকার প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল যেখানে কলিকাতার সাবেক ডেপুটি হাই কমিশনার জনাব মেহেদি মাসুদ, জনাব হোসেন আলি ও পূর্ব বাংলার সুইস স্টাফ ছিলেন। এখন বিষয়টা দেশটির (পাকিস্তান) বন্ধ বা খোলা কূটনীতিতে দোলায়মান।
পাকিস্তান সরকারের দুইজন মুখপাত্র, যারা একবার সুইস প্রতিনিধি জনাব মাসুদ এবং পূর্ব বাংলার অন্য কর্মচারিকে গ্রহণ করে নিয়েছেন আরেকবার তাদের প্রত্যাখ্যান করেছেন – এই দুইটি বিষয় এখন স্পষ্ট করা দরকার।
পাকিস্তানের কাছে আশ্চর্য হচ্ছে সুইস হস্তক্ষেপ খুব দ্রুত সরে গিয়েছিল। নিশ্চিত ভাবে তাদের উদ্যেশ্য ছিল কূটনৈতিক চাপ বজায় রাখা যাতে করে আন্তর্জাতিক মনোযোগ বাংলাদেশে পাকিস্তানি আর্মিদের কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকে এবং একই সাথে শরণার্থীদের ভারতে চলে যাবার ব্যাপারটাও বিশ্ববাসীর নজরের বাইরে থাকে।
সর্বশেষ এখানে সরকারি সূত্রকে এই ব্যাপারে কথা বলতে অনিচ্ছুক মনে হল। সুইসকে তারা এই বিষয়ে জড়িয়েছিল তাদের নিজেদের লাভের আশায় কিন্তু এখন তা না হওয়ায় তারা সেটাকে প্রত্যাখ্যান করছে। ভারত তার পক্ষে থেকে যে কোন গঠনমূলক পদক্ষেপে সহায়তার কথা বলেছে – যা সুইস দূত পাকিস্তানের সাথে আলাপ করে তাদের জানাবেন বলে জানিয়েছেন।
এতে করে এই বিষয়ে ভারত যে আলোচনায় আগ্রহী তাই প্রমাণ হয় – একথা আজ সুইস এম্বাসেডর জনাব ফ্রিজ রিয়েল সেক্রেটারি এস এ ব্যানার্জি (পূর্ব) এর সাথে বৈদেশিক অফিসে আলাপকালে বলছিলেন। মিটিঙটা শুরু হয়েছিল পাকিস্তান সরকারের প্রত্যাখ্যানের পরে।
স্পর্শকাতর ইস্যু
উদ্বেগের বিষয় হল পাকিস্তান এমন একটা স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। প্রথমে পাকিস্তান ঢাকা ও কলিকাতার রাশিয়ান দূতদের প্রত্যাখ্যান করেছে। এরপর ইরান আসে যখন ভারত ইরানকে অনুমতি দিয়েছিল তাদের বিমানকে কলিকাতায় নামতে দেবার ব্যাপারে। সবশেষে পাকিস্তান সুইসদের সাথে এই সিদ্ধান্ত নিল। এখন সুইস দূত এবং সুইস সরকার প্রতিনিধি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন – তারা বলেন পাকিস্তান পুরো বিষয়টাকে পেছনের দিকে নিয়ে গেল।
পাকিস্তানকে সুইস দূতাবাস জনাব মাসুদ ও বাংলাদেশ থেকে জনাব হোসেন আলির সাথে যে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল তা আজ ইসলামাবাদে একজন সরকারি মুখপাত্র প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এক বিবৃতিতে মুখপাত্র অভিযোগ করেন যে এখানে ভারত আসলে সুইসদের কলকাতার মিশনকে অন্যদিকে পরিচালিত করতে চেষ্টা করছে।
মুখপাত্র বলেছেন, ভারত আসলে জনাব মাসুদ আর প্রাক্তন হাইকমিশনার জনাব হোসেন আলী মধ্যে একটি বৈঠকের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছিল – যা আসলে জনাব আলির ইচ্ছা ছিল।
অদ্ভুতভাবে, মুখপাত্র এ বিষয়ে তার পূর্ববর্তী বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করেন – তিনি বলেন যে এই সভায় সুইজারল্যান্ডের বা অন্য কোন তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা করার কোন প্রয়োজন নেই।