You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.05.12 | অমৃতবাজার পত্রিকা, ১২ মে ১৯৭১, দূতাবাস কর্মচারি বিনিময়ে সুইস মধ্যস্থতায় পাক- ভারত সম্মতি - সংগ্রামের নোটবুক

অমৃতবাজার পত্রিকা
১২ মে ১৯৭১
দূতাবাস কর্মচারি বিনিময়ে সুইস মধ্যস্থতায় পাক- ভারত সম্মতি
আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি

নয়া দিল্লি, মে ১১ – ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সপ্তাহ ধরে আটকে থাকা সমস্যা শেষ পর্যন্ত সুইস অফিসের মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়েছে। ঢাকা ও কলকাতা তাদের নিজ নিজ মিশনের কর্মীদের প্রত্যাবাসন প্রশ্নে রাজি হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুযায়ী, রাশিয়া এবং ইরান কর্তৃক সফল প্রচেষ্টার পর তৃতীয় পক্ষের সহায়তায় পাকিস্তান সুইস সরকারের কাছে এপ্রচ করে। তারা তাঁদের ভারত ও পাকিস্তানের ঢাকা ও কলকাতার ডেপুটি হাই কমিশন প্রত্যাবাসনের সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে এগিয়ে আসতে বলে।

নয়া দিল্লি থেকে সুইস রাষ্ট্রদূত ড ফ্রিটজ রিয়াল আজ বিকেলে পররাষ্ট্র সচিব জনাব এস কে ব্যানার্জীর সাথে দেখা করেন এবং প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন – যা ভারত গ্রহণ করে।

এর কিছুদিন পরেই পাকিস্তান হাই কমিশনার জনাব সাজ্জাদ হায়দার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এস কে ব্যানার্জির সাথে দেখা করেন – যিনি সুইজারল্যান্ড কে বিষয়টা দেখতে বলেছিল।

প্রধান ঝাকি

পাকিস্তানের জোরাজুরিতে ঢাকা মিশন স্টাফকে সরানোর আবেদনের কারণ হল ডেপুটি হাই কমিশনার জনাব মাহেদি মাসুদ ভারত সরকারের থেকে সুবিধা নিয়ে তাঁদের কলিকাতা মিশনের সকলের ইচ্ছা পূরণ করবেন যারা বাংলাদেশের পক্ষে তাঁদের অবস্থান প্রকাশ করেছিলেন এবং পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন।

যেহেতু জনাব আলি হোসেন ও অন্যান্য সদস্যরা যারা কলকাতা মিশনে ছিলেন তারা জনাব মাসুদের সাথে একা বসতে একমত হচ্ছিলেন না তাই পাকিস্তান একজন মধ্যস্ততাকারির ব্যাবস্থা করে।

ভারতের অবস্থান ছিল যে এটা জনাব মাসুদ ও পাকিস্তান ডেপুটি হাই কমিশনের সদস্যদের মধ্যকার ব্যাপার। ভারত এর মধ্যে আসতে চায়নি। অথবা ভারত কাউকে জনাব মাসুদের সাথে সাক্ষাতের জন্যও চাপ দেয়নি। যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জনাব হোসেন আলিকে অনুরোধ করেছে জনাব মাসুদের সাথে দেখা করার জন্য। কিন্তু যখন জনাব রসান আলি জনাব মাসুদের সাথে দেখা করতে গেলেন – কলাকাতা মিশনের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে – যারা বাংলাদেশের ব্যাপারে তাঁদের অভিযোগ করেছিল – তখন জনাব মাসুদ জোর করলেন যে তাদের সাথে আলাদা আলাদা দেখা করা উচিত। তাই জনাব হোসেন আলি ও গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা চলে গেল।

পদ্ধতিসমুহ
এটা জানা ছিল না যে কি পদ্ধতিতে সুইস অফিস এটা সমাধান করবেন। ইন্ডিয়া বিষয়টা নিয়ে যতটুকু অবগত আছে তাতে করে তারা মনে করে এটা সুইস ই পাকিস্তানের মধ্যেকার ব্যাপার। তারাই এটা সমাধান করবেন। ভারত এটা স্পষ্ট করেছে যে ঢাকা ও কলিকাতা মিশনের প্রত্যাবসন পারশপরিক সম্পর্কিত বিষয়। তবে তা সংখ্যার সাথে সম্পর্কিত নয়। আমাদের ঢাকা মিশনের সকল স্টাফ যারা ইচ্ছা প্রকাশ করেছে ভারতে আসার ব্যাপারে তাঁদের অনুমতি দেয়া উচিত। ভারত তাঁদের সবাইকে কলিকাতা মিশনে আসার সম্মতি দেবে যারা পাকিস্তান থেকে আসতে চায় কিন্তু কাউকে জোর করে সেখান থেকে আনবে না।

এটা দেখা যাছে যে সুইস প্রতিনিধিরা পাকিস্তান মিশনের লোকদের ইচ্ছা পূরণের জন্য তাঁদের কলিকাতায় আনার জন্য তৎপর আছেন। ঢাকায় সুইসদের কোন মিশন নাই। সুইসরা কলিকাতা মিশনের স্টাফদের সাথে একসাথে বা আলাদা কথা বলবে কিনা অথবা তারা সম্মিলিতভাবে বা আলাদা আলাদা করে কলিকাতা মিশন ও জনাব মাসুদের সাথে আলোচনা করবে কিনা – এগুলো সব নির্ভর করে সুইস অফিসের কার্যকারিতার উপর।

ভারত মূলত ঢাকা থেকে সকল স্টাফ এর প্রত্যাবসনের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন এবং পাকিস্তান মিশনের স্টাফদের কেউ যদি ইচ্ছা প্রকাশ করে তবে তারা তাকে কোন বাধা দেবেন না।

সুইস চেষ্টায় সমস্যাটা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এবং সূক্ষ্ম আশা নিয়ে তারা অপেক্ষা করবে। গত ১৬ এপ্রিল ঢাকা ও কলিকাতা মিশন বন্ধ করা হয়েছে কারণ পাকিস্তান একচেটিয়াভাবে তাঁদের ডেপুটি হাই কমিশন বন্ধ করে দেয় এবং ভারতকে বলে ঢাকায় তাঁদের মিশন বন্ধ করে দিতে।

বন্ধ করে দেয়া মিশনের সদস্যদের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি কারণ পাকিস্তান ভারতকে জড়াতে চাইছে যদিও এটা সম্পূর্নভাবে পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার।