ব্যাংকক পোস্ট | ২৪ মে ১৯৭১ | সম্পাদকীয় – বিশ্ব কিছুই করছেনা
আমরা যদি এমন পরিস্থিতি চিন্তা করি যে ব্যাঙ্কক এবং থানবাসির প্রত্যেক নাগরিকের খাদ্য, বাড়ি, চাকরি, এবং চিকিত্সার সুযোগ নেই, তবে আমরা বুঝতে পারব পূর্ব পাকিস্তানিদের ২.৬ মিলিয়নের অবস্থা কি। সেখানে এই মানুষগুলো নিজের ভিটেয় টিকে থাকতে না পেরে শরনার্থি হয়েছে। এই সংখ্যাটা হল তাদের যারা গত সাত সপ্তাহে দেশের যুদ্ধ এড়িয়ে চলতে ভারতে পারি জমিয়েছে। আরও কত মানুষ ঘর ছাড়া হয়েছে তা অনুমান করা অসম্ভব। অন্যদিকে গত শুক্রবার রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান তার বিবৃতিতে বলেছেন পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা স্বাভাবিকের দিকে ফিরে এসেছে এবং ভারতে অবস্থিত সমস্ত উদ্বাস্তু এখন দেশে ফিরে আসতে পারেন।এটা স্পষ্ট যে বিস্তৃত সাহায্যের জন্য বিশ্ববাসীর জরুরি সাহায্য প্রয়োজন।
শ্রীযুক্ত মহাত্মা গান্ধী গত সপ্তাহে তীব্র অভিযোগ করেছিলেন যে, কোনও সমৃদ্ধ দেশ এই শরণার্থীদের সহায়তায় আসেনি এবং তাদের যত্ন নেয়ার কাজটি বিপজ্জনকভাবে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ভারত ইতিমধ্যেই সম্পদের সমস্যায় আছে। যদিও তার কথা রাজনৈতিক উপাদান সমৃদ্ধ হতে পারে তথাপি যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে। এই শরণার্থীদের সহায়তার জন্য কোন সুশৃঙ্খল সংগঠন নেই বলে মনে হয়।এটা মনে হয় যে বিশ্ব বিরক্ত হয়ে গেছে, সন্দেহে পরে গেছে এবং ভারত উপমহাদেশের পরিস্থিতিতে হতাশ। তারা কোন কিছু শুনছে না বা সাহায্যে এগিয়ে আসছেনা।
গত বছর যখনভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল তখন পূর্ব পাকিস্তানে তেমন কোনও সহায়তার ব্যবস্থা ছিল না যেমনটা আমরা দেখেছি। তখন বাইরের সাহায্যের চাওয়া হচ্ছিল। কিন্তু এবার কোনও রয়াল মেরিন বঙ্গোপসাগরে আসেনি – কোনও মার্কিন হেলিকপ্টার চাল দিতে মাটিতে নামেনি। পৃথিবী সব সময় পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল এবং বলেছে এবার তাদেরকে নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে দিন। কিন্তু আমরা এই ঘটনা চলতে দিতে পারি না।মানবতার নামে, আমরা গৃহ যুদ্ধ শুরু করতে পারিনা। বিশ্ব পূর্ব পাকিস্তানে অনেক ভালো কিছু করতে পারে। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ মহাসচিব উ থান্ট শরণার্থীদের সহায়তার জন্য তহবিল গঠনের জন্য একটি আবেদন করেছেন। তার কথাগুলো জরুরি নয় যদিও তিনি বলেছেন যে কত কঠিনভাবে তারা সাহায্য করতে চেষ্টা করছেন। থাইল্যান্ড একটি ধনী দেশ নয় এবং একেবারে দরিদ্রও নয়। অবশ্যই আমরা বল রোলিং করতে শুরু করতে পারি। এবং নিশ্চিতভাবেই আমাদের অনেক চাল অতিরিক্ত আছে। আমরা যদি সত্যিকার অর্থে শান্তি স্থাপন করতে যাই তাহলে সেটাই হবে প্রথম পদক্ষেপ।আমরা যদি সত্যি পৃথিবীতে শান্তি চাই তাহলে ক্ষুধার্তদের খাওয়ানো, অসুস্থদের পরিচর্যা করা এবং পূর্ব পাকিস্তানে গৃহহীনদের বাসস্থান দেয়া থেকেই তা শুরু করতে হবে। যদি আমরা নিজেরা অপরাজনীতির উপরে নির্ভর না করি যা দীর্ঘমেয়াদি আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে এসেছে তবে আমাদের পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য কিছু করতে হবে – সেটি আমাদের নিজেদের জন্যও করা হবে। অন্তত, আমরা চেষ্টা করে দেখতে পারি।