বনগাঁয় দু’লক্ষাধিক শরণার্থী বন্যায় জলবন্দী
কলকাতা ১২ সেপ্টেম্বর (ইউ এন আই)- ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমায় বন্যার ফলে বাংলাদেশ থেকে আগত দু’লক্ষাধিক শরণার্থী জলবন্দী হয়ে রয়েছেন। আজ জেলা শাসক শ্রীবিশ্বরূপ মুখার্জী জানান যে গত ২৪ ঘন্টায় ইছামতী নদীর জল আরাে ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বনগাঁ মহকুমার নতুন নতুন এলাক কে জলমগ্ন করেছে। তিনি জানান, ঐ মহকুমার তিন-চতুর্থাংশ জলের তলায়, জনসংখ্যার শতকরা ৭৫ জনই বন্যায় দুর্গত এবং অবস্থা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ব্যাপক এলাকা জলমগ্ন থাকার ফলে বাগদা, বয়রা ও অন্যান্য বিধ্বস্ত এলাকায় রিলিফের জিনিস পত্র পাঠানাে অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। জেলাশাসক জানান, সেনাবাহিনীর ৫৮টি স্পীডবােটকে কাজে লাগানাে হয়েছে এবং আরাে ৫টি স্পীডবোেট শীঘ্রই পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। এই মহকুমায় যে ৩২টি শরণার্থী শিবির রয়েছে, তার অধিকাংশ বন্যায় কবলিত। কিন্তু সব চাইতে খারাপ অবস্থা হল বয়রা ও ইটখােলার শরণার্থী শিবির দুটিতে। এই দুই শিবির থেকে প্রায় এক লক্ষ শরণার্থী উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। জেলা শাসক বলেন যে, বনগাঁ বাগদা সীমান্তের কাছে অশ্রু সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ মিলিতভাবে এই সেতুটি মেরামতের কাজে লিপ্ত হয়েছেন। অবশ্য নদীয়া ও মালদহ ছাড়া অন্যান্য জেলার বন্যার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে বলে এখানে প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেল।
গুপ্তিপাড়ায় কমিউনিস্ট পার্টির ত্রাণকার্য-হুগলী থেকে আমাদের সংবাদদাতা জানাচ্ছে দে-কল বিলে বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার জলে প্লাবিত গুপ্তিপাড়ায় আজ ৪ ফুট জল কমেছে বটে, কিন্তু আসাম লিঙ্ক জাতীয় সড়ক এখনাে জলের তলায়। বন্যার্তদের দূর্গতিও যথাপূর্ব সরকারী রিলিফ নেই বললেই চলে, এলাকার প্রায় এক হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও ২৪ হাজার বন্যার্তের মধ্যে অধিকাংশ খােলা আকাশের তলায় দিন কাটাচ্ছেন। এখনাে তাবু সরবরাহের ব্যবস্থাও হয়নি। এই অবস্থায় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির হুগলি জেলা পরিষদের সদস্য শ্রীজগদীশ দামের নেতৃত্বে পার্টির শাহাগঞ্জ-বাঁশবেড়িয়া শাখার শ্রীদুর্গা নন্দী, স্থানীয় যুবসন্দ্রের শ্রীঅরুন বসু ও খামারপাড়া তরুন সমিতির সর্বশ্রী নিমাই কুন্ডু ও চুড়ামণি কুন্ডু বন্যাপ্লাবিত গুপ্তিপাড়া এলাকার বার্তদের মধ্যে এক হাজার কোয়ার্টার পাউন্ড পাউরুটি বিতরণ করেছেন শ্রীদুর্গানন্দী জানান যে, ঐ এলাকায় কেরােসিন তেলেরও প্রচন্ড অভাব। আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে তারা কেরােসিনের তেলসহ অন্যান্য রিলিফের জিনিসপত্র নিয়ে গুপ্তিপাড়ায় যাবে।
সূত্র: কালান্তর,১৩.৯.১৯৭১