পূর্ববাংলার দিকে দিকে প্রতিরােধ গড়ে উঠেছে
ফ্যাসিস্ট আক্রমণের বিরুদ্ধে
সাম্রাজ্যবাদের সমর্থনপুষ্ট ইয়াহিয়ার ফ্যাসিস্ট বাহিনী নরমেধ যজ্ঞ শুরু করেছে পূর্ব বাংলার স্ব-শাসন ও গণতন্ত্রের দাবিকে গলাটিপে হত্যা করতে। ঢাকা শহরের বুকে চলেছে ফ্যাসিস্ট দানবীয় অত্যাচার। গণআন্দোলনের সংগঠিত যুব উদ্যমের স্মৃতিমাখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে রক্ত পিপাসু সামরিক বাহিনী অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ২৫ মার্চ রাতে। ছাত্র-যুবকরা বর্বর আক্রমণের প্রতিরােধে কয়েক ঘণ্টার রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে নামে ২৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর সামরিক বাহিনী আকাশ থেকে বােমা বর্ষণ করে বিশ্ববিদ্যালয় ভবনকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে। সামরিক পশু বাহিনী ইতিমধ্যে কয়েক ঘণ্টায় শত শত ছাত্রের দেহ গােলা বারুদে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে রক্তে রঞ্জিত করেছে বাংলার মাটি। এরপর তারা সারা শহরের বুকে রক্তের বন্যা বইয়ে দিতে সাজোয়া ট্যাঙ্ক নামায়। নিরস্ত্র জনতার উপর অবিরাম গােলাগুলি চালায়। ৪০ সহস্র নিরস্ত্র জনতার রক্তে রঞ্জিত করেছে ঢাকার মাটি বাংলার মাটি। ইকবাল হল, সলিমুল্লা মুসলিম হল, জিয়া হল, জগন্নাথ হল, রােকেয়া ছাত্রী নিবাস ইত্যাদি সবগুলােকে নরকপুরিতে পরিণত করে সামরিক বাহিনীর দুর্গ ঘাটিতে পরিণত করেছে ইয়াহিয়া বাহিনী।
ঢাকা- শত্রুসেনার শহর দখল করে নিয়েছিল। গতকাল ২৯ মার্চ সকাল থেকে সন্ধ্যা কাফু। তুলে দেয়া হয়েছে বলে বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর রেডিও স্টেশন দখলের অভিযান হওয়ায় সাথে সাথে আবার কার্টু বলবৎ করা হয়। দুপুর এবং রাতে ঢাকা রেডিও বন্ধ ছিল। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে প্রচণ্ড সংগ্রাম হয়।
চট্টগ্রাম চট্টগ্রামের শহর-গ্রাম মুক্তিবাহিনীর আওতাধীন এলাকা বলে জানা গেছে। ইয়াহিয়া বাহিনীর সৈন্যদল শুধুমাত্র বিমান ঘাটি ব্যবহারের চেষ্টা করছে। সেখানেও প্রতিরােধ সংগ্রাম চলছে, মুক্তিবাহিনী এই ফ্রন্টে এগিয়ে চলেছে।
খুলনা-ইয়াহিয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনী লড়াই করছে। গ্রামাঞ্চলে মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। রাজশাহী- এখানেও মুক্তিবাহিনী বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রতিরােধ দুর্গ গড়ে তুলে মুক্ত অঞ্চলের সৃষ্টি করেছে।
শ্রীহট্ট শ্রীহট্টের সংগৃহীত খবরে জানা যায়, মুক্তিবাহিনী সম্পূর্ণ শহর গ্রাম মুক্ত করে রেখেছেন শহরগুলােতেও ইয়াহিয়া বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়ীয়া- সমগ্র অঞ্চল মুক্ত অঞ্চল সৃষ্টি করে মুক্তিবাহিনী নতুন অঞ্চলগুলাে দখলের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইয়াহিয়া বাহিনী পিছু হটছে।
রংপুর মুক্তিবাহিনী প্রতিরােধ সংগ্রাম চালিয়ে সমগ্র গ্রামাঞ্চলকে মুক্ত করে রেখেছে। সামরিক ক্যাম্পগুলাের কাছাকাছি এখনও প্রতিরােধ সংগ্রাম চলছে।
ময়মনসিংহ- ময়মনসিংহের বিস্তীর্ণ অঞ্চল মুক্ত অঞ্চলে পরিণত করে মুক্তিবাহিনী এখানে আরও ঘৃণ্য প্রতিরােধ সংগ্রাম চালানাের জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছে।
টাঙ্গাইল- শুরুতেই মুক্তিবাহিনী মুক্ত অঞ্চল সৃষ্টি করে রেখে ইয়াহিয়া বাহিনীর আক্রমণে দুর্গত অঞ্চলকে সাহায্যের জন্য বিভিন্ন দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র: দেশের ডাক
০২ এপ্রিল, ১৯৭১