You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.31 | যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশ- ফেনী | জাগরণ - সংগ্রামের নোটবুক

যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশ
ফেনী
জাগরণ প্রতিনিধি
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

সহদেবপুর মজুমদার বাড়ি ইংরেজ আমলে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কেন্দ্রস্থল ছিল। তারা ছিলেন জমিদার। তাদের সাহায্যেই ফেনীর বিভিন্ন শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্নিপুরুষ বাঘা মজুমদার তথা জিতেন্দ্র মজুমদারও জন্মেছিলেন এ বাড়িতে। দেখলাম তাদের বড় বড় ইমারতগুলাে শুধু স্ট্রাকচার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আসবাবপত্র তাে দূরের কথা দরজা-জানালা, চৌকাঠ কিছুই নেই। বাড়ির সম্মুখস্থ বিরাট কালী মন্দিরকে ধ্বংস করে দিয়ে তার মাটির বিগ্রহ নষ্ট করা হয়েছে গুলিবিদ্ধ করে। অনুরূপভাবে নষ্ট করা হয়েছে ফেনীর জয়কালী বাড়ির বিগ্রহ। ত্রিপুরার মহারাজা প্রতিষ্ঠিত ফেনীর রাজবাড়ী কালী বিগ্রহ, ফেনীর জগন্নাথ বাড়ির বিগ্রহ এবং সাজাগঞ্জ আশ্রম মন্দির ও বিগ্রহ। মনে হয় হিন্দু ধর্মকে নির্বাসন দেবার এক দুর্বার আন্দোলন করেছিল ইয়াহিয়ারা। ফেনীর বৃহত্তম চড়ার কলে গিয়ে দেখি এর কলকজা, এমনকি কারখানার উপরকার আচ্ছাদনও নেই। এ মিলটির ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে তিন লক্ষ টাকা। মালিক একজন হিন্দু।
ফেনীর এম এন এ খাজা আহমদ এক সাক্ষাতকারে জানান, ফেনীতে শতকরা ত্রিশজন ব্যবসায়ী ছিলেন হিন্দু। এদের সবকিছুই লােপাট ও নিঃশেষ হয়েছে জঙ্গি চক্রের জঙ্গিপনায়। তিনি জানান, ফেনীতে কমপক্ষে পাঁচ হাজার লােককে হত্যা করা হয়েছে; তন্মধ্যে অধিকাংশই আওয়ামী লীগ ও ন্যাপ কর্মী। হিন্দুর সংখ্যাও কম নয়। তা ছাড়া ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক যে হিসাব জনাব আহমদ আমাদের জানান, তাতে প্রকাশ, সাত কোটিরও অধিক টাকার ধন সম্পত্তি এখানে নষ্ট করা হয়েছে। জনাব আহমদ এর নিজের ক্ষতির পরিমাণও দু’লক্ষাধিক টাকার উপর। স্থানীয় এমপি জনাব তালেব আলী সাহেবও প্রভূত আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
জনাব খাজা আহমদ আরও জানান যে, ফেনীর দোস্ত টেকসটাইল মিলটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার দরুণ এর কলকারখানায় মরচে পড়েছে। এটিকে চালু করতে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকার প্রয়ােজন। কারখানাটি চালু হলে তিন শিফটে আটশত শ্রমিক কাজ পাবে; আর বাংলাদেশ সরকার পাবে বছরে সাতাশ লক্ষ টাকা রাজস্ব।

সূত্র: জাগরণ
৩১ ডিসেম্বর, ১৯৭১
১৫ পৌষ, ১৩৭৮