বাংলাদেশের প্রতিরােধ সংগ্রাম তীব্রতর হচ্ছে
আগরতলা, ৫ জুলাই বাংলাদেশে পাক জঙ্গিশাহীর বর্বরতার বিরুদ্ধে যে স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রাম গত ২৫ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে আজ তা প্রায় তিনমাস অতিক্রান্ত হয়ে গেল। প্রথম অবস্থায় এই ফ্যাসিস্ট জঙ্গিশাহীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত অঞ্চলেই মুখােমুখি যুদ্ধ হয়েছিল। কোনাে কোনাে অঞ্চলে জনগণের প্রতিরােধের ফলে পাকবাহিনী ভীষণভাবে ক্ষগ্রিস্ত হয়েছিল; কিন্তু সে সময় জনগণের এই প্রতিরােধ বিচ্ছিন্নভাবে সংগঠিত হয়েছিল। এক অঞ্চলের সাথে অপর অঞ্চলের যােগাযােগের অভাবে এই প্রতিরােধ ভেসে গিয়েছিল। অপরদিকে পাক জঙ্গিশাহী ছিল সর্বপ্রকার আধুনিক মরণাস্ত্রে সজ্জিত এবং তাদের প্রায় সমস্ত অঞ্চলেই যােগাযােগ ব্যবস্থা দৃঢ় ছিল। কিন্তু আজ প্রায় তিনমাস পর সংগ্রামের চিত্র আলাদা। আজকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংগঠিতভাবে সংগ্রামী বাহিনী তীব্র প্রতিরােধ গড়ে তুলেছেন। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে ভেতর থেকে যে সমস্ত প্রতিরােধের সংবাদ এসে পৌছেছে তাতে দেখা যায় পাক জঙ্গিশাহী বর্তমানে প্রতিটি মুহূর্ত সন্ত্রস্তভাবে অতিবাহিত করছে। ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সফরে পাক বাহিনীকে সন্ত্রস্ত করে রাখার জন্য কয়েক শত কমান্ডাে গেরিলা পদ্ধতিতে আক্রমণ পরিচালনা করছেন। ঢাকা জেলার নরসিংদি, কালিগঞ্জ ইত্যাদি অঞ্চলে এবং শিবপুরে পাকবাহিনী দালাল শান্তি কমিটির সদস্যদের সাহায্যে আক্রমণ চালাতে গিয়ে ব্যাপক কৃষক গেরিলার প্রতিরােধে ব্যর্থ মনােরথ হয়ে ফিরে আসে এবং একটি জিপ নষ্ট হয় ও ৭ জন সৈন্য নিহত হয়।
ক্ষস্তি পাকবাহিনীর প্রতিশােধ গ্রহণের একমাত্র পথ হলাে যেখানেই প্রতিরােধ চলে সেখানকার বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেয়া। নােয়াখালী, চট্টগ্রাম, ঢাকা জেলায় ইতিমধ্যে এরূপ বহু ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তবুও জনগণকে তাদের সংগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে পারছে না। জঙ্গিশাহীর বিরুদ্ধে ওই প্রতিরােধ সংগ্রাম তথাকথিত শান্তি কমিটির দালালদেরও সুখনিদ্রা কেড়ে নিয়েছে।
ইয়াহিয়ার বশংবদ এই দালালেরা ভেবেছিলেন যে সমস্ত নাগরিক শুধুমাত্র জীবনটুকু রক্ষার তাগিদে সমস্ত সম্পত্তি ফেলে এসেছেন সেই সমস্ত সম্পত্তি লুটপাট করে ভােগ দখল করবেন। কিন্তু তাদের সেই উচ্চাশা বাস্তবে সম্ভব হচ্ছে না। জনগণের প্রতিরােধে এই সমস্ত দালালেরা সেনাবাহিনীর শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে এবং কিছু কিছু দালালকে তাদের পৈতৃক প্রাণটুকু প্রতিরােধ বাহিনীর কাছে খােয়াতে হয়েছে। জঙ্গিশাহী দালালদের বিরুদ্ধে এই সংগ্রাম দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর গতিতে এগিয়ে চলেছে।
সূত্র: দেশের ডাক
০৯ জুলাই, ১৯৭১
২৪ আষাঢ়, ১৩৭৮