বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে মুসলিম লীগ ও গুণ্ডাদের দৌরাত্ম
আগরতলা, ৫ মে- গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের কুমিল্লা, নােয়াখালী, চট্টগ্রাম ও সিলেট জেলার পাক ফৌজ কবলিত অঞ্চলগুলােতে নির্মম অত্যাচার ও লুণ্ঠন চলছে। পূর্বতন মুসলিম লীগ ও জামাতের লােকেরা গ্রামে গ্রামে ঢুকে বর্বর অত্যাচার চালাচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলার রাউজান, ফটিকছড়ি এ সমস্ত অঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতেই লুণ্ঠন চলেছে এবং এলাকার জনসাধারণ প্রাণভয়ে ভীত হয়ে সীমান্তের এপারে চলে এসেছেন। নােয়াখালী জেলার ফেনী, চৌমুহনী প্রভৃতি শহরে সমস্ত দোকানপাট লুট হয়েছে এবং লুটেরার দল গ্রামাঞ্চলে তাদের অভিযান শুরু করেছে। কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানা এলাকার অনেকগুলাে গ্রাম লুটেরার দল পুড়িয়ে দিয়েছে। একমাত্র লক্ষ্মীপুর গ্রাম থেকেই ১৫০০ শরণার্থী গত ৩ মে সােনামুড়ী সীমান্তে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। এ দিকে শরণার্থীরা জানালেন তাদের বাড়িতে গুণ্ডারা প্রবেশ করে ঘরের টিন, দরজা ইত্যাদি খুলে নিচ্ছে এবং ঘর থেকে সবাইকে তাড়িয়ে দিচ্ছে। এ গ্রামের নয়জন লােককে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। এখানে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা প্রবলভাবে দেখা দিয়েছে এবং তা আশেপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। মুসলিম লীগের গুণ্ডারা শুধু লুট এবং অগ্নিসংযোেগই করছে না, অনেক অঞ্চলে যুদ্ধরত মুক্তি সেনাদেরকেও মেরে ফেলেছে। লালমাই অঞ্চলের মুক্তি সেনারা ২/৩ দিন না খেয়ে আক্রমণ প্রতিরােধ করেছেন এবং তাঁদের একটি দলকে লীগের পাণ্ডারা নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। সিলেট জেলার মাধবপুর, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজারেও একই ঘটনা ঘটেছে এবং এখানে পাক বাহিনী ৯০০ ব্যাক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছে।
সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলাে পূর্বাঞ্চলের সীমান্তবর্তী পাক ফৌজ কবলিত অঞ্চলে এই সমস্ত লুটেরার দল এপারের কিছু চোরাকারবারীর সহায়তায় সিগারেট, বিড়ি, কেরােসিন ইত্যাদি পাক ফৌজকে সরবরাহ করছে কিন্তু ত্রিপুরা সরকার এ ব্যাপারে এখনাে কিছুই করেননি।
সূত্র: দেশের ডাক
৭ মে, ১৯৭১
২৩ বৈশাখ, ১৩৭৮