নদীয়ার নবাগত শরণার্থীদের রেশন কার্ড দেওয়া বন্ধ করল কে
মহাশয়,
নদীয়া জেলা শাসকের সাম্প্রতিক এক নির্দেশে বাঙলাদেশ থেকে আগত শরণার্থীদের রেশন কার্ড দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। অথচ রাণাঘাট মহকুমার বিভিন্ন বি, ডি, ও, বা এস, ডি, ও অফিস থেকে একবারও একথা জানানাে হয় নি যে, নতুন আগত শরণার্থীদের হঠাৎ এইভাবে রেশন কার্ড দেওয়া বন্ধ করা হবে। ফলে এক অদ্ভূত পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে কারণ দৈনিক হাজার হাজার শরণার্থী রাণাঘাট শহর ও আশেপাশের পল্লী অঞ্চলে ঢুকছে। স্কুল-ক্লাব ঘর এমন কি বিভিন্ন লােকের বাড়ির বারান্দায় পর্যন্ত শরণার্থীরা জোর করে আশ্রয় নিচ্ছে। প্রচণ্ড বর্ষার মধ্যে শিশুদের নিয়ে গাছের তলায় পর্যন্ত আশ্রয় নিচ্ছে। এক কথায় মানুষ মনুষ্যেতর প্রাণীর সঙ্গে মিশে এক হয়ে গেছে। অথচ, জেলাশাসক বা মহকুমা শাসক সাফাই দিচ্ছে যে, জেলার বর্তমান অবস্থায় আর নতুন শরণার্থী নেয়া সম্ভব নয়, কাজেই এদের অন্য জেলায় পাঠানাে হবে। কিন্তু এই হাজার হাজার শরণার্থীদের নিয়ে জেলা কর্তৃপক্ষ কেন যে ছিনিমিনি খেলছেন তা বােঝা শক্ত। একদিকে এদের রেশনকার্ড বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে এদের অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোন সুস্থ পরিকল্পনাও নেই। মহকুমা শাসকের ব্যবহার এক কথায় হৃদয়হীন, দাম্ভিক ও উদাসীন। কুপার্স ক্যাম্প বন্ধ হওয়ার পরিণতি হয়েছে খুব মর্মান্তিক উদ্বন্ধনে ২টি মৃত্যুর সংবাদ আমাদের খুবই বিচলিত করলেও জেলা শাসক বা মহকুমা শাসকের মনে বিন্দুমাত্র রেখাপাত করছে না। এস ডি ও বা বি ডি ও জেলা শাসকের নির্দেশনামা দেখিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন।
আমাদের অভিমত হচ্ছে এই যে, যদি অবিলম্বে এই শরণার্থীদের কিছু রেশনের ব্যবস্থা করে অন্যত্র সরিয়ে না নিয়ে যাওয়া হয়, তা হলে রানাঘাটের শরণার্থীদের নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হবে। এবং রানাঘাটের জনজীবন ও সমাজ জীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে এই সব ছিন্নমূল শরণার্থীদের এক তিক্ত সংঘর্ষের সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। যার পূর্ণ সুযােগ নিয়ে সি পি এম এবং কায়েমী স্বার্থান্বেধারী চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দ্বিধা করবে না।
আমাদের সুস্পষ্ট জিজ্ঞাসা- (১) জেলার শরণার্থীদের সংখ্যার সীমা বেঁধে দিল কে? এ সম্পর্কে সরকারী আদেশ কোথায়? (২) এতদিন পর্যন্ত যে রেশন কার্ড দেওয়া হচ্ছিল তাতে ক্রমিক নং বা ইনডেক্স নং নেই কেন? এর পেছনে কোন চক্রান্ত রয়েছে কি। যদি থাকে তা হলে কে বা কারা তার হােতা? | তাই রানাঘাট শাখা, কুপার্স, একার, গাংনাপুর, মাঝের গ্রাম প্রভৃতি শাখার সঙ্গে সিদ্ধান্ত করেছে যে, আপনারা অবিলম্বে এই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করুন এবং পার্টি বৃহত্তর আন্দোলনের মারফত এই ছিন্নমূল শরণার্থীদের বাঁচবার নিম্নতম দাবি দাম্ভিক আমলাদের অনিচ্ছুক হাত থেকে আদায় করে নেবে।
বিপ্লবী অভিনন্দন সই
সুচিত মুখােপাধ্যায় সম্পাদক,
রানাঘাট শাখা।
সূত্র: কালান্তর, ২০.৭.১৯৭১