শত্রুর স্বার্থের যারা সেবা করছে
– এ, মাসলেন্নিকভ
পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলী ও লক্ষ লক্ষ আশ্রয়প্রার্থীর ভারত প্রবেশের ফলে পাক-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এমন কতকগুলি আভ্যন্তরিক ও আন্তর্জাতিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে যার সমাধান করতে হলে অত্যন্ত কৌশলে, বাছ-বিচার করে এবং শুভেচ্ছার মনােভাব নিয়ে এগােতে হবে। পাক-ভারত উপমহাদেশের অধিবাসীদের প্রকৃত বন্ধু হিসাবে সােভিয়েত ইউনিয়ন ক্রমাগতই, পূর্ব পাকিস্তানের বিরােধের ব্যাপারে, অনতিবিলম্বে একটি রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলে আসছে ; তবে এই সমাধান করতে হলে চাই, আঞ্চলিক অধিবাসীদের আইনসঙ্গত অধিকার ও স্বার্থরক্ষার ব্যবস্থা এবং এই নীতি অনুযায়ী মীমাংসর জন্য পূর্বপাকিস্তানের শরণার্থীদের নিজ নিজ বাসভূমে ফিরে যেতে দিতে হবে। এই ব্যাপারে সােভিয়েত নেতৃবৃন্দের বিবৃতি এবং শরণার্থীদের কার্যকর সাহায্যদানের মত মানবিক কাজগুলি ভারতের সরকারী মহল ও জনসাধারণের মধ্যে বিপুল সাড়া জাগিয়েছে। পাক ভারত উপমহাদেশে শান্তি রক্ষার জন্য মানবিক চেতনা ও গভীর উদ্বেগে উদ্বেলিত হয়ে সােভিয়েতের যে বক্তব্য উপস্থিত করা হয়েছে তাতে ভারত ও সােভিয়েতের মধ্যেকার সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করেছে, দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও পারস্পরিক সমঝােতাকে বাড়িয়ে তুলেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী শ্ৰীশরণ সিং সম্প্রতি সােভিয়েত ইউনিয়নে বন্ধুত্বমূলক সফর সেরে এসেছেন। পূর্ব-পাকিস্তান থেকে ভারতে শরণার্থী আগমনের বিষয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সেই ব্যাপারে সােভিয়েত ইউনিয়নের খােলাখুলি বক্তব্য শুনে তিনি খুবই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
সুতরাং সােভিয়েত ইউনিয়নের এই প্রকাশ্য, গঠনমূলক ও শান্তিরক্ষার প্রস্তাবটিকে ভারতের কিছু লােক যখন বিকৃত করার চেষ্টা করে এবং এই উপমহাদেশে যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে তাকে সােভিয়েতভারত… না। তারা ক্রমাগত চেঁচিয়ে যাচ্ছে, সােভিয়েত অর্থনৈতিক সাহায্য ভারতের উপর “বেশী রকমের বাধ্যবাধকতা” চাপাচ্ছে এবং তার ফলে দেশের বিদেশী মুদ্রা হারাচ্ছে।”
সােভিয়েত ইউনিয়ন তার শান্তিপূর্ণ ও গঠনমূলক নীতির প্রতি অনুগত থেকে পাক-ভারত উপমহাদেশে স্বভাবতই এমন কোন ভাবে জড়াবে না যাতে এখানে আরও বেশী উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু সেটটসম্যানের ভদ্র লােকেরা আপাতদৃষ্টিতে মনে করেন যে, যদি বিরুদ্ধে কিছু ঘটনা হাজির করতে হয়, তবে যত খারাপভাবে পারা যায় ঘটনাকে হাজির করতে হবে। তারা উদ্দেশ্যমূলক রিপাের্ট প্রকাশ করে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করতে চায়। তারা বলে বসল, সােভিয়েত ইউনিয়ন পাকিস্তানকে অস্ত্র দিচ্ছে।” দিল্লীর সােভিয়েত দূতাবাস থেকে এবং লােকসভার ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী তা অস্বীকার করেছেন। স্টেটসম্যান এ সমস্ত গ্রাহ্যই করল না। দক্ষিণপন্থী স্বতন্ত্র দল এবং প্রজা সমাজতন্ত্রী দলের প্রতিনিধিদের উদ্যোগে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে তাদের প্রথম পৃষ্ঠায় চাঞ্চল্যকর শিরােনামা দিয়ে সংবাদপত্রের সম্পাদকগণ সেই সংসীয় বিতর্কের ব্যাপক প্রচার করলেও সােভিয়েত দূতাবাসের অস্বীকৃতিটা আমলেই আনল না।
ন্যায়ের খাতিরে এটা বলা উচিত যে, এই বিতর্কের জন্য স্টেটসম্যান ও স্বতন্ত্র পার্টির সদস্যরা পুরস্কৃত হচ্ছেন না। সংসদে ভাষণদান প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বতন্ত্র সদস্যদের সােভিয়েত বিরােধী আক্রমণকে “দায়িত্বজ্ঞানহীন” ও “কুউদ্দেশ্যমূলক” বলে উল্লেখ করেছেন। কমিউনিস্ট প্রতিনিধি ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত স্টেটসম্যানের এই জালিয়াতিক “সােভিয়েত বিরােধী উসকানি” বলে ঘােষণা করে বলেছেন যে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা কিসিঙ্গারের ভারত সফর উপলক্ষ্য করেই এই উস্কানি দেওয়া হয়েছে। কিসিঙ্গারের উদ্দেশ্য হল, “পাকিস্তানে মার্কিন অস্ত্র সরবরাহ করা ও সাধারণভাবে এশিয়া মহাদেশে অনুসৃত মার্কিন নীতির জন্য ভারতীয়দের মনে যে বিক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে তাকে কিছুটা শান্ত করা। | স্টেটসম্যানের ভদ্রলােকেরা অবশ্যই অন্য কারাে তল্পীবহন করছে। দিল্লী থেকে সােভিয়েত দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, তাদের ঐ আবিষ্কার ভারতীয় ও বিদেশী সেইসব মহলের উস্কানির ফলেই ঘটেছে যারা সােভিয়েত-ভারত সম্পর্ককে হেয় করতে চায় এবং এই অঞ্চলে উত্তেজনা তীব্রতর করার উদ্দেশ্যে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহের কাজকে যারা ন্যায্য বলে মনে করে – এ,পি,এন
সূত্র: কালান্তর, ২২.৭.১৯৭১