You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.28 | ওপার বাঙলা লড়াই কর, এপার বাঙলা পাশে আছে। পূর্ব-বাঙলার সংগ্রামের সমর্থনে কলকাতায় যুব-ছাত্রদের দৃপ্ত মিছিল | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

ওপার বাঙলা লড়াই কর, এপার বাঙলা পাশে আছে। পূর্ব-বাঙলার সংগ্রামের সমর্থনে কলকাতায় যুব-ছাত্রদের দৃপ্ত মিছিল
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা, ২৭ মার্চ – ‘ওপার বাঙলা লড়াই কর, এপার বাঙলা পাশে আছে’, ‘জয় মুজিবর, জয় বাংলা, ‘ইয়াহিয়ার কালাে হাত ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও’- এই শ্লোগানে কলকাতার রাজপথ মুখরিত করে আজ এক জঙ্গী যুব-ছাত্র মিছিল পূর্ব-বাঙলায় সামরিক স্বৈরাশাসনের হিংস্র আক্রমণের মুখে অপতিরােধ্য গণসংগ্রামের প্রতি রক্তিম অভিবাদন জানিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ যুবসঙ্ ও বঙ্গীয় প্রাদেশিক ছাত্র ফেডারেশন বাংলাদেশ-এর ঐতিহাসিক সংগ্রামের প্রতি আন্তরিক সংহতি জানানাের উদ্দেশ্যে আজ দুপুরে একটি যুব-ছাত্র সমাবেশ আহ্বান করেছিল। স্টুডেন্টস হলে ঐ সভার শেষে বিকেলে উপরােক্ত যুব ছাত্র মিছিল রাজভবন অভিমুখে যাত্রা করে। রাজভবনের উত্তর দ্বারপ্রান্তের সামনে উক্ত মিছিলের গতিরােধ করা হলে সর্বশ্রী গুরুদাস দাশগুপ্ত, গােরা নাগ, রঞ্জিং গুহ ও দেবদাস ভট্টাচার্যসহ এক প্রতিনিধিদল রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সচিবের কাছে স্টুডেন্টস হলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত এক প্রস্তাবে লিপিবদ্ধ (ভারত সরকারের কাছে) বিভিন্ন দাবি পেশ করেন।

গৃহীত প্রস্তাব
স্টুডেন্টস্ হলের সভায় গৃহীত প্রস্তাবে পূর্ব বাঙলার গণ-সংগ্রামকে অভিনন্দিত করে বলা হয়েছে, “পূর্ব বাঙলার মানুষ সাম্রাজ্যবাদের দালাল এবং পশ্চিম পাকিস্তানের একচেটিয়া পুঁজিপতিদের বিরুদ্ধে নিজস্ব গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে গত দীর্ঘদিন যাবৎ সংগ্রাম করছেন। জঙ্গী শাসকচক্র পূর্ব পাকিস্তান তথা ‘বাঙলাদেশ’-এর মানুষের কোন প্রকার গণতান্ত্রিক অধিকারের স্বীকৃতি দিতে নারাজ। তাই আজ বাঙলাদেশ’-এর মানুষ স্বাধীনতা ঘােষণায় বাধ্য হয়েছেন। পশ্চিম বাংলার মানুষ বিশেষভাবে সাম্রাজ্যবাদ ও একচেটিয়া পুঁজির বিরুদ্ধে সংগ্রামী, তাই তাঁরা এই মুহূর্তে নিচুপ থাকতে পারে না। তারা তাদের সংগ্রামী সংহতি জানাচ্ছেন বাঙলাদেশ’-এর মানুষকে।”
প্রস্তাবে ভারত সরকারের কাছে এই মর্মে দাবি জানানাে হয়েছে যে পূর্ব বাঙলার মুক্তি প্রবাসী জনগণের সঙ্গে সংহতি স্থাপন করে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে ভারতবর্ষের স্থল, জল ও আকাশ পথে ইয়াহিয়ার জঙ্গীচক্র পূর্ব বাঙলায় কোন সরমবাহিনী প্রেরণ না করতে পারে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, “পূর্ব পাকিস্তান তথা বাঙলাদেশ’ এর সংগ্রামী যুব-ছাত্রদের সমর্থনে এই দেশে ব্যাপক ঐক্যবদ্ধ যুব ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সমস্ত যুব-ছাত্র সংগঠনগুলির কাছে আবেদন জানাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ যুব সঙ্ ও বঙ্গীয় প্রাদেশিক ছাত্র ফেডারেশন সকল যুব ছাত্র সংগঠনের ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচী গ্রহণে যথাযযাগ্য উদ্যোগ নেবে বলেও এই সভা ঘােষণা করছে।”
সভায় সর্বশ্রী গুরুদাস দাশগুপ্ত, সফিউল আলম, অনুপ মুখার্জী, জ্যোতিষ সাহা প্রমুখ বক্তৃতা করেন। সভাপতিত্ব করেন শ্রীরঞ্জি গুহ।

সূত্র: কালান্তর, ২৮.৩.১৯৭১