বাঙলাদেশ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারই বিশ্বকে মুক্তিসগ্রামের সােচ্চার করে তুলবে
(স্টাফ রিপাের্টার)
কলকাতা, ৩১ অক্টোবর- “এতদিন দূর থেকে বাঙলাদেশের সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক বিষয়াবলীর গভীরতা বুঝতে পারিনি। এখানে এসে শরণার্থী শিবির এবং বাঙলাদেশ যুব শিবিরগুলােয় ঘুরে বহু লােকের সঙ্গে কথাবার্তা বলে আমি সংগ্রামের মর্মবস্তু উপলব্ধি করেছি। এ সংগ্রাম শুধু ন্যায্যই নয়, আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী বিরােধী সংগ্রামের অঙ্গ বিশেষ। কিন্তু আমার অনুযােগ, এই সংগ্রামের ওপর ব্যাপক প্রচারাভিযান পরিচালিত হয় নি। যদি তা হয় তবে সমগ্র বিশ্ব মুক্তি সংগ্রামের সপক্ষে সােচ্চার হয়ে উঠবে। এ ব্যাপারে বাঙলাদেশের সরকার ও জনগণের বিশেষ দায়িত্ব নেওয়া উচিত।”
আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক নারী ফেডারেশনের সহঃ সভাপতি শ্রীমতি ফ্রেডা ব্রাউন আজ সকালে আমার কাছে একথা ব্যক্ত করেন।
৫০ বছর বয়স্কা অস্ট্রেলীয় নাগরিক শ্রীমতি ব্রাউন অস্ট্রেলীয় নারী ইউনিয়নের জাতীয় সভাপতি। শুধু তাই নয়, উনি সাংবাদিকও। কোন বিশেষ পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত নেই, স্বেচ্ছায় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখেন। সেই কারণে অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যও।
বললেন, “আমার মেয়ে এ বছরের জুন মাসে ভারতবর্ষে আসে। শরণার্থী শিবিরগুলাের ঘােরে নি কিন্তু বিভিন্ন ভারতীয়র কথাবার্তা শুনে বাঙলাদেশের সগ্রামের ন্যায্যতা সম্পর্কে ও ছিল নিঃসন্দিহান। আমি কিন্তু ওর কথায় সংশয় কাটিয়ে উঠতে পারিনি। অনেক প্রশ্ন ছিল মনে। কিন্তু স্বচক্ষে যা দেখেছি, নিজের কানে যা শুনেছি তাতে সকল প্রশ্ন উবে গেছে। আসলে এই সংগ্রামের পেছনে ঐতিহাসিক, ভৌগােলিক, অর্থনেতিক বিষয়গুলাে সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারলেই সব প্রশ্ন, সব দ্বিধা কেটে যাবে।”
উনি কলকাতায় আসেন ২১ অক্টোবর। সেদিনই লবণ হ্রদের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। পরদিন দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া তুচ্ছ করে বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ঘুরে আসেন। শুধু তাই নয়। একাধিক বাঙলাদেশ যুব শিবিরে ঘুরেছেন শ্রীমতি ব্রাউন, বাঙলাদেশ জাতীয় আওয়ামী পার্টির নেতা অধ্যাপক মােজাফফর আহমদ, বাঙলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্রীমনি সিংএর সঙ্গে আলােচনা করেছেন।
সূত্র: কালান্তর, ১.১১.১৯৭১