রাত তখন তিনটা বাজে, তখন এই হলে (জগন্নাথ হল) তারা ঢুকলাে। গয়ানাথের ছেলে শিবু ছিল তখন হলগেটের দারােয়ান, তাকে গেট থেকে ডেকে নিলাে। শিবুকে নিয়ে পাঞ্জাবী সৈন্যরা মারধাের শুরু করলাে। তখন তারা তাকে বলল উর্দুতে, শালে তুমহারে মুজিবুর বাপকো বুলাও। শালে কিধার হ্যায় সাব লাড়কা, সাব কিধার হ্যায়? তুম সাব জানতে হাে, ঠিক বাত বােলা, তুম শালা সাব জানতে হাে, বাতলাও। তখন শিবু বলল, নেহি, উয়াে লােগ তাে এক মাহিনা আগে সাব চালা গিয়া। সাৰ ঘারমে চালা গিয়া। সৈন্যরা জিজ্ঞেস করলাে, ইধার কৌন হ্যায়? শিবু বলল, উয়াে সাবতাে কার্মচারী হ্যায়।
সৈন্যরা বলল, বুলাও সাবকো। শিবু তখন বিহারী দাসের বড় ছেলেকে ডেকে নিয়ে এলাে। ওকে ধরে রাইফেলের বাঁট দিয়ে ভীষণ মারধাের করল। উত্তর বাড়ীর দিকে গােলাগুলি ছুঁড়তে শুরু করলাে। তবে ওরা তখনাে উত্তর বাড়ীতে ঢুকেনি। আমি গরুর ঘর থেকে এসব দেখছিলাম আর খুব অসহায়বােধ করছিলাম। মাকে ডেকে বললাম, মা, অবস্থা খুব খারাপ দেখা যাচ্ছে, তােমরা বাড়ীতেই থাকো, আমি দেখি কি করা যায়। আমার একটা কালাে চাদর ছিল, ওটা গায়ে জড়িয়েই বের হলাম। দেখতে লাগলাম সব। দেখলাম, বিরাজদার ঘরের পেছনে কাকে যেন খুব মারধাের করছে।
আমি দক্ষিণ বাড়ীর টিনশেড ডাইনিং হলের দিক দিয়ে বের হতে গিয়েও গেলাম না। ভাবলাম যে হয়তাে অসুবিধা হবে। আমি তখন দক্ষিণ বাড়ীর দিক থেকে এসে পড়লাম ঠিক তখনই আমাকে দুজন দেখে ফেলল। আমি বুঝলাম যে, আমাকে ওরা। দেখে ফেলেছে। তাই হেড দারােয়ান মাখনের ঘরের হাস-মুরগির খোয়াড় ছিল, ওখানেই পেছন দিকে একটু উবু হয়ে একটা ঘরে গিয়ে ঢুকে পড়লাম। তখন ওরা আমাকে খুঁজছে আর বলছে, আরে ওয়াহা এক আদমীকে দেখা, উয়াে কিধার গিয়া? উয়াে শালা কিধার ভাগ গিয়া? আমার সামনেই আমাকে খুঁজছে। যখন আমি দেখলাম যে আমাকে খুঁজতে খুঁজতে অনেক দূরে চলে গেল, তখন আমি মাখনের হাঁসের ঘর থেকে বেরিয়ে গােয়াল। ঘরে ঢুকলাম। ওরা আমাকে খুঁজতে খুঁজতে সামনের দিকে চলে গেল। সামনের দিকে গিয়ে যাকে সামনে পাচ্ছিল তাকেই মারধাের করছিল। মারধাের শেষ করে এই ব্যাচটা চলে গেল, তারপরেই নতুন একটা ব্যাচ এলাে। নতুন গ্রুপটা এসেই ডাইনিং হলে আগুন ধরিয়ে দিল।
পুরনাে ডাইনিং হল অর্থাৎ টিনশেডের ক্যান্টিনের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দিল। আগুন ধরানাের পর ঐ আর্মিরা বলতে থাকলাে, তুম লােক ইধারসে নিকাল যাও। কি দিয়ে যে তারা আগুন ধরালাে তা আমি বলতে পারবাে না। সম্ভবতঃ কোন কেমিক্যাল পাউডার দিয়ে ধরিয়েছিল সেই আগুন। সেই সময় চারজন সৈন্য এসে বুন্ধু নামের এক লােককে ধরে তার পেটের মধ্যে বেয়নেট ঢুকিয়ে দিল। বুছু বারবার বলছিল, দেখাে হাম লােগতাে এক ভাঙ্গী হ্যায়। সৈন্যরা বলল, শালে তু ভাঙ্গী হ্যায়? ছছাড়দে, ছছাড়দে, ইয়ে শালা ভাঙ্গী হ্যায়। ইয়ে শালেকো মারকে কেয়া ফায়দা হােগা? চাল দুসরে তারাফ চাল। এই বলে ওরা চলে গেল। আমি তখনও গােয়ালঘরে লুকিয়ে আছি এবং দেখছি। ওরা সম্ভবতঃ বুঝতে পারলাে যে, ঘরের ভেতর লােক আছে। আগুন ধরিয়ে দিলেই সব বেরিয়ে পড়বে। তখন তারা আগুন ধরিয়ে দিল ঘরে ঘরে।
আমি থাকলে আমি জ্বলেপুড়ে মরবাে। তাই সে মুহুর্তেই নিজের ঘরে এসে ঢুকলাম । আমার মাকে বললাম, মা, অবস্থা ভীষণ খারাপ। তুমি এক কাজ করাে, দরােজা খুলে দাও। তুমি বুড়াে মানুষ, তােমাকে দেখলে কিছু বলবে না। তুমি দরােজার কাছে বসে থাকো, তােমাকে দেখলে আর ঘরের ভেতরও আসবে না। দরােজা খােলার শব্দ শুনে সৈন্যরা এসে আমার মাকে জিজ্ঞাসা করল, কোই হ্যায় ঘারকে আন্দার ? মা বললাে, নেহি সাহাব, সাব নিকাল গিয়া, সাব ভাগ গিয়া। সৈন্যরা ওদের ভাষায় যা বলল তার অর্থ দাঁড়ায়। তােমরা সব চলে যাও। সরকার তােমাদের সাহায্য করবে। তােমরা সব চলে যাও। এই বলে তারা মাঠের দিকে চলে এলাে। তখনই আমরা দেখলাম যে, ঘরের মধ্যে থাকলে আমরা জ্বলে পুড়ে মরবাে। আমাদের বাঁচার আর কোন উপায় নেই। তাই । এ অবস্থায় আমরা ঘর ছেড়ে বের হয়ে এলাম বাইরে। | পাঁচটার দিকে পূর্বের আকাশ যখন একটু একটু করে ফরসা হয়ে এলাে, তখনই সৈন্যরা চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলল আমাদের। আমরা যারা বয়সে একটু তরুণ ছিলাম। তাদেরকে ধরলাে মাঠের দিকে খগেন এবং শ্যামলালের গােয়ালঘরটা যেদিকে ছিল। আমরা সংখ্যায় কতজন ছিলাম তা অবশ্য এখন মনে নেই, তবে কিছু ছাত্র আমাদের সাথে ছিল। তাদেরকে ধরে আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মুখচেনা থাকলেও এখন আর তাদের নাম মনে নেই। তারা ছেড়া জামা লুঙ্গি পরে আমাদের মধ্যে বসে থাকলাে।
পাকসেনাদের মধ্যে একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী সম্ভবত মেজর হবেন, তিনি। আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালেন। হালকা মেশিনগান আমাদের সামনে তাক করা। আমরা তখন বুঝলাম যে, সেখানেই আমাদেরকে ব্রাশফায়ার করে শেষ করে দিবে। তখন লক্ষ্য করে দেখলাম, ওরা যেন কি বলছে। ওদের মুখ থেকে যা খুশি তাই অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করছে। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ওদের কাছে প্রার্থণা করছে কাতর। স্বরে। আর সৈন্যরাও সাথে সাথে গালিগালাজ করছে। পাকসেনারা বললাে, তুম লােগ। সাব ইসকে আন্দার আও। গােয়ালঘরটা বেশ বড় ছিল। সবাইকে গােয়ালঘরে ঢুকালাে। আমি তখন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে মেশিনগান ঠিক করা হচ্ছে, একটু পরেই আমাদেরকে শেষ করে দিবে। ছাত্ররাও আমাদের সাথে চুপচাপ বসে আছে। সৈন্যরা আবার আমাদের সবাইকে বের হয়ে আসতে বললাে। তুম লােগ সাব বাহার নিকাল যাও, শালা কোই। ধীরসে নেহি ভাগনা ইধারসে। তখন আমি গােয়ালঘরের ভিতর থেকে দেখি সামনে। মােড় একটা ট্যাঙ্ক রয়েছে। শিববাড়ীর রাস্তার মােড়ে টি.এস.সি -র মােড়ও ট্যাঙ্ক, একটা ট্যাঙ্ক জগন্নাথ হলের দিকে মুখ করে আছে। একজন হানাদার সৈন্য এসে বলল যে, ক্যাপ্টেন সাহাৰ বুলা রাহা হ্যায় ।
কি একটা অর্ডার আনার জন্য যেন ডাকছে। কালােকালাে, লম্বা মিলিটারী আসলাে ৪/৫জন। আমাদের সবাইকে বললাে লাইন ধরতে। আমরা সবাই লাইন ধরলে আমাদের সবাইকে বললাে হাঁটতে। আমরা হাঁটতে শুরু করলাম। পাক-সেনারা আমাদের পায়ে স্টেন ঠেকিয়ে এগিয়ে নিয়ে চললাে। ঐ মাঠের দিকে যেদিকটায় সুধীরদার কেন্টিন এবং ন্যাশনাল ব্যাংক ছিল সেখানে দেখলাম একটা মৃতদেহ পড়ে আছে। আমাদের গােয়ালঘর থেকে নিয়ে এলাে মাঠের দিকে। পােষ্ট অফিস এবং শ্রমিক ইউনিয়নের অফিসের দিকে নিয়ে এসে বসতে বললাে আমাদের। আমরা সবাই বসলাম এবং তারা মেশিনগান ঠিকঠাক করতে লাগলাে। আমি ভাবছিলাম, সম্ভবতঃ এখানে আমাদের ব্রাশফায়ার করবে। আমাদের ভেতর থেকে একজন বললাে, দেখেন আমরা তাে নিরীহ কর্মচারী, আমাদের মেরে আপনাদের কি লাভ হবে। তখন পাকসেনাদের মধ্য থেকে একজন বলল যে, বােল শালা, জয় বাংলা বােল। তুমহারে মুজিব বাপকো বুলাও, উয়াে বাঁচায়েগা তুম ললাগেকো। সাব শালেকো খাতাম কার দেগা। ক্যাপ্টেনের ওখানে কি যেন ওয়্যারলেস এলাে, তখনই বললাে, চল আমাদের সাথে। ছাত্ররা সকলেই তখন চুপচাপ। আমাদের কর্মচারীদের মধ্যেই একজন শুধু কথা বলছিল। পাক বাহিনীরা বলল, চাল, হামারে ক্যাপ্টেন সাহাব বুলা রাহা হ্যায়। যাে অর্ডার দেগা, উয়ােহি কারনা হােগা। ওয়্যারলেসে আলাপ আলােচনা হয়ে গেছে। মৃত লাশগুলাে বিভিন্ন জায়গায় যে রয়েছে ওগুলাে আমাদের দিয়ে তুলবে। ডঃ মতিন চৌধুরীর বাসার দিকে যে দেয়াল ভাঙা আছে, আমাদেরকে ওখানে নিয়ে গেল। রাস্তার অপর পাড়ে কতগুলাে পাথরের টুকরাের স্তুপ ছিল। পাথরের টুকরােগুলাের স্তুপের উপর ক্যাপ্টেন বসে আছে চেয়ারে। তখন তিনি আমাদেরকে দেখে হাসলেন এবং জোরে বললেন, শালে বাঙালি, শালে মাদারচোদ, শালে জয় বাংলা বােল। তুমহারে মুজিব বাপকো বুলাও, উয়ােহি বাঁচায়েগা। আমাদের মধ্যে একজন বলল, আমরা সব কর্মচারী স্যার, ইউনিভার্সিটির কর্মচারী।
ছাত্র তাে কোই নেহি হ্যায় স্যার। হাম সাব ইউনিভার্সিটিকি কর্মচারী হ্যায়। ক্যাপ্টেন তখন খুব হাসলাে এবং বললা, কর্মচারী, বাইনচোদ শালা, সাব শালা ঝুট বােলতা হ্যায়। শালা কর্মচারী। ইন শালেকো চেক কারাে। আমাদের সবাইকে হাঁটু পর্যন্ত চেক করলাে এবং একজন সিপাহী বলল, তুম লােগােকে এক কাম কারনা পাড়েগা। আমাদের মধ্যে একজন বলল, কেয়া কাম? পাকসেনা বলল, কাম কারেগা তাে তুম ললাগােকে ছােড় দেগা। ছাড়ার কথা শুনে আমাদের মনের মধ্যে কেমন করলাে। তখন আমরা ঠিক করলাম যে, কাজ করলে যখন ছেড়ে দিবে, যে কাজই হােক না কেন, আমরা করতে প্রস্তুত। আমাদের সকলকে দুইজনের এক একটা গ্রুপ করে ভাগ করলাে। তখন সকাল হয়ে গেছে। আমাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় যে লাশগুলি পড়ে ছিল সেগুলি এক জায়গায় তুলে আনার জন্য আদেশ করলাে। দু’জন করে এক একটা যে গ্রুপ ছিল, তাদের মধ্যে আমার গ্রুপে ছিল শ্যামলাল। শ্যামলাল ভাইস চ্যান্সেলরের বাড়ীতে কাজ করত। অন্য গ্রুপের মধ্যে ছিল মিস্ত্রী। ইলেকট্রিক কাজ করতাে এবং তার সাথে ছিল দাসু। দাসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের বাড়ীতে কাজ করতাে। শিবু গয়ানাথের ছেলে এবং আমার ভাই মুন্নিলাল, যিনি পাবলিক এডমিনিষ্টেশন বিল্ডিং-এ কাজ করতেন। আমার বড়ভাই বুধিরাম একজন ড্রাইভার ছিলেন এবং সাথে জহর ছিল, বেলিয়ার বাবা। জহর বােটানি বিভাগে কাজ করতাে। আমাদের মধ্যে যে ছাত্ররা ছিল, যাদের পাক সেনারা জানতাে কর্মচারী হিসেবে। তাদেরও আমাদের কর্মচারীদের সাথে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক গ্রুপের জন্য দুইজন করে পাকসেনা ছিল। আমাদের কাজ হলাে মৃতদেহ টেনে আনা। আমাদের গ্রুপের ঐ দুইজন যারা আমাদের তত্ত্বাবধায়নে ছিল তারা আমাদের পিঠে স্টেনগান ঠেকিয়ে নিয়ে যেতাে এবং নিয়ে আসতাে। সবাই দেখছিল এই নাটকীয় দৃশ্যাবলি এবং লক্ষ্য করছিল এই অচিন্তীয় ঘটনা। মৃতদেহগুলাের মধ্যে যার যার মৃতদেহ এনেছি তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত অধ্যাপক এবং অন্যান্য। শিববাড়ীর রাস্তার ধারে সিএন্ডবি এর একটা গােডাউন ছিল। সেখানে প্রথম নিয়ে। যায় আমাদের, সেখানে ১০/১২ জনের মৃতদেহ দেখলাম।
তাদের সবাই আমার অচেনা, হয়তাে তাদেরকে ধরে এনে ব্রাশফায়ার করেছে। গোডাউনে পা দেওয়ার সাথে সাথে দেখলাম রক্তে একদম সমস্ত গোডাউন ঘরটা ভিজে গেছে। আমাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হল একটি একটি করে নিতে। তখন আমি এবং শ্যামলাল দুজনে একটা লাশ নিয়ে হলের বর্তমান শহীদ মিনার চত্বরে এনে রাখলাম। হলের বাইরে সমস্ত লাশগুলােকেও আমাদের গ্রুপে সকলে এনে এনে ঐ জায়গায় রাখছে। সব মাথা একদিকে করে লাশগুলাে সাজিয়ে রাখা হলাে। এর আগের একটা ঘটনা, সকাল বেলা উত্তর বাড়ীর ছাদের উপরে পানির ট্যাঙ্কে সম্ভবতঃ ৫/৬জন ছাত্র ছিল। তাদেরকে পানির ট্যাঙ্ক থেকে উঠিয়ে এনে ছাদের কার্নিশে দাঁড় করিয়ে গুলি করে নীচে ফেলে দিল। আমি তখন হল- শহীদ মিনারে ছিলাম। সিএন্ডবি গােডাউন থেকে ১০টা লাশ নিয়ে এলাম।
আমি, মিশরী এবং শিবু ড, জিসি দেবের লাশ বয়ে নিয়ে এলাম। শিবু এবংমিশূরী কেউই এখন বেঁচে নেই। এরপর শ্যামলাল এবং আমাকে বললাে, চা, উধার যানা হ্যায়। আমরা বললাম, কাহা জায়েগা? তখন পাকসেনারা বলল, হাম লােক ইচ্ছা, খুশি। আমরা গেলাম শিববাড়ীর প্রথম দালানটাতে মধুদার বাসায়। যখন আমরা তার বাসায় প্রবেশ করলাম, তখন দেখলাম মধুদার গর্ভবতী স্ত্রী মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। তার ছােটমেয়ের বুকে বুলেট বা বেয়নেটের আঘাতে রক্ত ঝরছে, আর বাবাকে জড়িয়ে ধরে সে কাদছে। মধুদা (ক্যান্টিন পরিচালক) দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছেন, রক্ত ঝরছে। তখন আমাদের তত্ত্বাবধায়ক সেনারা বলল, শালে দেরী কিউ কারতে হাে ? উঠ যাও। দেরী নেহি। আমরা চোখের সামনে যা দেখলাম তাতে আমাদের হতভম্ব অবস্থা। আমাদেরকেও চেনা যায় না, সমস্ত গায়ে রক্ত লেগে ছিল। এখন আমি বললাম, মধূদা চলেন। মধুদা আমায় বললেন, কোথায় নেবে? আমি বলতে পারলাম না। তখন মধুদার ছােট মেয়ে বলছে, আমার বাবাকে এখান থেকে নেবেন না। তখন পাকসেনারা বলে উঠল, এই লাড়কী চুপ কার। নেহিত গুলি কার দেগা । আমি এবং শ্যামলাল মধুদাকে ধরে তার দুইহাতের ডানা দুদিকে আমাদের কাঁধে ফেলে মধুদাকে হটিয়ে নিয়ে গেলাম। আস্তে আস্তে যখন হাঁটিয়ে আনছি তখন দেখলাম মধুদার বুকে রক্ত, তার বুকে গুলি লেগেছিল। তিনি কোন কথাই আর জিজ্ঞেস করেননি বা কথা বলেননি।
:::::::::::
Reference:
একাত্তরের গণহত্যা – মুহম্মদ হাবিবুর রহমান