সিডনি ও মর্নিং হেরাল্ড, ২৯ মার্চ, ১৯৭১
সম্পাদকীয়
বিশৃঙ্খলার আবর্তে
পূর্ব পাকিস্তানে কি ঘটছে তা জানা অসম্ভব। রেডিও পাকিস্তান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। শেখ মুজিবুর রহমানকে “বিশ্বাসঘাতক” হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ভারতীয়দের প্রতিবেদন অনুযায়ী সেখানে জীবন স্বাভাবিকের দিকে ফিরে আসছে। শেখ মুজিবুর মুক্ত, ১৬ হাজার শক্তিশালী পূর্ব পাকিস্তানী (বাংলা) রাইফেল এবং পুলিশ জেনারেল টিক্কা খানের সেনাদের প্রতিরোধ করছে এবং দুই দিনের গৃহযুদ্ধে ইতিমধ্যে প্রচুর বেসামরিক লোক মারা গেছে (১০০০০ / ১০০০০০?)। যা স্পষ্ট তা হল যে, বিশ্ব জানছে পাকিস্তানে শান্তি আসতে একটি অলৌকিক রাজনৈতিক ঘটনার প্রয়োজন হবে।
এমন অলৌকিক ঘটনা বিশ্বাসযোগ্য নয়। রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া, ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তাক্ত অধ্যায়, আয়ারল্যান্ডে ব্রিটিশদের মত, আলজেরিয়ায় ফরাসিদের মত এবং আরো অনেক কিছুর মত, সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে সংহতি পুনঃস্থাপন করার চেষ্টা করছে। তার ফলাফল এত দুঃখজনক হত না যদি তার ধারাবাহিকতা এমন না হত। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানী সংখ্যালঘুদের দিয়ে কৃত্রিম পাকিস্তানকে অনুগত করার চেষ্টা করেছেন, তিনি আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেছেন ৭৫ মিলিয়ন বাঙালির উপর যারা ইতিমধ্যেই গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বিপুল ভোটের মাধ্যমে দেখিয়েছে যে তাদের আনুগত্য শেখ মুজিবের উপর এবং তারা তাদের স্বায়ত্তশাসিত পূর্ব পাকিস্তানের জন্য দাবি করেছে। শেখ মুজিবুর রহমান যিনি এসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়েছেন তিনি পূর্ব পাকিস্তানে তার নিজের বেসামরিক সরকার গঠন করেছেন। এটি করেছেন মার্শাল ল ঘোষণার পরে। রাষ্ট্রপতির সাথে তার আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পরেই তিনি স্বাধীনতার আহ্বান জানান। তিনি ভাঙ্গনের জন্য প্রেসিডেন্টকে দায়ী করেছেন। তিনি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ফলাফলকে সংখ্যালঘু পশ্চিমাদের করালে রাখার বিরোধিতা করেছেন।
পূর্ব পাকিস্তানের শহরগুলিতে অস্থায়ী বিজয় অর্জনের জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার পাওয়ার-ট্যাংক, আর্টিলারি এবং প্লেন আছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে, তার বাহিনী বেইস থেকে ১০০০ মাইল দূরে গেরিলা যুদ্ধ কিভাবে থামাবে- যা বাঙালি জাতীয়তাবাদ দ্বারা অনুপ্রাণিত – যা পূর্বাঞ্চলের দুর্গম গ্রামাঞ্চলে অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে থাকবে। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট নয় যেখানে তারাও পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর দখলের মত পশ্চিমবঙ্গে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির আশঙ্কায় ভুগবে। এমনকি ব্রিটেনও, বায়াফ্রান সংখ্যালঘুদের সাথে যুদ্ধের স্মৃতি মনে করে যুদ্ধ থেকে এতে জড়িত হওয়া থেকে বিরত থাকবে – যদিও সে পশ্চিম পাকিস্তানে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়ার দ্বিতীয় চিন্তাধারা দীর্ঘমেয়াদি ট্র্যাজেডি প্রতিরোধ করতে পারে। এবং তিনি সম্ভবত বিশৃঙ্খলার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।