You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.20 | নিউইয়র্ক টাইমস, ২০ অক্টোবর, ১৯৭১ “পাকিস্তান ও ভারতের সৈন্য মুখোমুখি” - সংগ্রামের নোটবুক

নিউইয়র্ক টাইমস, ২০ অক্টোবর, ১৯৭১
“পাকিস্তান ও ভারতের সৈন্য মুখোমুখি”
সিডনী শনবার্গ
(নিউইয়র্ক টাইমস’এর বিশেষ সংখ্যা)

নয়া দিল্লি, ১৯শে অক্টোবর – ভারত ও পাকিস্তান সৈন্যরা এখন তাদের সীমান্তে পরস্পর মুখোমুখি। অধিকাংশ পশ্চিমা কূটনীতিকরা এক্ষেত্রে বিশ্বাস করতে আগ্রহী যে, অন্ততপক্ষে পশ্চিম পাকিস্তানের যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদল প্রথম পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং তার প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয়রা সরে যাচ্ছে।

উচ্চ ভারতীয় সূত্রমতে, পশ্চিম পাকিস্তানের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে গতমাসে, এবং গত বৃহস্পতিবারের মধ্যে কার্যত পশ্চিম পাকিস্তানের সকল পদাতিক সৈন্যবাহিনী এবং সাঁজোয়া বিভাগ সীমান্তে অথবা সীমান্তের লক্ষণীয় দূরত্বের মধ্যে ছিল।

বাধার কারণে কিছু সীমান্ত এলাকায় খালগুলো প্লাবিত হয়েছে এবং আতঙ্কে পাকিস্তানের বেসামরিক নাগরিকরা বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা খালি করে দিয়েছে, সেনাবাহিনী ও তাদের নিজস্ব লোকজন কতৃক কয়েকজনকে আদেশ দেওয়া হয়েছে, সূত্রমতে তাই জানা গেছে।

প্রতিবেদন বলছে, ১৯৬৫ সালে তিন সপ্তাহব্যাপী কাশ্মীর যুদ্ধে পাকিস্তানিরা যেখানে ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করেছিল সেখানে বেশকিছু ভারি সেনাদল একজায়গায় জড় হয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে ধারণা করা হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলে চার বা পাঁচটি বিভাগ জোরদার করা হয়েছে

ভারতীয়দেরকেও সীমান্তে তাদের পাশ বরাবর চার বা পাঁচটি বিভাগ রাখতে বলা হয়। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান অভিযোগ করেন যে ভারতীয়দের আটটি বিভাগ আছে।

উপরন্তু, পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীনতা আন্দোলনে ক্রমবর্ধমান সক্রিয় বাঙালি গেরিলাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সৈন্যদলকে মানিয়ে নিতে হবে যারা ভারতে অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও আশ্রয়স্থল পাচ্ছে।

মার্চ মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীরা আগমন এবং বাংলা বিচ্ছেদ আন্দোলন গুঁড়িয়ে দেওয়ার সময় থেকে আনুমানিক মোট সাড়ে নয় মিলিয়ন পূর্ব পাকিস্তানি ভারতে পালিয়ে গিয়েছে।

পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রায় ১০০০ মাইল দূরত্বে পশ্চিম পাকিস্তান সংলগ্ন সীমান্তে ভারতের ১২ বা ১৩ বিভাগের স্থান আছে বলে ধারণা করা হয়।

নয়া দিল্লিতে, কোন যুদ্ধ হিস্টিরিয়া বা ভীতি না থাকায় কিছু পরিবার সীমান্ত শহর থেকে বেরিয়ে ব্ল্যাকআউট সহ বেসামরিক প্রতিরক্ষা মহড়া শুরু করেছে।

“তাদের তুলনায় আমরা শক্তিশালী” এটুকু ছাড়া সীমান্তে সৈন্যসংখ্যা সম্পর্কে ভারতীয় সূত্র কিছুই প্রকাশ করবেনা। সূত্র জানায়, সীমান্তে ভারতীয় আন্দোলন হয় সম্পূর্ণ অথবা কার্যত সম্পূর্ণ ছিল।

“আমরা এখন বেশ ভালোভাবেই প্রস্তুত” একজন প্রধান কর্মকর্তা জানান।

এক ভারতীয় সূত্র জানায়, ১৪ই অক্টোবর “ভয়ঙ্কর একটা রাত পার করেছি”। পাকিস্তানিরা ওই রাতে আক্রমনে যেতে পারে এরকম একটা প্রতিবেদন দিনের বেলায় এসেছিল।

“সাধারণ কর্মীরা সারারাত জেগে কাটিয়েছেন, সূত্র জানিয়েছে। প্রতিবেদনটা হয়তো তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে বা পাকিস্তানীরা পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে পারে। আমরা এখন একটু বেশি ঘুমিয়ে নেই, কিন্তু অবস্থা এমন যে এরকম যেকোনো রাতে হতে পারে”।

ভারতীয় সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তারা যেটাকে পাকিস্তান সীমান্ত “উস্কানির” তথা ভারতীয় সীমান্তে শিলিং এবং খনি পোতা, বলে মনে করে সেটার বিরুদ্ধে তাদের সরকার কঠিন অবস্থান নিচ্ছে।

“আমরা ব্যাপক উপস্থিতি দেখিয়েছি কিন্তু সেখানে সরকারে একটা অদম্য প্রতিক্রিয়া আছে”, এক কর্মকর্তা জানান।

যদি এই প্রতিক্রিয়া সীমান্ত জুড়ে পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে আসতে পারে, এবং এর ফলে যদি পূর্নমাত্রায় যুদ্ধবিগ্রহ শুরু হয়, এরুপ জিজ্ঞাসা করা হলে সে বললো, “যদি তাই হয় তাহলে আমাদের এর পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে”।

বিপুল জনগনের উপস্থিতিতে আজ সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে শক্তিশালী দেশগুলোর পক্ষ থেকে সংযত হবার আহ্বানের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল।

“পাকিস্তান সেনা প্রত্যাহার করবে এটা খুব স্বাভাবিক এবং যৌক্তিক মনে হচ্ছে” তিনি বললেন। কিন্তু পাকিস্তান তাদের ভারত বিদ্বেষী প্রচারনা ও জিহাদের (পবিত্রযুদ্ধ) আহ্বান জানিয়ে এবং সীমান্ত জুড়ে সৈন্য মোতায়েন করে অবস্থার অবনতি ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করছে। এটা একতরফা ব্যাপার নয়। আপনি মুষ্টিবদ্ধ হাতের সঙ্গে করমর্দন করতে পারবেন না”।