You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.02.17 | ভুট্টোর মতলব কী? | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

ভুট্টোর মতলব কী?

পাকিস্তানের সংবধািন রচনার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আগামী ৩ মার্চ যখন জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশন আহুত হয়েছে ঠিক তখনি পিপলস্ পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো জাতীয় পরিষদ বর্জনের সুর তুলেছেন। আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবর রহমান পূর্ণ প্রাদেশিক সায়ত্ত্বশাসনের দাবি না ছাড়লে নাকি তিনি জাতীয় পরিষদকে এক মুঠো ধুলাের বেশি মূল্য দেবেন না। পাকিস্তানে প্রাপ্তবয়স্কদের ভােটে এই প্রথম সাধারণ নির্বাচন হয়েছে আর তাতে মুজিবর রহমানের আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদে ১৬০ টি আসন দখল করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে। ভুট্টোর পিপলস পার্টি পেয়েছে ৮৩টি আসন। গণতন্ত্রকে স্বীকার করলে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকে উপেক্ষা করা চলে না। সুতরাং সংখ্যালঘু দলের নায়ক হয়ে ভুট্টোর জাতীয় পরিষদ বর্জনের অভিপ্রায় গণতন্ত্রকেই চ্যালেঞ্জ করা। আওয়ামী লীগের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষ নয়া-সংবিধানের দাবি হাজির করেছে। সুতরাং ভুট্টো যদি নয়া সংবিধান রচনার পথে অন্তরায় হয়ে বসেন তবে পাকিস্তানের অধিকাংশের দাবিই তিনি অগ্রাহ্য করবেন।
আওয়ামী লীগের দু’দফা শর্তের প্রধান হলাে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ফেডারেল সরকারের হাতে শুধু প্রতিরক্ষা পররাষ্ট্র ও মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর রাখা বাকী সমস্ত অধিকার অঙ্গ রাজ্যগুলিকে দেয়া। ভুট্টোর তাতে আপত্তি। তিনি বলেছেন আওয়ামী লীগ যদি তার ছ’দফা শর্ত সম্পর্কে আপস করতে রাজী থাকে তবে তিনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যােগ দিতে পারেন। অর্থাৎ ভুট্টোর আবদার মানতে হলে আওয়ামী লীগকে তার নির্বাচনকমণ্ডলীর কাছে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে হবে। আওয়ামী লীগের পক্ষে তা সম্ভব নয়। আসলে ভুট্টো জটিলতার আশ্রয় নিয়ে অবস্থাকে এমনভাবে ঘােরালাে করে তুলছেন যেন এটা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের লড়াই। যদিও আওয়ামী লীগ জিতেছে পূর্ব পাকিস্তানের ভােটে আর পিপলস পার্টি জিতেছে পশ্চিম পাকিস্তানের ভােটে, কিন্তু নয়া-সংবিধান রচনার দাবিতে নির্বাচন হয়েছে পাকিস্তানের দুই অংশেই। সেই অবস্থায় গরিষ্ঠতম দলকে সংবিধান রচনায় বাধা দেবার অর্থ গণতন্ত্রেরই বিরােধিতা করা। অতএব এই বিরােধ পাকিস্তানের দুই অংশের নয়, আসল বিরােধ গণতন্ত্রী ও গণতন্ত্র বিরােধী শক্তির। ভুট্টো সাহেব যত কৌশল জালই বিস্তার করুন শেষ অবধি গণতান্ত্রিক শক্তিরই জয় হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

সূত্র: কালান্তর, ১৭.২.১৯৭১