দ্যা টাইমস,লন্ডন, ১লা জুন, ১৯৭১
সম্পাদকীয়
লাখো বাঙ্গালীর দুর্ভোগ
গত ছয় সপ্তাহ ধরে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে উদ্বাস্তুদের অনুপ্রবেশ ঘটেই চলেছে। বিশেষ করে পূর্ব দিকে ত্রিপুরায়, উত্তর দিকে আসামে এবং সবচেয়ে বেশি পশ্চিম বাংলায়। ভারত সরকারের এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর বীরত্বপূর্ণ প্রচেষ্টায় এতোটুকু আশা করাই যায় যে ভীষণ অভাবে থাকা মানুষগুলোর জন্য এতটুকু হলেও কিছু করা সম্ভব। প্রথম এবং জরুরী হচ্ছে খাদ্য। আর এই মৌসুমে যে কোন সময় বৃষ্টি শুরু হতে পারে এবং তখন আশ্রয়স্থল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আশে-পাশের রোগ-শোক নিয়ে। আমাদের প্রতিবেদন অনুসারে সেখানে কলেরার প্রকোপ দেখা দিয়েছে যা মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে। অন্যদিকে কলকাতার মত ভঙ্গুর কাঠামোর শহরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বিরাজ করে সেখানে উদ্বাস্তুদের অনুপ্রবেশও উদ্বেগজনক।
উদ্বাস্তুদের সামনে এখন অনেক বড় সমস্যা যা তারা গত শরতের সাইক্লোনেও অনুভব করেনি। তা ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানদণ্ডের হিসেবে খুব কমই সেই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিল। তখন মূলত সাহায্য প্রয়োজন ছিল তাদেরই যারা তাদের ঘর হারিয়েছিল এবং যাদের নিজেদের জমি-জমা পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। সবারই নিজস্ব শক্তি ছিল এবং মনের মধ্যে ছিল আশা যে তারা তা করতে পারবে। আর ভারতে প্রবেশকারী উদ্বাস্তুরা মানুষ সৃষ্ট দুর্যোগে ভুক্তভুগি। আমাদের সংবাদদাতাদের সীমান্তের সেইসব অঞ্চল থেকে পাঠানো প্রতিবেদন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার কোন কারন নাই।
উদ্বাস্তুদের ভারতে প্রবেশ পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর দাবির সত্যতা নিশ্চিত করে না এবং স্বাভাবিক অবস্থায় জীবন ফিরে যাবে তাও বলা যাচ্ছে না। গ্রামগুলোতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যহীনভাবে আক্রমনের বিভিন্ন গল্প বলার রয়েছে উদ্বাস্তুদের। অতিরঞ্জিত কিছু গল্প থাকলেও সবগুলোই শুরু হয়েছে নৃশংসতা এবং মাত্রাজ্ঞানহীনতা দিয়ে।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ ছাড়া পাকিস্তান সরকার উদ্বাস্তুদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। এমনকি পূর্ব পাকিস্তানের সাথে সমঝোতারও কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অনেকদিন নিশ্চুপ থাকার পর ইয়াহিয়া এক সপ্তাহে বিবৃতি দিয়েছে এবং তার ২-৩ সপ্তাহ পরে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে কিভাবে সে তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। এদিকে বিরোধী শক্তিকে নিঃশেষ করে দিতে কি করা হচ্ছে? দমন-নিপীড়ন কি বন্ধ হয়ে গিয়েছে? খাদ্য ও ওষুধ বিতরনে পাকিস্তান সরকারের উচিত জাতিসংঘের সাহায্য নেয়া। সীমান্তের দুই পাশেই এদিকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।