You dont have javascript enabled! Please enable it! অমৃত বাজার পত্রিকা, ১৫ এপ্রিল ১৯৭১, কুমিল্লায় ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মুক্তিফৌজের উপর প্রচণ্ড আক্রমণ - সংগ্রামের নোটবুক

অমৃত বাজার পত্রিকা, ১৫ এপ্রিল ১৯৭১, কুমিল্লায় ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মুক্তিফৌজের উপর প্রচণ্ড আক্রমণ
উত্তরবঙ্গে কুষ্টিয়ায় পাক আর্মির বিমান আক্রমণে প্রচুর ধ্বংসযজ্ঞ

আগরতলা, ১৪ এপ্রিল, – কুমিল্লায় মুক্তিফৌজ একটি দুর্গ ঘিরে ফেলেছে – দেরি হয়ে যাবার আগে তারা সেখানকার সাপ্লাই লাইন ধ্বংস করতে চায়। পাকসেনারা সেখানে আজ তীব্র আক্রমণ করে। তারা গোমতী নদী দিয়ে আক্রমণ চালিয়ে বাংলাদেশের পূর্ব অঞ্চলের সাথে যোগাযোগের মূল সংযোগ আখাউরা- ব্রামনবাড়িয়া সাব সেক্টর রক্ষার চেষ্টা করে। – রিপোর্ট ইউ এন আই।

তিন কোম্পানি পাকিস্তানি সেনার সাথে পাকিস্তান এয়ার ফোর্স এর চারটি বিমান যোগ দেয়। তারা কসবা সহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তীব্র বোমাবর্ষন করে।

উত্তর সেক্টরে লিবারেশন ফোর্স দিনাজপুর শহরে শক্ত অবস্থান নিয়ে আছে। সেখানে গত রাতে তারা একটি যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের ভারী ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে।

বৈমানিক আক্রমণ মনে হচ্ছে নতুন যোগ হয়েছে। কারণ স্থলপথে জলা গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশে যুদ্ধবিগ্রহের অভিজ্ঞতা এই বাহিনীর সামান্য। তাই হয়ত এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।

পূর্ব সেক্টরে পাকিস্তানের হামলা দেখা যায়। তারা গুরুত্তপূর্ন আখাউড়া রেলওয়ে জংশন যা মিটার গেজ দিয়ে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের শাহে যুক্ত সেটা রক্ষা করতে চাইছে। জংশনটি যুদ্ধ শুরুর থেকে এখন পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর দখলে।

পাকিস্তানের কৌশল দৃশ্যত ঢাকা ভিত্তিক। তারা মুক্তিফৌজকে সিলেট ময়মনসিংহ অঞ্চলে নিবন্ধ রাখতে চেষ্টা করবে।

এটাকে বলা হচ্ছে “অপারেশন ঢাকা”। ঢাকা থেকে ১৮ কিলোমিটার অদূরে – সাভারে – আজ সকালে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের উপর ব্যাপকভাবে ঝাঁপিয়ে পরে।

কুষ্টিয়া জেলা শহর বাংলাদেশ বাহিনীর দখলে। ভয়েস অব এমেরিকার মতে তাদেরকেও পাকিস্তান বিমান বাহিনী ও আর্টিলারি আক্রমণ করেছে।

পাকিস্তানি সৈন্যরা ভেড়ামারা, কামার খালি এবং শিলাইহদ এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়েছে। বিমান বাহিনীর ভারী বোমা বর্ষোন সত্ত্বেও মুক্তিবাহিনী গোয়ালন্দে তাদের দখল বজায় রেখেছে।

নগরবাড়িতে ১৫০ জন পাকিস্তানি সৈন্য মুক্তিবাহিনী ঘিরে রেখেছে বলে রিপোর্ট করা হয়।

এমনকি মুক্তিফৌজ মুক্ত এলাকায় একত্রিত হচ্ছে – সদ্য ঘোষিত বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কাজ চালানোর জন্য তারা পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তার সমাধানে আজ সাত দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

এইগুলি হল:
১. কোন আক্রমণ থেকে মুক্ত এলাকাকে রক্ষা করা।
২। মুক্ত অঞ্চলে সঠিক ভাবে বেসামরিক প্রশাসন চালাতে হবে – উন্নয়ন কাজ, শিল্প ও কৃষি উভয় ক্ষেত্রে উৎপাদনশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করতে হবে।

৩. স্বাভাবিক কাজ শুরু করার চেষ্টা করতে হবে। স্কুল চালাতে হবে, অফিস এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাঙ্ক পুনরায় শুরু করার চেষ্টা করতে হবে।

৪. বলিষ্ঠতার সাথে শত্রু অধিকৃত এলাকায় যুদ্ধ চালিয়ে যান।
৫. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, সরকার কিছু প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে বৈদেশিক বাণিজ্য শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৬. স্বর্ণমানের অভাবে কিছু বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্ত বাণিজ্য চালানো হবে। ট্রেড সরকারের কিছু সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে যাতে মানুষ সঠিক পদ্ধতিতে সব পায়।