অমৃতবাজার পত্রিকা, ১৪ এপ্রিল ১৯৭১, চিনা প্রতিক্রিয়া ভারতের জন্য হুমকি
নয়া দিল্লি, ১৩ এপ্রিল, চীনা প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই ইয়াহিয়া খানকে এক বার্তায় বলেছেন পূর্ববাংলায় পাকিস্তানের সামরিক কর্মকে তিনি সমর্থন করেন এবং চীন এর সর্বাত্মক সাহায্য বজায় থাকবে। এটি ভারতের জন্য হুমকি বলে এখানকার পর্যবেক্ষকরা মনে করেন।
সরকারি সূত্র অবশ্য জানিয়েছে ইন্দো-চীন সীমান্ত বরাবর কোন সেনা সমাবেশ দেখা যায়নি।
সরকারি সূত্র গতকাল বার্তা সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হননি কিন্তু চীন সম্পর্কিত পর্যবেক্ষকরা মনে করেন এতে করে ভারতবিরোধী ইস্যুতে ইসলামাবাদের মনোবল বাড়বে। চীনা মনোভাব একটু উগ্র হলেও পূর্ববাংলার ইস্যুতে ইন্দো-পাকিস্তান অবস্থানে চীন সরাসরি জড়িত নয়।
পর্যবেক্ষকরা হয়েছেন যে চীনের নেতৃত্ব ও প্রেস পোল্যান্ডের কমিউনিস্ট নেতৃত্বকে সমালোচনা করেছে এবং সেখানে মিস্টার গমুল্কার উৎখাতে ভূমিকে রেখেছে সেই চীন ভারতকে দায়ী করেছে পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলানোর জন্য।
সরকারী সূত্র প্রত্যাখ্যান করেছে যে ভারতের পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলানোর কোন লক্ষ্য ছিলোনা। ভারত আন্তর্জাতিক আচার মেনেই তাদের সাথে সম্পর্ক রেখেছে।
পর্যবেক্ষকরা বলেন ‘জনগণের’ সরকার চীন পূর্ববাংলায় একটি সংখ্যালঘু সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে সেখানকার ‘জনগণের’ আন্দোলনের প্রতি সামান্যতম সহানুভূতি দেখাচ্ছেনা।
এদিকে, চীনা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জনাব জেড এ ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টির একজন মুখপাত্র আজ স্বাগত জানান।
রেডিও পাকিস্তান পিপিপির তথ্য সচিব মাওলানা কাউসার নিয়াজীর বরাত দিয়ে বলেন যে তিনি লাহোরে জনাব চৌ এর বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে বলেছেন – চীনের বিবৃতি ভারতের জন্য একটি সতর্কবাণী যাতে তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে এবং “এ অঞ্চলের শান্তি জন্য একটি গ্যারান্টি-স্বরূপ।”
তিনি দাবি করেন যে, জনাব চৌ এর বক্তব্যের সঙ্গে “ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় থাকল।”
নিরপেক্ষ
চীনা বিষয়ক ইউরোপীয় বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বিশ্বাস করেন যে চীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে “নিরপেক্ষ’ অবস্থান নিয়েছে। খবর এ এফ পি প্যারিস থেকে।
এই বিশেষজ্ঞদের মত ভারত এবং পাকিস্তানের প্রেসের থেকে ভিন্ন। এমনকি সরকারী ভাবেও দুই দেশ থেকেই বলা হয়েছে পূর্ব বাংলা ইস্যুতে চীন ইসলামাবাদের পক্ষ নিয়েছে।
কিন্তু আসলে, গতকাল রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানকে চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই পাঠানো টেলিগ্রামটি আংশিক প্রকাশিত হয় যেখানে দেখা যায় তিনি বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে নয় বরং ভারতকে আক্রমণ করেই কথা বলেছেন।
চীনের বক্তব্যে ভারতের তার অবস্থান পরিবর্তনের কোন অবস্থা নেই। চৌ এর ব্যাপারটা এমন যে একজন ডাক্তার হৃদরোগীকে বলছেন, চিন্তা করবেন না, আমি আপনার লিভার ঠিক করে দেব।
পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে চুপ থাকতে গিয়ে চীন তার ভারত-বিদ্বেষ প্রকাশ করে ফেলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে এটি শুধুমাত্র চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে ঐতিহ্যগত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে নয়। সমস্যা শুরু হয় যখন ভারত পাকিস্তান সংকটে চীনের কাছে না গিয়ে শুধুমাত্র ওয়াশিংটন ও মস্কোর কাছে গিয়েছে। (পিটিআই)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই এর ইসলামাবাদের প্রতি দৃঢ় সমর্থন এবং ভারতের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করার অঙ্গীকার সত্ত্বেও এতে তেমন কোন বিপদ হবেনা বলে ধারনা করছেন।