You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.10 | দ্যা ফ্রন্টিয়ার, ১০ এপ্রিল, ১৯৭১, সম্পাদকীয় যুদ্ধ পর্যবেক্ষক - সংগ্রামের নোটবুক

দ্যা ফ্রন্টিয়ার, ১০ এপ্রিল, ১৯৭১, সম্পাদকীয় যুদ্ধ পর্যবেক্ষক

পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় যে যুদ্ধ চলছে তার প্রবণতা এখন গত সপ্তাহের চেয়ে একটু বেশি। লুকানো সাংবাদিকদের চাক্ষুষ প্রমাণাদি এবং উদ্বাস্তুদের থেকে প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে গণহত্যা, শহরে বোমা হামলা, ধর্ষণ লুটপাট এবং বেসামরিক নাগরিকদের পশ্চিম পাকিস্তানিদের দ্বারা ভীতি প্রদর্শনের খবর পাওয়া যায়। পশ্চিম পাকিস্তানিরা দেশভাগে যুক্তদের দেশ থেকে তারাতে চাইছে এবং দখলদার বাহিনীর মত আচরণ করছে।

অন্যদিকে, এর আগে প্রাপ্ত স্বাধীন বাংলা রেডিও থেকে ও ভারতীয় সংবাদপত্র থেকে জানা যায় পশ্চিম পাকিস্তানি সকল সেনাকে ক্যান্টনমেন্টে পাঠানো হয়েছে যুদ্ধের পরিবর্তে। আরো সম্ভাব্য যে ৮০০০০ সৈন্যদের একটি বাহিনী যারা জালের মত বিস্তৃত নদী ও খালের জন্য সুবিশাল গ্রামাঞ্চলের সরাতে পারছে না, তাই তারা ইচ্ছাকৃতভাবে সেনানিবাসগুলোতে জমা হয়ে আছে এবং শুধু তখনি তারা শত্রুবাহিনীদের ধ্বংস করতে আসে যেখানে তাদের গোলাবারুদ ও তেল খরচ কম হয়। তাদের সরবরাহ জটিল আকার ধারণ করেছে – সম্ভবত বার্মা ও সিংহল চুক্তিপত্রে যে দৃঢ় প্রত্যাশা করা হয়েছিল তা ব্যার্থ হয়েছে।

সবচেয়ে উৎসাহজনক বিস্ময় গত একপক্ষ সময়ে মানুষের দ্বারা প্রদর্শিত অস্থিরতা। তারা সামরিক শক্তি দ্বারা আচ্ছাদিত না। জনপ্রিয় যুদ্ধবাহিনীর সাথে প্রথম বেঙ্গল রেজিমেন্ট যুক্ত হয়েছে। সাথে আছে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস ও পুলিশ। বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি অফিসারদের এবং জওয়ানদের নাম আছে। অতএব বিদ্রোহী রেজিমেন্ট এর শক্তি সম্পর্কে সন্দেহ আছে। অধিকন্তু, জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও শেখ মুজিব এর আপসের সময় এইসব কর্মকর্তা এবং জওয়ানদের অজ্ঞাতে তাদের নিরস্ত্র করে ফেলা হয়েছে। তাই তাদের সাথে করে খুব বেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে যাবার সম্ভবনা কম। আর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর রণসজ্জার তুলনায়, পুলিশ, মুজাহিদ ও আনসার এর অস্ত্র অনেক নিম্নমানের। তাই প্রশ্ন আসে সর্বোচ্চে কতদিন বিদ্রোহীরা সংঘর্ষ চালিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু তারা যে আক্রমণাত্মক ভঙ্গি নিয়েছে তা অনেক সাহসিক। কিছু কিছু যায়গা তারা পুরোটা দখলে নিয়েছে। যুদ্ধ চলতে থাকলে তারা অ্যামবুশের মাধ্যমে শত্রুদের থেকে হাল্কা অস্ত্র উদ্ধার করতে পারে কিন্তু আর্মিকে হারিয়ে ভারী অস্ত্র উদ্ধার করা একটা ব্যাপার বটে।

২৫ মার্চ শেখের বক্তৃতায় দেশবাসীকে আর্মির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে আহবান করা হয়েছে। কিন্তু যেভাবে তিনি তার সমর্থকদের আহবান করেছেন – যাদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ৭০ শতাংশ – তাতে মনে হয়না যে এটি শুধুমাত্র আওয়ামীলীগের বিষয়। দলের অনেক সদস্য আটক হয়েছেন – এতে করে বোঝা যায় তারা প্রস্তুত ছিলেন না। সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতির দরকার। অল্প সংখ্যক লোক সীমান্ত পেরিয়ে প্রতারণা করেছে। জাতীয়তাবাদ সাম্প্রদায়িকতায় রূপ নিচ্ছে। এবং সুসজ্জিত সশস্ত্র প্রতিরোধ অনুপস্থিত। অনেকে তাদের গ্রামবাসীর সাথে প্রভুর মত কথা বলেন এবং নিজেদের কমিউনিস্টদের অবিশ্বাস করে যারা একই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছে। তারা বাংলাদেশের কেউ যারা আওয়ামীলীগের সাথে যুক্ত তারা যেন সীমান্তে কোন সহায়তা না পায় সেটি চায়।

মুক্তিযুদ্ধ চলার কারণে নির্ভরযোগ্য রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছেনা। তাই এখনো প্রতিরোধের প্যাটার্ন উপলব্ধি করা যাচ্ছে না। কে সামরিক জান্তাকে চুনকালি দিচ্ছে? পরিস্থিতি একই রকম হবার কথা নয়। এটাই কারণ হতে পারে যার জন্য বড় শক্তিগুলো দর্শকের ভুমিকায় আছে। তারা দেখার চেষ্টা করছে নিষ্পত্তিমূলক ফ্যাক্টর হিসেবে কোনটা আসবে। ভারত প্রথম থেকেই বাংলাদেশকে সমর্থন করছে কারণ পাকিস্তান ভাঙ্গার চেয়ে ভালো তার জন্য আর কিছুই হতে পারেনা। এবং বাংলাদেশ যদি আওয়ামীলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকে তবে সেটা দ্বিগুণ সুবিধাজনক হবে।