You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.02 | দি ডেইলি লা মানড (প্যারিস) | পাকিস্তানঃ ইয়াহিয়া খান বাঙালির বিশ্বাস ফিরে পেতে চেষ্টা করছেন - ভিরাটেলি - সংগ্রামের নোটবুক

দি ডেইলি লা মানড (প্যারিস) | ২ অক্টোবর ১৯৭১ | পাকিস্তানঃ ইয়াহিয়া খান বাঙালির বিশ্বাস ফিরে পেতে চেষ্টা করছেন – ভিরাটেলি

পাকিস্তান সরকার ভারতকে পূর্ব পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি তৈরির জন্য দায়ী করেছে। ৩০ শে সেপ্টেম্বর জারি করা একটি সরকারি সূত্র অনুযায়ী, ভারতে প্রশিক্ষিত ফ্রগম্যান আটক করা হয়, যখন তারা চট্টগ্রামের বন্দরের কাছে মাইন সেট করছিল। অন্যদিকে, মিঃ ভুট্টো বুধবার পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সোভিয়েত হস্তক্ষেপের নিন্দা করেছেন। তিনি দেশের গণতন্ত্র পুনঃস্থাপন করার ব্যাপারে ইয়াহিয়া খানকে আশ্বাস দেন। যদি এই বছরের শেষের আগে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হয়, তিনি যোগ করেন, তাহলে দেশ বাঁচাতে খুব দেরি হয়ে যাবে। বাংলার সংকটের ছয় মাস পর, জেনারেল ইয়াহিয়া খান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আস্থা অর্জনে এবং দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে। গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একটি সাধারণ অ্যামনেস্টি প্রদান করেছে, তবে যারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করেছে বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতারা এর আওতার বাইরে থাকবে। কিন্তু অন্যদিকে পাঞ্জাবের কর্মকর্তাদের হত্যা করার পর মার্চের শেষ দিকে হাজার হাজার আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা বিদ্রোহ করে, তারা এই অ্যামনেস্টি দ্বারা উপকৃত হবে। এই সিদ্ধান্ত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি গঠন করে, কিন্তু সত্য বলতে এতে কোনও ফল হয়নি।

জেনারেল টিক্কার – যিনি বাঙালির সমত্ন নীতি নিয়েছিলেন – তার বদলে একটি বেসামরিক সরকার গঠন করা হয়েছে। তবে সেনাবাহিনীর অধীনে রাখা হয়েছে। এতে করে তারা মধ্যপন্থী এবং ডানপন্থি যে চরিত্র ধারণ করুন না কেন সে সম্পর্কে মানুষের কোন বিভ্রম নেই। অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলীয় কিছু কিছু রাজনীতিবিদ বলেছেন বাংলায় ক্ষমতা বদল হলেও আইন শৃঙ্খলা এখনও পর্যন্ত পুনর্বহাল হয়নি। তবুও উপনির্বাচন দুই মাসের মধ্যে হবে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শূন্য আসনগুলি পূরণ করতে হবে যেহেতু তাদের বেশিরভাগ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। যদিও আওয়ামী লীগের মনোনীত ৮০ জন প্রতিনিধি তাদের ম্যান্ডেট রেখেছেন, তবে তাদের মধ্যে মাত্র ২০ জন সরকারি কর্মসূচি পালন করেছেন। এই নির্বাচন কি অবস্থার মধ্যে হবে তা এক আশ্চর্য ব্যাপার। স্বায়ত্তশাসনের দাবি করা দল যারা গত নির্বাচনে বিপুল বিজয় অর্জন করেছে তারাএই নতুন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।

অবশেষে, ইসলামাবাদ কর্তৃপক্ষ শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার মুলতবি করেছে যা আগস্টের মাঝামাঝিতে অনুষ্ঠিত হয়। এখানে সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, বাঙ্গালী নেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না, এমনকি যদি আদালত তাকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করে। যেকোনো মামলায় তার আইনজীবী অ্যামনেস্টির জন্য আবেদন করবে। যাইহোক কোনও সন্দেহ নেই যে এই বৈদেশিক শক্তিগুলি বিশেষ করে ইউএসএ এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজনৈতিক সমাধানের জন্য প্রদত্ত চাপের প্রতিক্রিয়ায় সরকারের এই বিভিন্ন পদক্ষেপগুলি আসে।
ফ্রান্সের প্রতিনিধিত্বকারী “ওয়াশিংটন ক্লাব” সদস্যগণ তাদের অর্থনৈতিক ও আর্থিক সহায়তা দেবার পূর্বশর্ত হিসেবে বলেছেন যে ঢাকার সিভিল প্রশাসন পুনবহাল করতে হবে। পাকিস্তানি উন্নয়ন এবং অর্থের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে বৈদেশিক সহায়তার একটি বড় অংশ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তার সহায়তা স্থগিত করেনি এবং বঙ্গোপসাগরে সাইক্লোন এবং দমনের শিকারদের সহায়তার জন্য বছরের শুরুতে ২৪০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদান করেছে। এটা সম্ভাব্য যে তারা শীঘ্রই ইসলামাবাদ শাসনের নতুন কমিটির সদস্যদের সাথে বসবে। ইউনাইটেড নেশনস এ বাংলার ব্যাপারে প্রশ্ন উত্থাপিত হলে ইসলামাবাদ সরকার একটি ভাল ধারণা তৈরি করাতে চায়।

উপ-নির্বাচনগুলির জন্য সময়সীমা দেবার উদ্দেশ্য হল সমস্য ক্ষেপণ। কিন্তু উপনির্বাচন পর কি হবে সেই উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট নয়। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয় যে, সরকার সর্বদা প্রদেশের স্বায়ত্তশাসন প্রদানের জন্য প্রস্তুত থাকবে, যদি এই অবস্থা বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশকে বিভক্ত না করে। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে, তারা বাংলাদেশের সরকারকে নিয়ে সমঝোতা করতে চায় না – যা ইসলামাবাদ নাম দিয়েছে “ভারত স্টুজেস” অফিসিয়ালি তারা ঘোষণা করেছে “তারা আদালতে হাজির হতে পারে এবং নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারে।’’ যদি তারা না আসে, তাহলে আমরা তাদের ছাড়াই করবো। যদি ভারত অনুপ্রবেশকারীদের সাহায্য না করে তবে আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। এই সব সত্ত্বেও, ইসলামাবাদ পূর্ব পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন, যেখানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মওলানা মুহাম্মদ ইসহাককে হত্যা করা হয়েছিল। পূর্ব বাংলায় সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর হস্তক্ষেপও পশ্চিমা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। মিঃ ভুট্টো, যিনি সেনাবাহিনীর পদক্ষেপকে অনুমোদন করেছিলেন, কারণ দেশটির ঐক্য রক্ষার জন্য এটি গ্রহণ করা হচ্ছিল। তিনি এখন শাসকশ্রেণীর নীতির সমালোচনা করছেন, তার যোগাযোগগুলি ভেঙে ফেলছেন।