You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.31 | টেলিগ্রাফ, ৩১ আগস্ট ১৯৭১ এই শীতে পূর্ব পাকিস্তান দুর্ভিক্ষ অনিবার্য - সংগ্রামের নোটবুক

টেলিগ্রাফ, ৩১ আগস্ট ১৯৭১
এই শীতে পূর্ব পাকিস্তান দুর্ভিক্ষ অনিবার্য
– ঢাকা থেকে ক্লেয়ার হলিংওর্থ

খাদ্যসামগ্রীর স্বল্পতার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের কিছু অংশে শীতকালীন দুর্ভিক্ষ অনিবার্য।

এটা কিছু আমেরিকান এবং অন্যান্য বিদেশী বিশেষজ্ঞদের মত যারা গত ৬ মাস ধরে এই প্রদেশের খাদ্য ও পরিবহন পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেছেন।

অভাব যাই থাকুক দুর্ভিক্ষ হবে কিনা তা নির্ভর করছে বিতরণ ব্যবস্থার দক্ষতার উপর ।

অনেক বিদেশি পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক শাসনকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানের উপর বিরক্ত। কারণ তিনি জাতিসংঘের অধীনে বিদেশী স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের দ্বারা বিতরণ করার অনুমতি দিচ্ছেন না।

তিনি জোর দিয়ে বলেন এটি পাকিস্তান প্রশাসন করবে যা স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর অধীনে ন্যাস্ত হয়।

সশস্ত্র ভলান্টিয়ার্স

সিদ্ধান্ত হয় যে শান্তি কমিটি ও তাদের নিয়োগকৃত সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবকরা খাদ্য বিলি করার কাজ করবে।

অল্প কিছু মানুষ শান্তি কমিটি গঠন করেছে যারা মূলত মুসলিম লীগের লোকজন এবং বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা দখল করার চেষ্টা করছেন।

কিন্তু বেশিরভাগই সুবিধাবাদী, যারা পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সহ-অবস্থান দ্বারা স্থানীয়ভাবে ক্ষমতাবান হবার সুযোগ পেলে খুশি হন।

স্থানীয় শান্তি কমিটি টেকনিক্যালি সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয় যারা মূলত রাজাকার, এবং যারা অনেক এলাকায় মানুষ ঠকানো এবং সহিংসতার জন্য সুনাম অর্জন করেছে।

সেখানে ভয় দেখানো হচ্ছে যারা স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের সমর্থনের জন্য কাজ করবে তাদের চাইতে যারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে সহযোগী হিসেবে কাজ করবে তাদের বেশী চাল এবং গম দেয়া হবে।

বাঘাই তাওয়িল নামে জাতিসংঘের একজন কর্মি সেখানে ছিলেন। তিনি এই সমস্যা দূরীকরণের জন্য কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন। তিনি ৭৩ জন কর্মকর্তা নিয়ে এমনভাবে কাজ করবেন যাতে খাবার সঠিক ব্যাক্তির কাছে পৌঁছায়।

কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের ৬৫ থেকে ৭০ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

জীপ অধিগৃহীত

কিছু কিছু এলাকায় সেনাবাহিনী এখনও ইউনিসেফের জীপ ব্যাবহার করছে। এগুলো ২৫ মার্চ তারা নিয়ে যায় যখন তারা “শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন”। এগুলোর সামান্যই এখন আর ফিরে পাওয়া যাবে।

ইতিমধ্যেই চট্টগ্রাম ও খুলনা পোর্টে চাল প অন্যান্য খাবারের মজুদ আছে এবং আমেরিকা থেকে আরও আসছে। চীন থেকেও কিছু খাদ্য পুর্ব পাকিস্তানে আসার কথা আছে।

এসব চালান আভ্যন্তরীণ বন্দরগুলোতে পাঠানোর জন্য নৌকা ক্রয় করা হয়েছে কিন্তু নৌ চলাচল যথেষ্ট ঝুকিপূর্ন।

মুক্তি ফৌজ ও গেরিলাদের রাস্তায় সেট করা মাইনের জন্য সড়কপথে এবং ছোট নৌকা চলাচলে যথেষ্ট হয়রানির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। রাতে তো চলাফেরা করা একদমই সম্ভব নয় এমনকি দিনের বেলায়ও বিপজ্জনক হতে পারে।

সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যা দুর্ভিক্ষের সম্ভবনা আরও বাড়িয়েছে। ২৬০০০০০ একর জমির ধান নষ্ট হয়েছে।