২৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১ঃ প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ
প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ খিলগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয় পুনরায় চালু উপলক্ষে আয়োজিত বিরাট কর্মীসভায় বক্তৃতায় বলেন, সর্বপ্রকার শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সমাজতন্ত্রী অর্থনীতি চালু করাই আওয়ামী সরকারের লক্ষ্য। বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতন্ত্রী দেশ হিসেবে পুনর্গঠনের জন্য সর্বশক্তি ও উদ্যম নিয়োজিত করার জন্য তিনি জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ সাড়ে ৭ কোটি মানুষের মুক্তি সংগ্রামে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেবে না।
তিনি আও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে বাংলাদেশের মানুষ সত্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে মাত্র নয় মাসের মধ্যে জয়ী হয়েছে। কোন জাতি এত কম সময়ের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি এবং স্বাধীনতার জন্য এত রক্তের ঋণও পরিশোধ করতে হয়নি।
বাঙালিদের মুক্তি সংগ্রামে অকুন্ঠ সমর্থদানের জন্য তিনি ভারতের ৫৫ কোটি অধিবাসী, ভারত সরকার ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের মহান জনগণ ও সরকারের প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, আমাদের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি রাশিয়ার দৃঢ় সমর্থনদানের ফলেই বাংলাদেশে বিশ্বযুদ্ধে শিকার হতে বেঁচে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের ফলে চিরকালের জন্য পঙ্গু ও বেসামরিক লোকদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার বদ্ধ পরিকর। তিনি বাংলাদেশ সরকারের শান্তিপুর্ণ সহ-অবস্থান ও জোট নিরপেক্ষ নীতির পুনরুক্তি করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের যুব সমাজ স্বাধীনতার পুরোধা ছিল বলে তাঁদের নিরস্ত্র করা হবে না। তাঁরা নিজেদের পেশায় ফিরে যেতে না চাইলে তাঁদের জাতীয় মিলিশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সভায় ঢাকা শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলম মোস্তফা এম.পি.এ এবং কুস্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম এ.এন.এ বক্তৃতা করেন।এদিন জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ সহকারী মিঃ হেজেন এবং ইউনিসেফ প্রতিনিধি রবার্ট সি ওয়াকার প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের সাথে দেখা করেন।