You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.17 | জয় বাংলা ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ তারিখের মূল পত্রিকা - সংগ্রামের নোটবুক

জয় বাংলা ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ তারিখের মূল পত্রিকা

মূল পত্রিকা পড়তে এখানে ক্লিক করুন

‘আমাদের প্রতি গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাকামী বিশ্বমানবের সমর্থনকে পুরাপুরি কাজে লাগানের চেষ্টা করব’ খন্দকার মোস্তাক

পররাষ্ট্র মন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের জাতিসংঘ যাত্রার প্রস্তুতি

আগামী ২১শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের যে অধিবেশন শুরু হচ্ছে সেই অধিবেশনে যোগদানের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শক্তিশালী এক প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছেন। এই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব করবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী খোন্দকার মোস্তাক আহমেদ। গত মঙ্গলবার মুজিব নগরে জয় বাংলা াপ্রতিনিধির সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎ কারে পররাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব আহমেদ এই তথ্য প্রকাশ করেন।

      এক প্রশ্নের উত্তরে জনাব মোস্তাক আহমেদ বলেন, প্রতিনিধি দল গঠন এখনো চূড়ান্ত হয়নি। জাতিসংঘের  অধিবেশনের আগেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের বিষয় নিয়ে কোনো কোনো মহলে যে আলোচনা হচ্ছে সে বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন ‘আমরা বাংলাদেশ সরকার গঠনের পর থেকেই স্বীকৃতি পাবার আশা করে আসছি’। তিনি আরো জানান অধিবেশনের পূর্বে স্বীকৃতি পেলে স্বাভাবিক ভাবেই গোটা পরিস্থতিরই পরিবর্তন ঘটবে। তবে স্বীকৃতি না পেলেও জাতিসংঘে আমাদের মর্যাদা হবে রাজনৈতিক স্বীকৃতি না পাওয়া একটি দেশেরে স্বাভাবিক মর্যাদা যা হয়ে থাকে তাই। জাতিসংঘে অধিবেশনে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কি কি বিষয় উত্থাপিত হতে পারে জিজ্ঞাসা করা হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী দৃঢ় ভাবে জানান বাংলাদেশ সম্পর্কিত সকল বিষয়েই সেখানে তোলা হবে, শেখ মুজিবের মুক্তি, বাংলাদেশে গণহত্যা, শরনার্থী সমস্যা এবং অন্যান্য জরুরি বিষয় অবশ্যই আলোচনার অন্তর্ভুক্ত হবে। এই সফরের সময় তিনি অন্য কোনো দেশ সফরে যাবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে, পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, অধিবেশনের পর তিনি কতিপয় দেশে যাওয়ার আশা করেন। তবে কোন কোন দেশে তিনি সফর করবেন তা নির্দিষ্ট ভাবে বলতে অসম্মতি প্রকাশ করেন। অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্র মন্ত্রী জানান ‍যদি অন্যান্য বিষয় অনুকূল থাকে, তবে তাঁর। অধিবেশনে যোগদানের জন্য রওনা হবেন। অবশ্য এর আগেই তিনি একটি সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের ইচ্ছা রাখেন। জনাব মোস্তাক আহমেদ জানান, আমরা অবশ্যই আমাদের সফরকে আমাদের প্রতি শাস্তি, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাকামী বিশ্বমানবের সমর্থনকে পুরাপুরি কাজে লাগনোর চেষ্টা করব।

      বাংলা সাহিত্য গগন থেকে খসে পড়লো একটি তারকা

      তারাশঙ্কর বন্দোপধ্যায় গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা ২৪ মিনিটে কলকাতায় তাঁর নিজস্ব বাসভবনে পরলোক গমন করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর নিজস্ব বাসভবনে পরলোক গমন করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বৎসর। দীর্ঘ সাহিত্য জীবনে তাঁর অর্ধশতাধিক গ্রন্থ বাংলা সাহিত্য ভান্ডারকে সমৃদ্ধি করেছে।

প্রধান মন্ত্রীর শোক বার্তা

তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে মন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে অকুন্ঠ সমর্থন জানাবার জন্য বাংলাদেশের অধিবাসীরা এই প্রখ্যাত সহিত্যিকের কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।

      সেই পুরাতন খেলা

বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকায় একটি নতুন নাটকের অভিনয় চলছে। নাটকটি যদিও নতুন কিন্তু তার বিষয়বস্তু অত্যন্ত পুরোন। এই বিষয়বস্তু হল, একজন অসামরিক তাবেদার বাঙালীকে গভর্ণরের পদে বসিয়ে বিশ্ববাসীকে বোঝানো, বাংলাদেশে আর সামরিক শাসন নেই। এমন চেষ্টা আইয়ুব খাঁও করেছিলেন। তার দশ বছরের স্বৈরাচারী শাসনে মোনেম খাঁ নামক এক বটতলার উকিলকে গভর্ণর পদে বসিয়ে দুনিয়ার মানুষকে বোঝাতে চেয়ে ছিলেন, বাঙলাদেশ বাঙালীদের দ্বরা শাসিত হচ্ছে। মোনেম খাঁর বদলে এবার ভাড়া পাওয়া গেছে আবদুল মোতালিব মালেক নামক এক দাঁতের ডাক্তারকে।

ঢাকার লাটভবনে শুধু তাবেদার বভর্ণর বসিয়ে নয়, পিন্ডির জঙ্গীচক্র বাংলাদেশের দখলীকৃত এলাকার আসল অবস্থা সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করার জন্য আরোছল চাতুরির আশ্রায় নিচ্ছে। হঠাৎ খুনী ইয়াহিয়া একেবারে “মহানুভব’ ব্যক্তি সেজেছেন এবং তাদের কথিত এক শ্রেণীর “রাষ্ট্রবিরোধী” বাঙালীর প্রতি সাধরণ অনুকম্পাও ঘোষণা করেছেন। দখলীকৃত ঢাকা বেতার থেকে বলা হয়েছে, কিছু সংখ্যক আটক লোককে নাকি জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই কিছু সংখ্যক লোক কারা, তাদের নাম ধাম কি, তা কিন্তু বেতার ঘোষণায় বলা হয়নি। সুতরাং আশঙ্কা হয় শিয়ালের কুমীর ছানা প্রদর্শনের মত এই ক্ষমা প্রদর্শনের মহড়াটিও জঙ্গীচক্রের কোন নতুন শয়তানি অভিসন্ধির বহি:প্রকাশ কিনা।

      একদিকে এইসব লোক দেখানো ভড়ং, অন্যদিকে দখলীকৃত বাংলাদেশে পাকিস্তানী হানাদার সৈন্যদের বর্বরতা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এখনো বাঙালী মেয়েদের ইজ্জত নাশ করা হচ্ছে এবং এক একজন অশিক্ষিত সেপাইকে বাঙালী মেয়েদের বল পূর্বক পত্নী (উপপত্নী) হিসাবে গ্রহণে উৎসাহ জোগানো হচ্ছে। দখলীকৃত এলাকায় এখনো চলছে গ্রামের পর পর গ্রাম ‍লুন্ঠন, হত্যা ও অগ্নুৎসব। দখলীকৃত এলাকায় বাঙালীদের এই অবস্থা। বিদেশেও তাদের সংঙ্গে একই আচরণ করা হচ্ছে। ইয়াহিয়া-চক্র বুঝতে পেরেছে, তাদের বিদেশী দূতাবাসে যেসব বাঙালী কর্মচারী রয়েছে, তাদের কেউ আর পিন্ডির খুনী চক্রের প্রতি অনুগত নয়। তার স্বাভাবিক ভাবেই স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুগত্য পোষণ করেন এবং সুযোগ পেলেই তা ঘোষণা করবেন। গত পাঁচ মাসে বহু বাঙালী কূটনীতিবিদ ও দূতাবাস-কর্মচারীর বেলাতেই প্রযোজ্য, কিন্তু কাজের বেলায় বেছে বেছে যে কেবল বাঙালী কর্মচারীদের পাসপোর্টই আটক করা হচ্ছে, বিশ্ববাসীর সে খবর জানতেও আর দেরী হয়নি।  

     

      দেশ বিদেশে এই বাঙালী-নিধন ও বাঙালী-বিতাড়ন নীতি অব্যাহত রেখেও ইয়াহিয়া-চক্র ঢাকায় কেন এক বিশ্বাসঘাতক বাঙালীকে তাবেদার হিসাবে লাটের গদিতে বসিয়ে এই অসামরিক শাসনের ভড়ং দেখচ্ছে? এই পশ্নটির জবাব বাংলাদেশে প্রধান মন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ গত ৫ই সেপ্টেম্বর রাত্রে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত তাঁর ভাষণে দিয়েছেন। প্রধান মন্ত্রী বলেছেন, জাতিসঙ্গের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন আসন্ন হওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শাসক গোষ্ঠী বাংলাদেশে অসামরিক শাসন পুন: পবর্তনের ভাব সৃষ্টির একটা কৌশল অবলম্বন করেছে। প্রধান মন্ত্রী আরো বলেছেন, ইয়াহিয়া ঘৃণ্য  টিক্কা খাঁর স্থলে মুষ্টিমেয় হতাশ বাঙালীকে পাকিস্তানের প্রতিনিধি করে জাতিসঙ্ঘে পাঠাবার চেষ্টা করেছেন-এ সবই ওই একই কৌশলের অঙ্গ। অর্থাৎ বাংলাদেশে যে সামরিক আইন, গণহত্যা ও দমন নীতি অব্যাহত রয়েছে, এই নগ্নসত্য গোপন করার চেষ্টা।

      কিন্তু পিন্ডির খুনী চক্রের এই সত্য গোপন প্রচেষ্টা সফল হয়নি। তাই বাংলাদেশে একজন তাবেদার গভর্ণর নিয়োগ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিউ ইয়র্ক পোষ্ট’ পত্রিকা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “বাংলাদেশে গভর্ণর হওয়ার কোন যোগ্যতা এই লোকটির নেই। বাংলাদেশে সম্পর্কে ব্যবস্থা গ্রহণের একমাত্র অধিকার রয়েছে জনগণের নির্বাচিত নেতা শেখ মুজিবের”। নেদারল্যান্ডের একজন প্রভাবশালী পার্লামেন্ট সদস্য ডা: মালিককে বাংলার দখলীকৃত এলাকার গভর্ণর নিয়োগ করা সম্পর্কে বলেছেন, এটা ঔপনিবেশিক ধরণের নিয়োগ। বস্তত: ইয়াহিয়া চক্র যতই চেষ্টা করুণ, বিশ্ববাসীকে বিভ্রান্ত করা তাদের চোখে ধূলো নিক্ষেপের কোন চেষ্টাই সফল হবে না। বাংলাদেশের মানুষ আর ইয়াহিয়া-চক্রের দাসত্ব স্বীকার করবে না। বরং মুক্তি বাহিনী অস্ত্রের মুখেই ইয়াহিয়ার এই নবানাট্যআভিনয়ে সকল ভাঁড়ামীর অবসান ঘটবে।

                                         

‘বঞ্চিত মানুষের কল্যাণে শোষণ বঞ্চনার চির অবসানের সংগ্রামে সকল প্রতিকূলতার মুখেও আমার কন্ঠ সোচ্চার থাকবে।

           

                       -শেখ মুজিব

তারাশঙ্কর ও বাংলাদেশের  মুক্তিযুদ্ধ

  তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় ইহলোক ত্যাগ করেছেন আজ চারদিন হয় গত মঙ্গলবার সকালে পশ্চিম বঙ্গের এই বরেণ্য কথাশিল্পীর মৃত্যু সংবাদ যখন ‍মুজিব নগরে এসে পোঁছে, তখন বাংলাদেশের শুধু বুদ্ধিজীবি শ্রেণীর মধ্যে নয়, অক্ষর জ্ঞান সম্পন্য সাধারন মানুষের মধ্যেও শোকের কালো ছায়া নেমে  আসতে দেরি হয়নি। বরেণ্য সাহিহ্যিক মাত্রেরেই স্থান দেশ , কাল, পাত্রের উর্ধে-একথা  তারাশঙ্করের বেলায় আরো সত্য এজন্যে যে, তিনি যে ‘ধাত্রীদেবতা ও গণদেবতার স্রষ্টা, তার কালজয়ী আবেদন ও আসন বাংলাদেশের মানুষের মনেও একটা নিবিড় আত্মীয়তা-বোধ ও সম্পর্কের সেতু তৈরি করেছে।  তারাশঙ্কর তার গণদেবতার সার্থক অভ্যুত্থান দেখেছেন বাংলাদেশেই তার জীবনের ত্রেবারে শেষ বছরটিতে। তাই তাতে সাড়া দিতেও তিনি দ্বিধা করেননি। জয়বাংলা ও জয় মুজিব বলে তিনিই বাংলাদেশের মুক্তিযদ্ধে সরব সমর্থনদানে অগ্রণীদের একজন হয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের কাছে  তারাশঙ্কর তাই চিরস্মরণীয়। তার কালজয়ী সৃষ্টি ও মৃত্যুজয়ী স্মৃতির প্রতি আমরা জানাই গভীর শ্রদ্ধা।

  

সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটি

বর্তমান মুক্তিযুদ্ধকে সফল সমাপ্তির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারকে উপদেশ দানের জন্য বাংলাদেশের চারটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে যে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার খবর দেশ-বিদেশের সংবাদপত্রে ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে এবং সম্পর্কে অনেক উৎসাহী আলোচনাও মুদ্রিত হয়েছে। বস্তত: এই সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হওয়ায় জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে জাতির যে নিবিড় ও অটুট ঐক্য আরেকবার প্রমাণিত হল, তাতে বাংলাদেশের ভিতরে মুক্তিসংগ্রামীরা যেমন অনুপ্রমানিত হবেন, তেমনি বাইরে বাংলাদেশের শুভাকাঙ্খী ও বন্ধু দেশগুলোও উৎসাহী হবেন। বস্তুত: এই উপদেষ্টা কমিটি গঠনের  গুরুত্ব এইখানেই যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অনৈক্য সৃষ্টির জন্য সম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত এবং উগ্র তত্ত্বসর্বস্বদের সুবিধাবাদী ভেদনীতি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হল এবং জাতীয় স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের লক্ষ্যে অবিচল চারটি প্রগতিশীল দল বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের প্রতি তাদের ঘোষিত সমর্থন আরো কার্যকর ও সক্রিয় করে তুললেন। এই ব্যাপারে এই দলগুলোর ভূমিকার যেমন প্রশংসা করতে হয়, তেমনি প্রশংসা করতে হয় আওয়ামী লীগেরও। আওয়ামী লীগ গত সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশে প্রায় শতকরা নিরানব্বিইটি আসনে জয়লাভ করে জাতিকে নেতৃত্ব দানের অবিসস্বাদিত অধিকার লাভ করা সত্তেও মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনায় অন্যান্য প্রগতিশীল দলের সমর্থন ও উপদেশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত দ্বারা দলীয় স্বার্থের উর্ধে জাতীয় স্বার্থের প্রতি তাদের আনুগত্য বলিষ্ঠভাবে প্রমাণ করেছেন।

      সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটিতে যারা রয়েছেন, তাদের রাজনৈতিক মত ও পথে পার্থক্য থাকলেও সকলেই পরিক্ষিত দেশপ্রেমিক। কমিটিতে ভাসানী ন্যাপের প্রতিনিধিত্ব করছেন মাওলানা ভাসানী, বাংলাদেশ কম্যুনিষ্ট পার্টির প্রতিনধিত্ব করছেন শ্রীমনি সিং, বাংলাদেশ জাতীয় কংগ্রেসের শ্রীমনোরঞ্জন ধর এবঙ মুজাফফর আহমদ। এছাড়া এই কমিটিতে আওয়ামী লীগের দু’জন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী এই কমিটিতে রয়েছেন। প্রধান মন্ত্রী কমিটির বৈঠক আহবান ও পরিচালনা করবেন।

      মুজিব নগরে অনুষ্ঠিত এই উপদেষ্টা কমিটির প্রথম বৈঠকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারেই যে বাংলাদেশের একমাত্র বৈধ সরকার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের অবিসস্বাদিত জাতীয় নেতা এ সত্যটির অকুন্ঠ অভিব্যক্তি দেখা গেছে। জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গীর এই সমঝোতা ও অভিন্নতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

      বাংলাদেশের গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার এবং এই সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটির মধ্যে স্বাভাবিক চরিত্রগত পার্থক্য রয়েছে, কিন্তু রয়েছে উদ্দে্শ্য ও লক্ষ্যগত ঐক্য। এই লক্ষ্য হল বাংলাদেশের পূর্ণ জাতীয় স্বাধীনতা। চরিত্রগত পার্থক্যের ক্ষেত্রে বলা চলে, গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত একমাত্র সংস্থা, জনগণের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ও তা কার্যকর করার সম্পূর্ণ এখতিয়ার তার। অন্যদিকে জনগণের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা কাযকর করার ব্যাপারে সাহায্য ও সুপরামর্শ দান হবে উপদেষ্টা কমিটির কাজ। তাই এই উপদেষ্টা কমিটি গঠনের উদ্যেগ গ্রহণ দ্বারা গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার মুক্তিযুদ্ধকে জোরদার করার কাজে একটি বলিষ্ঠ ও সমপোযগী পদক্ষেপ নিয়েছেন বলা চলে। এই ব্যবস্থার ফলে বাংলাদেশের সকল এলাকার স্বাধীনতা এবং হানাদার দস্যুদের চূড়ান্ত পরাজয়ের দিনটি অবশ্যই তরান্বিত হবে।

তারা জল্লাদের নির্দেশ মানলেন না

লন্ডনস্থ পাকিস্তান হাই কমিশনের বাঙালী কর্মচারীগণ ইসলামাবাদের জরুরি নির্দেশ অমান্য করেছেন, তারা এখনও উর্দ্ধতন কর্মচারীর কাছে তাদের পাসপোর্ট জমা দেননি।

      হাই কমিশন এই সব বিদ্রোহী কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তা এখনও জানা যায়নি।

      বৈদাশিক দূতাবাসে কর্মরত বাঙালী কর্মচারীদের বিদ্রোহী আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই ইসলামাবাদ থেকে কর্মচারীদের পাসপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য জরুরি নির্দেশ পাঠানো হয়েছিল। প্রসঙ্গত: উল্লেখযোগ্য বিশ্বের সর্বত্রই বাঙালী কূটনীতিবিদগণ জল্লাদ সরকারের সঙ্গে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করছেন এবং বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন। এ কারনেই বিভিন্ন দূতাবাসে কর্মরত বাঙালীর আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য পাসপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

মস্কোতে ইয়াহিয়ার দালালী চলল না

     জল্লাদ ইয়াহিয়ার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এম. এম. আহমদ যেমন মে-জুনে লন্ডন-ওয়াশিংটন প্যারিস-বন প্রভৃতি স্থানে বহু দৌড়াদৌড়ির পর খালি হাতে ফিরে এসেছিল তেমনি ইয়াহিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা-কাম-পররাষ্ট্র সেক্রেটারী সুলতান মোহাম্মদ খানও মস্কো থেকে খালি হাতে ফিরে এসেছেন।

পূর্ব নির্ধারিত তারিাখ মোতাবেক সুলতান মোহাম্মদ খানের আগষ্ট মাসে মস্কো যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইত্যবসরে ভারত-সোভিয়েট মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় নতুন ফন্দি-ফিকির আঁটার জন্য তার সফরসূচী স্থগিত রাখা হয়। পরে গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর সুলতান খান বহু ফন্দি-ফকির ও আশা ভরসা নিয়ে মস্কো গমন করেন।

      জন্মলগ্ন থেকে সাবেক পাকিস্তানের পররাষ্ট্র নীতির লক্ষ্য ছিল দু’টো। তার মধ্যে একটা ছিল ভারত-বিদ্বেষ এবং অপরটা ছিল সুবিধাবাদ বা রাজনৈতিক ব্ল্যাক মেইলিং।

      অতীতে পাকিস্তান বহুবার এই সুবিধাবাদের আশ্রয় নিয়েছে। চীন-রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কম্যুনিজম ঠেকানোর যুগে সে দু’হাতে মার্কিণ সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য লুটেছে। আবার মার্কিণ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দুই চারটি কথা বলে চীন-রাশিয়ার কাছ থেকে যখন সুবিধা আদায়ের সুযোগ হয়েছে পাকিস্তান তাও পুরুদমে কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু বাস্তঘুঘু এবার ধরা পড়ে গেছে। বাংলাদেশের সমস্যার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে গরম গরম কথা এমন কি সর্বাত্মক যুদ্ধের হুমকী দিয়ে সুলতান সাহেব গিয়েছিলেন মস্কোতে। উদ্দেশ্য ছিল যদি কিছু সুযোগ সুবিধ আদায় করা যায় পাকিস্তানের বিপযস্ত সামরিক চাকন্ড ধ্বংস প্রায় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য কিছু আনা যায় কিন্তু তা হল না। সোভিয়েত ইউনিয়নের তরফ থেকে নাকি পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর দু:সাহস দেখানোর ব্যাপারে কঠোর ভাবে হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়েছে। তার ব্যাপারটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুলতান সাহেবের মনিব জল্লাদ ইয়াহিয়াকে জানিয়ে দেওয়ার জন্য সুলতান মোহাম্মদকে অনুরোধ করেছেন। তাই অর্ধেক পথে সফর শেষ করে স্বদেশে ফিরতে হয়েছে।

      প্রকাশ, জনাব সুলতান মোহাম্মদ পোভিয়েট পররাষ্ট্র মন্ত্রী আঁদ্রে গ্রোমিকো এবং সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী মি: ফিরুবিনেব এর সাথে আলোচনার সময় বাংলাদেশের সমস্যাকে ভারতীয় ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তেরই ফলশ্রুতি বলে বুঝানোর জন্য বহু চেষ্টা করেছেন। তাছাড়া তিনি বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের জন্য তার প্রভু জল্লাদ ইয়াহিয়া যে সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছেন ও নিতে যাচ্ছেন তার যথার্থতাও সোভিয়েট নেতৃবৃন্দকে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাতে সোভিয়েট নেতাদের মন ততটুকু গলেনি। তারা নাকি সুলতান সাহেবকে স্টষ্ট বলে দিয়েছেন যে ঔ সব চাতুরীপূর্ণ ব্যবস্থায় বাংলাদেশ সমস্যার সমাধান হবে না। তারা কথাটা পরিস্কার ভাষায় না বললেও সুলতান সাহেবকে একথাই বুঝাতে চেয়েওেছন যে বাংলাদেশ সমস্যার সমাধান করতে হলে শেখ মুজিবর রহমান ও পণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শরণাপন্ন তাদেরকে হতে হবে। সোভিয়েট নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানী প্রতিনিধির কথাবার্তায় এত অসুন্তষ্ট হয়েছেন যে বিদেশী প্রতিনিধিদের ক্রেমলিনে অভ্যর্থনা জ্ঞাপনের যে রেওয়াজ আছে তা থেকেও সুলতান মোহাম্মদকে বঞ্চিত করেছেন।

রণাঙ্গনেঃ

গত ৮ই সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম আদালত ভবনের দোতলার ওপর মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যোদ্ধাদের একটি টাইম বোমা বিস্ফোরণ ঘটলো দুই ব্যক্তি নিহত ও ১৭জন গুরুতররুপে আহত হয়। এদের মধ্যে ৩ জনের অবস্থা মরণাপন্ন।

      একটি বিদেশী সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছেন যে, গেরিলা যোদ্ধারা উক্ত টাইম বোমা একটি ছাতার ভেতর লুকিয়ে রাখেন।

      এদিকে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশের গেরিলা বাহিনী গত দু’সপ্তাহে যশোর জেলার শ্রীপুর থানার বিস্তৃীর্ণ এলাকা শত্রু কবল মুক্ত করেছেন

ফরিদপুর থানা আক্রমণ

      গত ৫ই সেপ্টেম্বর ফরিদপুর জেলার নারীয়া থানার ওপর আক্রমণ চালিয়ে মুক্তি যোদ্ধারা একজন পাকিস্তানী পুলিশ অফিসারসহ ৩জন পুলিশ এবং ১৬ জন রাজাকারকে হত্যা করেন।

 

ট্রেন ধ্বংস

ফেনীর কাছে মুহুরীগঞ্জ রেল স্টেশনে গেরিলা যোদ্ধারা একটি ট্রেন উড়িয়ে দেয়। ফলে ট্রেনের ড্রাইভার সহ বহু সৈন্য খতম হয়। অন্যদিকে ময়মনসিংহ অঞ্চলে গেরিলা কায়দায় মুক্তি যোদ্ধারা হানাদার সৈন্যদের একেবারে নাজেহাল করে ছাড়ছে। টাঙ্গাইলে গেরিলার দুটি সৈন্য বোঝাই স্টীমার পুড়িয়ে দেন। এতে বেশ কিছু পাক সেনা খতম হয়েছে।

ভূট্টো গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ দেবেন

প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, পাকিস্তানের শোষক চক্রের খেলাটা বেশ জমে উঠেছে। এই শোষক চক্রের অন্যতম লারকানার যুবরাজ জুলফিকার আলী ভুট্টো নাকি বাংলাদেশে নরমেধযজ্ঞ সংঘটনে তার দোসর জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানকে এই মর্মে হুঁসিয়ার করে দিয়েছেন যে অবিলম্বে গণ প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা না দিলে, তিনি কোন কিছুতে আর রাজী হবেন না। জনাব ভুট্টো গণতন্ত্রের জন্য জান কোরবান করতেও দ্বিধা করবেন না বলে জানয়েছেন। মি: জিন্নার মৃত্যু বার্ষিকীতে তার মাজারে বক্তৃতা প্রসঙ্গে জনাব ভুট্টো এসব মন্তব্য করেন।

      ইতিপূর্বে জনাব ভূট্টো পশ্চিম পাকিস্তানে শাসন ব্যবস্থা বেসামরিকরণের নামে ভাওতাবাজী তার দল স্বীকার করে নেবে না বলে ঘোষণা করেছেন। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের ব্যাপারে তিনি আধুনিক যুগের মীরজাফর ডা: মালিকের মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের সৎচরিত্রের সার্টিফিকেট প্রাপ্ত সমদ্যদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দিয়ে বলেছেন: জাতীয় পরিষদের শতকরা ২৫/৩০ জন সদস্যকে পাওয়া গেলেও তাদের দায়িত্ব দেওয়া উচিৎ এবং জাতির বৃহত্তম স্বার্থে কাজ করতে উৎসাহিত করা উচিৎ।

জনাব জুলফিকার আলী ভূট্টোর এসব কথাবার্ত্তার ভিত্তিতে পশ্চিম পাকিস্তানের ও বহি:বিশ্বের এ ধারণা জন্মেছে যে ভূট্টো ইয়াহিয়ার মধ্যে কনফ্রন্টেশন অত্যাসন্ন হয়ে উঠছে। তাদের কনফ্রন্টেশন অত্যাসন্ন কিনা তা নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন প্রয়োজন করে না, কেননা ভূট্টো, ইয়াহিয়া, টিক্ক ও হামিদের প্রত্যেকই বাঙ্গালীও বাংলাদেশের সমান দুষমণ।

আর ভূট্টো সাহেবের গণতন্ত্রও এক আজব ধরনের গণতন্ত্র। তিনি তথকথিত পাকিস্তানের পশ্চিম অংশের জন্য চান এক রকমের গণতন্ত্র আর অপর অংশের জন্য চান ভিন্ন রকমের গণতন্ত্র। তাকে জিজ্ঞেস করা যায়, পশ্চিমাঞ্চলে আপনার দলের হাতে ক্ষমতা না দিলে গণতন্ত্র যখন হয় না তখন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা না দিলে কি করে গণতন্ত্র হয়? গায়ের জোরে, সামরিক শক্তির জোরে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের  অবিসম্বাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে তার মাতৃভূমি থেকে দেড় সহস্র মাইল দূরে সামরিক ছাউনিতে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটা কি অগণতান্ত্রিক নয়। গায়ের জোরে কলমের এক খোঁচায় জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের ২৭৩ জন নির্বাচিত সদস্যপদ খারিজ করে দেওয়া কি গণতন্ত্র সম্মত?

বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের এত কিছু কান্ড-কীর্তির মধ্যেও যখন জনাব ভূট্টো অগণতান্ত্রিকতার কিছু দেখতে পাননি, তখন তিনি কি ধরণের গণতন্ত্র চান তা বুঝতে কারো বাকী নাই। তিনি যে স্বদেশের জন্য এক ধরণের গণতন্ত্র, আর বাংলাদেশের জন্য ভিন্ন ধরণের গণতন্ত্র চান প্রতিটি বাঙালী আজ বুঝতে পারে।

একটি যুদ্ধঃ বহু ইতিহাস

যে কোন মৃত্যু সংবাদে আমি খুব সহজেই অভিভূত হয়ে পড়ি। একজন অধ্যাপক যখন দু:খময় স্মৃতিচারণ করছিলেন, স্বাভাবিক ভাবেই আমার খুব খারাপ লাগছিল। চা শেষ করে তিনি চুপচাপ ধূম পান করেছিলেন। হঠাৎ নৈ:শব্দ্য আক্রান্ত চা স্টলটিতে যেন ভূমিকম্প শুরু হল। হুড়মুড় করে ঢুকল কয়েকটি যুবক। যোয়ান তাগড়া চেহার। কারনে অকারনে হো হো হাসি আর ঝর্ণার মত স্বত:স্ফুর্ত কথার তোড়ে আমরাও ভেসে গেলাম। আমার মত অধ্যাপকও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ওদের দেখছিলেন। ভেতরে ভেতরে এইা দৃশ্য দেখার জন্যইতো আমার তৃর্ষ্ণার্থ চোখের এত ব্যাকুলতা চা শেষ করে ওদের একজন হঠাৎ গান ধরলো, প্রথমে গুন গুন করে পরে জোরে এবং আরো পরে কোরাসে সুরে বেসুরে গাওয়া গানটি এতদিনে আমার কাছে সত্যিকারের অর্থ নিয়ে হাজির হল- আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। প্রবল প্রাণাবেগে তন্ময় অধ্যাপক জুতো দিয়ে তাল দিচ্ছেন।

ওদের আড্ডায় গিয়ে বসে ওদের কথাই জানতে চাইছিলাম। এমন সময় একটি সুদর্শন যুবক আমার সামনে এসে দাঁড়াল সালাম জানিয়ে মৃদু হেসে বলল চিনতে পারলেন? তাই তো? জি তুমি এখানে? বস, বস। তাকে পাশে বসাই আমাদেরই পাড়ার ছেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক-ফাটক করে বেড়াত। এবার এম, এ ফাইনাল পরীক্ষা দেবার কথা ছিল দেয়া হয়নি তার আগেই সাতক্ষীরায় আপত্তিকর বক্তৃতার জন্য জেলে গিয়েছিল। আগে ভাল ছাত্র ছিল, রাজনীতিতে মোটেই উৎসাহ ছিলনা হঠাৎ কী হল, ঊনসত্তরের শেষ দিক থেকেই দেখতাম পাড়ার রাজনৈতিক ক্রিয়াকর্মের সঙ্গী (এই নামটি আমার দেয়া) ছিল সামনে বললাম দশই জানুয়ারিতে সাতক্ষীরায় যে এ্যারেষ্ট হয়েছিলে তার কারন কি? উত্তেজিতভাবে সে বলে উঠল, ওদের কারণের অভাব হয় কখনো? মার্শাল ল অর্ডিন্যান্সের ৬০,১৬ ধারায় অভিযুক্ত হলাম। বেআইনী জনসমাবেশ, সংহতি বিরাধী বক্তৃতা জাতিগত বিদ্বেষ প্রচার, উত্তেজনা সৃষ্টি এসব কারনেই বন্দী করল। পাঠিয়ে দিল যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে। শুনলাম, কিছুদিন আগেই ঐ কামরায় মনি সিং ছিলেন বিচারের প্রহসনও হল না জেলে আছি তো জেলেই আছি।

কোনের আড্ডাটি রীতিমত জমে উঠেছে। এখন হচ্ছে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ধন ধ্যান্যে পুষ্পে ভরা। আমি সগীরকে বললাম এখানে এলে কী করে? ওর কারা। বিনয়ী সগীর দৃঢ়তার সঙ্গে বলল, প্রথম প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই দিচ্ছি কিন্তু দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর পাবেন না এবং আপনাকে অনুরোধ এই ধরণের প্রশ্ন আমাকে তো বটেই আর কাউকেও করবেন না। অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলাম লজ্জাও পেয়েছিলাম বললাম বল তোমার কথাই শুনি। সগীর বলছে যশোর জেলে আছি কিন্তু কার জেল? কার পুলিশ? শুধু মাত্র বাইরে যাওয়া যেতোনা আর ট্রানজিস্টারের অনুমতি ছিলনা। কারারক্ষী থেকে শুরু করে বড় বড় পুলিশ কর্মচারী পর্যন্ত সবাই ছিলেন আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। মার্চ মাসের অসহযোগ আন্দোলন তখন পুরোদমে চলছে। আমরা আর কী করি? কয়েদিদের দ্বারা পরিচালিত কারখানার কারিগর দিয়ে ভূট্টো ইয়াহিয়ার কুশপুত্তলিকা বানানো হল। অত্যন্ত উত্তেজনার মধ্যে পোড়ানো হল। আমাদের কাতর অনুরোধ জনৈক উচ্চপদস্থ কর্মচারী বঙ্গবন্ধু বক্তৃতার টেপ শোনালেন। সে রাতে ঘুম এলো অনেক রাতে কী হবে হঠাৎ একটি খবরের কাগজে দেখলাম জয়বাংলার পতাকা। ভাবতে পারবেন না কী রকম উত্তেজিত হয়ে উঠেছিলাম আমরা। আমাদের পতাকাটা বানাতে হবে দেখতে হবে কেমন তার রুপ আমাদের সঙ্গে ছিলেন শ্রমিক নেতা আশরক হোসেন। তারও কী উৎসাহ সাদা কাগজ যোগাড় করা হল কিন্তু রঙ কই ছুটলাম তাঁতীদের কারাখানায় সেখানে আছেন বুড়ো মজিদ মিয়া, মিথ্যা মামলার আসামী, সব শুনে মিথ্যা মামলার আসামী সব শুনে মহখুশী খাড়াও মিয়ারা আইনা দিতাছি। তাক থেকে এ ডিব্বা খুলছেন ও ডিব্বা খুলছেন শেষে মুখটা কালো করে বললেন না কপাল খারাপ পেলাম না আমার অবস্থাটা কল্পনা করুন। কাঁদো কাঁদো স্বরে বললাম একটা উপায় তার কর চাচা। হ্যালে, একটু নানা রঙের ডিব্বা নিয়ে বসে গেলেন মজিদ মিয়া। শেষে হলুদ আর নীল রঙ দিয়ে বের করে ফেললেন সবুজ আমিতো লাফিয়ে উঠলাম জড়িয়ে ধরলাম তাকে। পতাকা দেখে আশরফ ভাই বললেন সবুজটা আরো গাঢ় হলে ভাল হত। কী করে এখানে এলে তাতো বলছ না সগীর। আড্ডার ওপাশ থেকে চ্যাঙ্গা ছেলেটা ওঠে ঐ এক গল্প কয় হাজার বার বলবিরে সগীর কানে তালা পাইরা গেল যে বেচারা সগীর লাল হয়ে ওঠে বল, বল, শুনতে ভালই লাগছে। অধ্যাপক বললেন সবটাই বল, আগেরটা না শুনলে পরেরটার স্বাদ পাওয়া যাবেনা। ঘড়ি দেখে সগীর বলে, তাহলে ভাই সংক্ষেপে বলি ২৬শে মার্চ কারারক্ষী এসে দু:সংবাদ শোনালে। আলোচনা ব্যর্থ হবে, কেন না, নেতার কথাই ঠিক। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। বিশ্বাস ঘাতক ইয়াহিয়া অস্ত্রোর ভায়ায় এক তরফা আলোচনা শুরু করেছে। হারামী, এবার আমরাও জবাব দেব। পয়লা এপিল জেলের তালা ভেঙে আশি দিন পরে প্রথম বাংলার মুখ দেখলাম। অন্য সময় হলে ফুলের মালার ভারে নুয়ে পড়তাম। কার্তুজের বেলট আর রাইফেলের ভারে এবার নুয়ে পড়েছি। কেউ সম্বর্ধনা জানাতে আসেনি। সম-বয়সী এক যুবক ঐ যে, কোনের ছেলেটা কাছে এসে বলল চল, চললাম মাথার উপর দিয়ে দুটো বম্বার উড়ে গেল। ই, পি, আর বাহিনী সার্কিট হাউজ ছেড়ে দিয়ে কারবালায় পজিশন নিয়েছে। আমিও ভিড়ে গেলাম। আড্ডা থেকে হুঙ্কার এলো আর গ্যাঁজাইসনা সগীর ওঠ, আইজাকাও হ্যান্ড গ্র্যানেড খাইতে অইব। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই তাড়াতাড়ি বলে উঠল সগীর, আজকেও শুধু আলু ভর্তা দিয়ে খেতে হবে। অধ্যাপক ওদের চায়ের দাম দিয়ে দিলেন। কয়েক প্যাকেট সিগারেট জোর করে ব্যাগে ঢুকিয়ে দিলেন। আমার কানে কানে বললেন, ওরা সিগারেটও তিন ভাগ করে খায় বড় খারাপ লাগে। আমি হেসে বললাম শিক্ষক হয়ে ছাত্রদেরকে সিগারেট কিনে দিলেন?

ভাওতা মাত্র

গত ৪ঠা ও ৫ই সেপ্টেম্বর হেলসেঙ্কিতে অনুষ্ঠিত বিশ শান্তি পরিষদের এক সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে বাংলাদেশের জন্য জল্লাদ ইয়াহিয়ার সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শনের ঘোষণাকে পুরাপুরি একটা ভাওতা বলে অভিহিত করা হয়। প্রাভদার মতে-সোভিয়েট কম্যুনিষ্ট পার্টির মূখপত্র প্রাভদার ৬ই সেপ্টেম্বরের সংখ্যায় এই মর্মে অভিমত প্রকাশ করা হয় যে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা সত্বেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হবে না।

আমাদের কথা তাই ইয়াহিয়ার সৈন্যরা ফুল ছোড়েনি

বিখ্যাত ফরাসী দৈনিক ল্য ফিগারো-র এক সাংবাদিকের সাথে সাক্ষাতে পাকিস্তানের সমর নায়ক ইয়াহিয়া নানা কথা বলেছে। যার অধিকাংশই অশোভন ও অসংগতিপূর্ণ। ইয়াহিয়া এই সাংবাদিক সাক্ষাৎকারে কটুক্তি করেছে বাঙলাদেশের প্রাণ প্রিয় নেতা শেখ মুজিব সম্পর্কে সাফাই গাইতে চেয়েছে, বাংলাদেশের নর হত্যার ইয়াহিয়া বলেছে:

“আমার সৈন্যরা সুশিক্ষিত পেশাদার সৈন্য। আমি নিজেও সেনাবাহিনীতে শিক্ষা লাভ করেছি। আমার সৈন্যরা যখন হত্যা করে তখন ভাল ভাবেই করে। তবে আড়াই লক্ষ লোক মারা গিয়েছে বলা বাড়িয়ে বলা। কিন্তু ঢাকায় যা ঘটেছে সেটা একটা ফুটবল খেলা নয়। যুদ্ধের সময় প্রতিপক্ষের প্রতি কেউ ফুল ছোড়েনা।

ঢাকায় ইয়াহিয়া ফোজ ফুল ছোড়েনি। নিরস্ত্র জনসাধারণের উপর অটোমেটিক রাইফেল, ভারি মেশিনগান, মর্টার, হাউইজার কামান ও ট্যাঙ্ক নিয়ে আক্রমণ চালিয়েছিল। বস্তির ঘরে ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল ফ্লেম থ্রোয়ার থেকে জলন্ত রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়ে একজন বিদেশী সাংবাদিক লিখেছেন ২৫শে মার্চ ও তার কয়েকদিন পরের ঢাকা শহরে সামরিক তৎপরতা সম্পর্কে: আমরা ঢাকার বিখ্যাত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল এর জানালা দিয়ে দেখতে পেলাম সমবেত জনতার উপর ভারি মেশিন গান দিয়ে গুলি চালাতে। যখন এভাবে গুলি ছোড়া হচ্ছিল, তখন প্রায় ২০০গজ দূরে, জন পনের বাঙালী যবক, সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে ধ্বনি দিতে থাকে। তারা ছিল সম্পূর্ণ খালি হাতে কিন্তু তাদেরও মেসিনগানের গুলিতে চিরতরে নীরব করে দেওয়া হল।…ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক থেকে দেখা গেল পাক খেয়ে ধুম-কুন্ডুলী উঠতে চোখে পড়ল হাউইজার কামানের মুখ থেকে ঠিকরে পড়া আলোর ঝলক। ১০৫ মিলিমিটার হাউজার কামান ব্যবহার করা হচ্ছিল।….পুনরায় ঢাকা শহরের দিক থেকে আসছিল ভারি কামানের আওয়াজ। সারা আকাশ লাল হয়ে উঠল আগুনের প্রদীপ্ত শিখায়।..ভোরে ঘুম ভাঙ্গল ট্যাঙ্কের শব্দে। দেখতে পেলাম ঢাকা এয়ার পোর্টের রাস্তা ধরে শব্দকরে চলেছে ছয়টি চীনা টি-৫৪ ট্যাঙ্ক।–পশ্চিম পাকিস্তানী ফৌজরা নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। তার যে দিক থেকে সামান্য গোলযোগের আওয়াজ পেয়েছে, সে দিকেই ছুড়েছে গুলি, কোন ভাবনা চিন্তা না করে আমাদের সকলকে রাখা হয়েছিল হোটেলে আটকে যখন কয়েকজন বিদেশী সাংবাদিক শহরের অবস্থা দেখবার জন্য বাইরে যাবার অনুমতি চাইলেন তখন একজন পাক সামরিক কর্মচারী ধমকে ওঠে ভিতরে থাক। আমরা যদি আমাদের নিজেদের লোক গুলি করতে পারি, তবে তোমাদেরও পারি গুলি করে মাতে।…(নিউজ উইক, ৫ই এপ্রিল) এমনি ছিল ইয়াহিয়ার সুশিক্ষিত বাহিনীর কার্য্যকলাপ কিন্তু বাঙালীদের হত্যা করে নীরব করে দেওয়া যায়নি। বরং উল্টো ফলই ফলেছে। তারাও ফুল ছুড়ছে না তবে তারা নিরস্ত্র মানুষকে মারছে না। তাদের গুলির আঘাতে বাঙলার মাঠে প্রান্তরে মারা পড়ছে খান সেনা। যে খান সেনারা একদিন নিরস্ত্র মানুষের উপর নির্বিচারে চালিয়েছিল গুলি, দিখেয়েছিল তাদের বীরত্ব আজ তারা সমরাস্ত্র ফেলে পালাচ্ছে প্রাণ বাঁচাবার দায়ে। মুক্তি বাহিনীর আক্রমণ ভয়ে তারা এখন আতঙ্কিত ভীত সস্ত্রস্ত।

ইয়াহিয়া বাহিনী সুশিক্ষিত কিন্তু তারা শিক্ষা লাভ করেছে সনাতন ধারায় কিন্তু বাঙলাদেশ এখন সনাতন ধারায় যুদ্ধ হচ্ছে না। এ  ‍যুদ্ধ দুটি ‍পেশাদার বাহিনীর মধ্যে মুক্ত রণঙ্গনের যুদ্ধ নয় এই যুদ্ধ একটি গণ সমর্থনহীন দখলদার বাহিনীর সাথে একটি জাতীয় সমগ্রীক যুদ্ধ। যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে আজ বাঙলাদেশের  সর্বত্র। এই ব্যাপক সর্বত্র বিস্তারিত যুদ্ধে লড়ায়ের শিক্ষা ও ক্ষমতা নেই খান সেনাদের।

সমরাধিপতি ইয়াহিয়া, বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে বলেছে বাঙলাদেশে যুদ্ধ চলেছে কেবল সীমান্তবর্তী এলাকায় তার একথা সর্বইব মিথ্যা কিন্তু তর্কের খাতিরে তার কথাকে যদি সত্যি বলেও ধরা যায় তবুও কি এই যুদ্ধের ব্যাপকতা কম বাংলাদেশের তিনদিকে সীমান্ত এই সীমান্ত রেখা৩,০০০ মাইলের বেশী। এই সুদীর্ঘ প্রান্ত অঞ্চলের কয়টি ভূখন্ডে দীর্ঘ লড়াই চালিয়ে যাবার ক্ষমতা রাখে ইয়াহিয়া বাহিনী? বিশেষ করে প্রতিদিনই যখন মারা যাচ্ছে বাঙলার পথে প্রান্তরে খান সেনা। মার্কিন সাপ্তাহিক পত্রিকা টাইম এ এক মাস আগে (টাইম, আগস্ট ২ ০ বাঙলাদেশের সম্পর্কে লেখা সাড়ে বারো হাজার পাক সেনা মৃত ও আহত হয়ে অকেজো হয়ে গিয়েছে। তার পরেও মারা পড়েছে অনেক পাক সেনা। সমরাধিপতি ইয়াহিয়া খান আজ তাই বলতে আরম্ভ করেছে বে-সামাল কথা, বিদেশী সাংবাদিকদের কাছে। সমর শক্তির বড়াই করেছে ইয়াহিয়া বিদেশী সাংবাদিকের কাছে কিন্তু বিশ্ব আজ বুঝে ফেলেছে ইয়াহিয়ার পায়ের তলায় মাটি নেই। ইয়াহিয়ার সামরিক শক্তির দৌড় আজ স্পষ্ট হয়ে উঠছে বাঙালীদেরও কাছে গুলি, ফুল কোন কিছু ছুড়েই আর জয় করা যাবে না বাঙালী জাতিকে।

জল্লদরা ত্রাণ সামগ্রী যুদ্ধের কাজে লাগাচ্ছে

পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক শাসক গোষ্ঠি ইউনিসেফ এবং জাতিসংঘের অপরাপর ত্রাণ-প্রতিষ্ঠান সমূহের যাবতীয় গাড়ী এবং অন্যান্য যানবাহন যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার লন্ডনস্থ মিশনের মাধ্যমে জাতিসংঘকে একথা জানিয়ে দিয়েছে। জাতিসংঘের সাহায্য সংস্থার ইউনিসেফ-এর একটি জীপে টিকা খানকে দেখা গেছে।  ১৯৭০ সালের ভয়াবহ বন্যা ও ঘূর্ণীঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের সাহয্যর জন্য বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র বিপন্ন মানবতার সেবায় যে সব ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছিল, সেগুলোও সামরিক শাসকেরা যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করছে। দ্রুত রিলিফ প্রেরণের জন্য যাতায়তের সুবিধার্থে নরওয়ে এবং স্কান্ডিনেভিয়ার অন্য্যন্য রাষ্ট্র যে সব রবারের নৌকা, দ্রুতগামী লঞ্চ পাঠিয়েছিল, সেগুলোও ঐ একই কার্যে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি খুলনার নিকটে একটি সংঘর্ষে মুক্তিবাহিনী পাক সেনা বাহিনীর কাছ থেকে একটি গানবোট দখল করেন। পরে মুক্তি বাহিনী দেখে আশ্চর্য হন যে ওটা ঘূর্নীদুর্গতদের সাহয্য বিতরণের কাজে ব্যবহারের জন্য নরওয়ের প্রেরিত নৌযানগুলো অন্যতম। শুধু যানবাহনই নয় ঘূর্নীঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ বাঙালীর জন্য প্রেরিত খাদ্য দ্রব্য এবং কাপড় চোপড়ও পাক সেনা বাহিনী নিজেরাই ব্যবহার করছে। সম্প্রতি পশ্চিম রনাঙ্গনে নিহত শত্রুসেনাদের কাছে টিনে ভর্তি খাবার পাওয়া গেছে। টিনের উপরের ছাপ এবং লেখা থেকে দেখা যায় যে, এগুলোও বন্যা ও ঘূর্নীঝড় দুর্গতদের রিলিফের জন্য  প্রেরিত জিনিস। এমন কি, শরণার্থাদের জন্য প্রেরিত খাদ্য দ্রব্য ও হানাদার বাহিনীর রেশন দ্রব্যে  পরিণত হয়েছে। জানা গেছে, ভারতসহ ইউরোপের তিনটি রাষ্ট্র জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল উত্থান্টকে পাকিস্তানে জাতিসংঘের সাহায্য বন্ধ করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছে।