You dont have javascript enabled! Please enable it!

যুক্ত উপদেষ্টা কমিটি মুক্তি যােদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছে
আসাম ও মেঘালয় শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের পর ভূপেশ গুপ্তের মন্তব্য
(স্টাফ রিপাের্টার)

কলকাতা, ৯ নভেম্বর মুক্তির সংগ্রামকে পরিচালিত করার জন্য বাঙলাদেশ সরকারের যুক্ত উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হওয়ায় বাঙলাদেশের মুক্তিযােদ্ধাদের মধ্যে এবং শরণার্থী শিবিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম সম্পাদক শ্রীভূপেশ গুপ্ত আজ এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন। আসাম ও মেঘালয়ের বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও বাঙলাদেশের মুক্তাঞ্চলে মুক্তিযােদ্ধাদের কয়েকটি শিবির পরিদর্শন করে শ্রীভূপেশ গুপ্ত আজ কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন। শ্রীগুপ্ত বলেন মুক্তিযুদ্ধে যােগ দিতে চায় এমন হাজার হাজার যুবক সামরিক প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র চাচ্ছেন। শ্রীগুপ্ত মুক্তিযোেদ্ধাদের সক্রিয়তার সাহায্যের জন্য বলেন এবং বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিতে আর বিলম্ব করা উচিত নয় বলে অভিমত প্রকাশ করেন। শ্রী গুপ্ত জানান বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কাজের জন্য আসাম, মেঘালয় অঞ্চলে মার্কিন লবী” সক্রিয় হয়েছে।
শ্রী গুপ্ত বাংলাদেশ মুক্তাঞ্চলে আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, বাঙলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী এবং মুক্তি বাহিনীর সৈনিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রত্যেকেরই মনােভাব সৃদৃঢ় এবং তাদের চূড়ান্ত জয় সম্পর্কে সুনিশ্চিত শ্রী গুপ্ত জানান বাঙলাদেশ সরকারের যুক্ত উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হওয়ায় প্রত্যেকেই আনন্দ প্রকাশ করেছেন বলে তিনি জানান।
শরণার্থী শিবিরগুলির অবস্থা
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত আসাম, মেঘালয় তুরা অঞ্চলে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরগুলি ঘুরে দেখেছেন।
বহুক্ষেত্রে এই রেশন অপ্রতুল। শীতের জামাকাপড়ের অভাব। শিবিরগুলিতে বিশেষ করে পিতরােগের পাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। শ্রী গুপ্ত জানান যে, তিনি বহু শরণার্থীকে এখনাে এক প্রকার খােলা আকাশের নীচে দিনযাপন করতে দেখেছেন। শিবিরগুলির মধ্যে বিশেষ করে বাগমারা শিবিরের অবস্থা খুবই দুর্দশাগ্রস্ত। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ত্রাণ বিভাগের উপমন্ত্রী এবং লােকসভা সদস্যদের একটি দল লােকসভা সদস্যদের একটি দল আসাম মেঘালয়ের বিভিন্ন শিবির পরিদর্শন করেছেন, শ্রী গুপ্ত তাঁদের সঙ্গে এই সমস্ত সমস্যা নিয়ে আলােচনা করেছেন বলে জানান।
শিবিরগুলিতে বহু অফিসার ভালভাবে কাজ করলেও কিন্তু অফিসারের নামে স্থানীয় মানুষ বহু অভিযােগ করেছে বলে শ্রী গুপ্ত জানান। রেশন অনুমােদন হওয়া এবং নাম রেজেন্ত্রী করা সত্ত্বেও শরণার্থীদের অনেকে রেশন পাচ্ছে না। মুক্তি আন্দোলনের সংগঠকদের কাজে ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে শ্রী গুপ্তের কাছে অভিযােগ এসেছে।
শিবিরগুলিতে যে সমস্ত ছেলে মেয়েরা আছে তাদের পড়াশুনা বন্ধ আছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে কয়েকটি স্কুল চালু হয়েছে। শ্রী গুপ্ত জানান, এই বিষয়ে সামান্য সরকারী সাহায্য করলে স্কুল এমন অনেক শিক্ষক আছেন যারা এটি চালু করতে পারেন।
আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, বাঙলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, ছাত্র ও কৃষক সংগঠনের সমর্থকেরা শিবিরের কাজে সরকারকে সহযােগিতা করতে রাজী আছেন বলে শ্রী গুপ্ত উল্লেখ করেন। এত সমস্যা সত্ত্বেও শিবিরবাসীদের মনােভাব দৃঢ় আছে এবং মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত সাফল্য তারা নিশ্চিত বলে শ্রী গুপ্ত জানিয়েছেন।
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত বলেন আসাম, মেঘালয়, তুরা অঞ্চলে বড় সমস্যা হল খাদ্যের। বর্তমান অবস্থায় এখনই সেটা সংগ্রহের প্রয়ােজন বলে তিনি উল্লেখ করেন। শ্রী গুপ্ত জানান শরণার্থীদের জন্য এবং অন্যান্য জরুরী প্রয়ােজনে আসাম ও মেঘালয়ের রাজ্য সরকার প্রয়ােজনীয় ট্রাক পাচ্ছেন না।
সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত আসাম ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী এবং তুরার কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শরণার্থী শিবিরগুলির অবস্থা ও বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে আলােচনা করেছেন।

শীতবস্ত্র
শ্রী ভূপেশ গুপ্ত আরাে বলেন, যে এই অঞ্চলের শরণার্থী শিবির গুলিতে শরণার্থীগণ এবং মুক্তিবাহিনীর সৈনিকেরা শীতবস্ত্রের অভাবে ভয়ানক কষ্ট পাচ্ছেন। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় পরিষদ এই অঞ্চলের জন্য কিছু গরম জামাকাপড় ক্রয় করে পাঠিয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সূত্র: কালান্তর, ১০.১১.১৯৭১

error: <b>Alert:</b> Due to Copyright Issues the Content is protected !!