মুসলিম লীগাররাই বাংলাদেশের’ গুপ্ত ঘাতক
পাকিস্তানি জঙ্গি শাসকের গুপ্তচর তথা পঞ্চম বাহিনী: বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক
দাঙ্গাহাঙ্গামা লাগাইয়া মুক্তিযুদ্ধকে খতম করিতে চায়: হুঁশিয়ার হুঁশিয়ার!!
আগরতলা ৭ এপ্রিল। পূর্ববাংলার ঘরে ঘরে মুক্তির লড়াই ছড়াইয়া পড়িয়াছে। অখ্যাত কুখ্যাত পল্লী অঞ্চলের পর্ণকুটিরের উপরেও আজ পাক জঙ্গি ফৌজ স্যাবার জেট বিমান যােগে অবিরাম মেশিনগান হইতে গুলি বর্ষণ করিতেছে। পর পর কয়েকটি স্থানে সম্মুখ সমরে পাক জঙ্গি বাহিনী মুক্তিফৌজের নিকট সমূলে নিহত অথবা আত্মসমর্পণে বাধ্য হওয়ায় এখন তাহারা যুদ্ধের ধারা আমূল পরিবর্তন করিয়াছে। বাংলাদেশের একমাত্র সৈন্য ঘাটি (ক্যান্টনমেন্ট) ছাড়া আর কোথাও পাক জঙ্গি বাহিনীর কোনাে পাত্তা নাই। ময়নামতী (কুমিল্লা), টঙ্গী (ঢাকা), চট্টগ্রাম,যশােহর প্রভৃতি কয়েকটি ক্যান্টনমেন্টেই এখন প্রকৃতপক্ষে পাক শাসকের সাম্রাজ্য সীমাবদ্ধ তথা অবরুদ্ধ অবস্থায় বিরাজ করিতেছে। শ্রীহট্ট, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, নােয়াখালী, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রভৃতি বিখ্যাত ও সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলােতে পাক জঙ্গি ফৌজের কোনাে আধিপত্য নাই। মুক্তিফৌজ এই সকল স্থানের পাক সেনাবাহিনীকে পর্যুদস্ত করিয়াছে এবং মুক্ত বাংলাদেশ’ বলিয়া ঘােষণা দিয়াছে। সৈন্য বিবরে (ক্যান্টনমেন্টে) অবরুদ্ধ হইয়াও জল্লাদ বাহিনী পুরাদমে জল্লাদি চালাইতেছে মুসলিম লীগারদের সহায়তায়। রামায়ণে বর্ণিত বিভীষণ যেমন লক্ষ্মনকে নিকুম্ভিলা যজ্ঞস্থলে লইয়া গিয়া ইন্দ্রজিতকে হত্যা করাইয়াছিল, মুসলিম লীগাররাও ঠিক ঐরকমভাবে পাক জঙ্গি ফৌজকে বাংলার আনাচে-কানাচে সুসংহত মুক্তিফৌজের ঘাঁটিসমূহের সন্ধান দিতেছে। পাকজঙ্গি ফৌজ এই সকল গুপ্ত ঘাতকের নির্দেশ মতাে সর্বত্র বিমান আক্রমণ চালাইয়া যাইতেছে। সমগ্র বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক দাবানল জ্বালাইবার উদ্দেশে এই সকল লীগার নেতৃস্থানীয় পাকজঙ্গি ফৌজ দ্বারা বহু প্রখ্যাত নেতৃস্থানীয় ও প্রতিপত্তি সম্পদশালী হিন্দুকে গ্রেপ্তার করিয়া নির্মমভাবে হত্যা করাইয়াছে। কুমিল্লায় যে তিন শতাধিক ব্যক্তি গ্রেপ্তার ও নিহত হইয়াছে, সবই মুসলিম লীগারদের কারসাজি। পূর্ব বাংলায় সাম্প্রদায়িক দাবানল জ্বালাইয়া উহার প্রতিক্রিয়া সমগ্র ভারতে ছড়াইবার জন্য মুসলিম লীগাররা এক বিরাট ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পাতিয়াছে বলিয়া পূর্ব বাংলার কূটনীতিবিদগণ হুঁশিয়ারী প্রচারে তৎপর হইয়াছেন। হুঁশিয়ারিতে আরও জানানাে হইয়াছে লীগার মাত্রেই পাক জঙ্গি শাসকের গুপ্তচর, বাংলাদেশের শত্রু, পঞ্চম বাহিনী।
সূত্র: ত্রিপুরা
৭ এপ্রিল, ১৯৭১
২৫ চৈত্র, ১৩৭৭