You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.16 | ৭ম নৌবহর আসলে কেন পাঠানো হয়েছিল? | ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ এর ‘নতুন বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদকীয় - সংগ্রামের নোটবুক

৭ম নৌবহর আসলে কেন পাঠানো হয়েছিল?

আমেরিকার অন্যতম ভয়াবহ যুদ্ধবহরের একটির নাম সপ্তম নৌবহর। নিরীহ নিরস্ত্র বাঙ্গালীর বিরুদ্ধে কেন তাদের আসতে হল? ৭ম নৌবহর সম্পর্কে যা বলা হয় তার পেছনে তাদের মূল কাজটা কি? ৭১ সালে কেন পাঠানো হয়েছিল? জানতে হলে নিচের লেখাটা পড়ুন। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ এর ‘নতুন বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদকীয়।

অনুভব করুন আবেগ, মেধা আর সাহসের সমন্বয়।

উনবিংশ শতাব্দীর গানবোট পলিসি (!).

.

বাংলাদেশ মুক্তির দ্বারপ্রান্তে। ঢাকা শহরকে শত্রু কবল মুক্ত করার জন্য তুমুল যুদ্ধ চলিতেছে। বাংলাদেশের মাটি হইতে হানাদার শত্রুকে নিশ্চিনহ করার এই চূড়ান্ত সংগ্রামের মুহূর্তে নিক্সন হুমকি দিয়াছে। আক্রমণকারী ইসলামাবাদের জঙ্গি চক্রকে যুদ্ধ বন্ধ করিতে বলার পরিবর্তে নিক্সন ভারতের বিরুদ্ধে হুংকার দিতেছে। জঙ্গি ইয়াহিয়ার বুট চুম্বনকারী মাও সে তুং এর চিন তার দোসর।

.

”বাংলাদেশে সরাসরি হস্তক্ষেপের জন্য নিক্সন সরকার বঙ্গোপসাগরে ৭ম নৌবহর পাঠাইয়া দিয়াছে। এইভাবে উনবিংশ শতাব্দীর গানবোট পলিসি আজ নিক্সন সরকার গ্রহণ করিয়াছে। ভারত কে ভয় দেখাইয়া ও হুমকি দিয়া বাংলাদেশের শত্রুর বিরুদ্ধে মিত্রশক্তির অভিযানকে বানচাল করাই ইহার লক্ষ্য। ইহা নিক্সন সাহেবদের পুরাতন খেলা। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে ইতালীয় সাধারণ নির্বাচনের সময় আটলান্টিক সাগরে ও ভূমধ্য সাগরে আমেরিকা নৌবহর পাঠিয়েছিল। লেবাননের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ১৯৫৩ সালে ৬ষ্ঠ নৌবহর হইতে বৈরুতে সৈন্য নামাইয়াছিল। দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক সরকারের পতন ঘটানর জন্য সেখানকার সমুদ্রে বার বার নৌবহর পাঠাইয়াছে। আজ স্বাধীন বাংলাদেশ কে আতুর ঘরে গলা টিপিয়া মারা তাহার অসাধ্য। তবুও ৭ম নৌবহর পাঠাইবার পিছনে তাহার আরও একটি উদ্যেশ্য আছে – তাহা হইল স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারকে দেখানো। এজন্যই বাংলাদেশের মার্কিন নাগরিকদের ‘নিরাপত্তা বিধান ও উদ্ধারের ‘ জন্য নৌবহর পাঠানো হইয়াছে বলিয়া সাফাই গাহিতেছে। সেখানে পাকিস্তানের করাচী প্রভৃতি শহরের মার্কিন নাগরিকদের বিমানে অপসারণ করা হইয়াছে , যেখানে বাংলাদেশে নৌবহর পাঠানো কেন? বাংলাদেশের ঢাকা হইতে অন্যান্য বিদেশী যাত্রীদের যেভাবে বিমানে অপসারণ করা হইয়াছে তাহারা সে পথে কেন গেলেন না? তাহাদের উদ্যেশ্য বিবিধ, হানাদার সৈন্যদের হত্যা অবশিষ্ট দের রক্ষা করার ‘পবিত্র’ দায়িত্বও তাহারা নিয়াছেন। তাই রাও ফরমান আলির আত্ম সমর্পনে ইয়াহিয়া প্রথমে অনুমতি দিয়াছিল কিন্তু পরে মত পালটাইয়াছে। ৭ম নৌবহরের গতিবিধি পাকিস্তান সরকার পরম উল্লাসের সহিত বার বার ঘোষণায় উল্লেখ করিতেছে।

.

প্রথম উদ্যেশ্যের কথা আগেই বলিয়াছি। অপরদিকে ‘কাগজের বাঘ’এর নয়া দোস্ত চিন ইয়াহিয়ার পক্ষ লইয়া জাতিসঙ্ঘে নিরাপত্তা পরিষদে আর পিকিং এর বেতারে ভারত বিরোধী তথা সোভিয়েত বিরোধী কুৎসা চালাইতেছে । বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের পদে পদে বিরুদ্ধাচরণ করিতেছে।

.

কোথায় গেল তাহার বড় বড় সাম্রাজ্যবাদী বুলি। ৭ম নৌ বহরের এই গতিবিধিতে চীন নীরব কেন? আমরা চীন কে তার নিজের চরকায় তেল দিতে বলি। দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ তাইওয়ানে মার্কিন ঘাঁটি তাহার চোখে পড়েনা, চোখে পরে বাংলাদেশে ভারতীয় সৈন্যের অভিযান। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তাইওয়ান দখল করিয়া রাখিয়াছে তাই নয়া জাতসঙ্ঘ ও নিরাপত্তা পরিষদে তাহার গলাবাজি শুনিনা। শুনি ভারত নাকি ‘পাকিস্তানের একটা অংশ’ দখল করিয়া নিতেছে। মহান চীন কে তাহার বর্তমান নেতারা মার্কিন সাম্যাজ্যবাদের গাধা বোটে পরিণত করিয়াছে।

.

তাই মার্কিন ৭ম নৌবহরের গতি বিধির সহিত তাল মিলাইয়া চীন ভারতের উত্তর সীমান্তে তিব্বতে সৈন্য মোতায়েন করার উদ্যোগ নিয়াছে। তিব্বতে চীনা সৈন্য চলাচলের পিছনে ভারতকে ব্ল্যাক মেইল করার দুরভিসন্ধি রহিয়াছে।”

.