You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.08 | কুমিল্লা চট্টগ্রাম ও শ্রীহট্ট সেক্টরে পাকহানাদার ও মুক্তিবাহিনীর সম্মুখ সংঘর্ষ | ত্রিপুরা - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশ বাহিনী ইয়াহিয়ার রণসাধ মিটাইতেছে
কুমিল্লা চট্টগ্রাম ও শ্রীহট্ট সেক্টরে পাকহানাদার ও মুক্তিবাহিনীর সম্মুখ সংঘর্ষ

আগরতলা ৪ আগস্ট মুক্তিফৌজ এখন মুক্তিবাহিনী হইয়াছে। বাংলাদেশ বাহিনীও বলা হয়। বাংলাদেশের সংগ্রামীরা এতকাল গেরিলা যুদ্ধ চালাইতেছিল, নাম ছিল মুক্তিফৌজ। এখন তাহারা রণকৌশল পরিবর্তন করিয়া পুরাদস্তুর সম্মুখ সংগ্রামে অবতীর্ণ হইয়াছে। সম্মুখ সংগ্রামের প্রথম ধাক্কাতেই পাক জঙ্গি শাসকের রণসাধ মিটাইয়াছে তাহারা। আধুনিক উন্নত ধরনের জনপদ-বিধ্বংসী বােমা, কামান, আর্টিলারি প্রভৃতিতে সুসজ্জিত হইয়া বাংলাদেশ বাহিনী গত ২৭ জুলাই বিস্তৃত রণাঙ্গণে (একসঙ্গে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নােয়াখালী, শ্রীহট্ট সেক্টরে) যুগপত আক্রমণ চালাইয়া পাক জঙ্গি ফৌজকে পাইকারি হারে হতাহত ও পর্যদস্ত করিয়াছে।
কুমিল্লা সেক্টরে বাংলা বাহিনী কুমিল্লা শহরের উপর বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঘরবাড়ি ধ্বংস করিয়াছে। উল্লেখযােগ্য সাফল্য অর্জন করিয়াছে থানা এবং রেলস্টেশন বিধ্বংসে। সামরিক ঘাঁটি (যাহা ঈশ্বর পাঠশালায় পত্তন করা হইয়াছিল) উড়াইয়া দিয়াছে। সৈন্যরা সব ছাউনি ছাড়িয়া চান্দিনা যাইয়া নতুনভাবে আস্তানা করিয়াছে। ময়নামতি ঘাঁটির উপরেও দুর্বার আক্রমণ চালাইয়া বহু সৈন্য নিধন করিয়া ঘটিটির প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি সাধন করিয়াছে। লাকসাম রেল স্টেশনের উপর অবিরাম বােমা বর্ষণ দ্বারা জংসনটিকে একেবারে অকেজো করিয়া দিয়াছে। এখন কুমিল্লা শহরে লােকজন নাই বলা চলে।
চট্টগ্রাম জেটির উপরেও ঐ দিন অবিরাম গােলাবর্ষণ দ্বারা উহার অংশ বিশেষ ধ্বংস করিয়া কয়লার গুদামসহ দুইটি বৃহদাকারের পেট্রোল ট্যাঙ্কে অগ্নিকাণ্ড ঘটাইয়া পােড়াইয়া দিয়াছে। চট্টগ্রাম সেক্টরে পাকফৌজ বাংলা বাহিনীর গন্ধ বাতাস পাইয়াই পলায়ন করে। নােয়াখালী ও ফেনী সেক্টরে কয়েকটি সামরিক ঘাঁটিতে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষে কয়েক শত পাকফৌজ হতাহত হয় এবং বাংলা বাহিনীরও কিছু সংখ্যক লােক হতাহত হইয়াছে।
শ্রীহট্ট সেক্টরে উল্লেখযােগ্য সাফল্য ঘটে বাল্লা স্টেশনে। বাংলাদেশ বাহিনী অতি অল্প সময়ে স্টেশনটি ধ্বংস করিয়া তথায় প্রহরারত পাক ফৌজের এক স্কোয়াড্রন রাজাকার বাহিনীকে জবাই করিয়াছে। শ্রীহট্টের অদূরে ব্যাংকারে অবস্থানকারী ১৮ জন পাক হানাদার বাংলা বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে প্রস্তুত হইবার আগেই খতম।

সূত্র: ত্রিপুরা
৪ আগস্ট, ১৯৭১
১৯ শ্রাবণ, ১৩৭৮