You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.07.09 | গণআন্দোলনের মাধ্যমেই বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায় করতে হবে- কমরেড গণেশ ঘােষের আহ্বান | দেশের ডাক - সংগ্রামের নোটবুক

গণআন্দোলনের মাধ্যমেই বাংলাদেশের স্বীকৃতি আদায় করতে হবে
খােয়াই ও কল্যাণপুরের দশ সহস্রাধিক লােকের সমাবেশে কমরেড গণেশ ঘােষের আহ্বান

আগরতলা, ৮ জুলাই- সাড়ে সাত কোটি মানুষের দেশ পূর্ব বাংলায় আজ আগুন জ্বলছে। হিন্দু-মুসলমান নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই প্রাণ দিচ্ছেন। শুধুমাত্র জীবনটুকু রক্ষার তাগিদে লক্ষ লক্ষ শরণার্থী এ দেশে এসেছেন। কিন্তু ভারত সরকার জনগণের দাবিকে উপেক্ষা করে এখনও বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। তাই আজ আন্তর্জাতিক দায়িত্ব হিসেবে শ্রমিক-কৃষক, ছাত্র-যুবক, মেহনতি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত গণ-আন্দোলনের মাধ্যমেই ইন্দিরা সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতির দাবি আদায় করতে হবে। গত ৬ এবং ৭ জুলাই কল্যাণপুর ও খােয়াইয়ের প্রায় দশ সহস্রাধিক লােকের সমাবেশে প্রধান বক্তার ভাষণে মার্কসবাদী কমিউনিস্ট নেতা এবং বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের যুগে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের অন্যতম নায়ক কমরেড গণেশ ঘােষ উপরােক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ভারতবর্ষের সমস্ত বিরােধী রাজনৈতিক দলগুলাে এবং অনেক বিধানসভা থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তাব নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে স্বীকৃতি এবং অস্ত্র সাহায্য দিতে। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী পঞ্চান্ন কোটি ভারতবাসীর দাবির কাছে বড় হয়ে গেলেন। তিনি স্বীকৃতির কথা মুখে আনছেন।
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে জনতা দাবি তুলেছিলেন শােষণ বন্ধ করতে হবে, জুলুম চলবে না, বাংলা ভাষায় কথা বলতে দিতে হবে। সেটা ইয়াহিয়ার কাছে অপরাধ হয়ে গেল আর পশ্চিমবঙ্গের মানুষ দাবি তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গকে দিল্লীর উপনিবেশ সৃষ্টি করা চলবে না, শ্রমিকের মজুরি কাটা চলবে না, কৃষকের উপর জুলুম চলবে না, বেকারদের কাজ দিতে হবে, ছাত্রদের অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বিনা বেতনে পড়ার সুযােগ দিতে হবে- এটা ইন্দিরার মতে অপরাধ, তাই পূর্ব বাংলায় যেমন ইয়াহিয়া জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করেছে ইন্দিরাও তেমনি পুলিশ, সি.আর.পি, মিলিটারি, গুণ্ডা বাহিনী দিয়ে গণআন্দোলন দমন করতে আন্দোলনের নেতাদের খুন করছে। ৮৮ দিন অঙ্গর নামার শাসনে ৪০০ পশ্চিমবঙ্গবাসী খুন হয়েছে, যার মধ্যে মাকর্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টির ১০০ জন।
তাই আজকে শােষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিতভাবে গণসংগ্রামকে তীব্রতর করে ভারতবর্ষের জনগণের প্রধান শত্ৰু কংগ্রেস সরকারকে বিতাড়িত করে মুক্তির পথ খুঁজে নিতে হবে।

কমরেড নৃপেন চক্রবর্তী
সমাবেশের অপর প্রধান বক্তা মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির রাজ্য সম্পাদক কমরেড নৃপেন চক্রবর্তী বলেন, গত ২৪ বছরের ফার্মেসি রাজত্বে ত্রিপুরার বেকাররা চাকরি পাচ্ছেন না। ভূমিহীন জমি পাচ্ছে না। দাদন পাচ্ছে না, কোনাে শিল্প-কারখানা স্থাপিত হয়নি, রেলপথ নেই, ছাত্রদের উপযুক্ত পড়াশুনার সুযােগ নেই। মানুষ বিগত বছরগুলাের অভিজ্ঞতা দিয়ে আজ যখন আন্দোলনের ময়দানে সামিল হচ্ছেন তখন কংগ্রেস সরকার লাঠি, গুলি দিয়ে বি.এস.এফ, সি.আর.পি নামিয়ে এই আন্দোলন দমন করতে চাইছে। গত নির্বাচনে কংগ্রেস জনতার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আরাে ক্ষিপ্ত হয়েছে। তবে এ কথা মনে করার কারণ নেই ভােটার বাক্সেই শােষিত জনগণ তাদের মুক্তির পথ খুঁজে পাবেন। পূর্ব বাংলার ঘটনা এ কথা প্রমাণ করে।
তিনি বলেন, পূর্ব বাংলার মানুষ শতকরা ৯৮ ভােট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। কিন্তু যে বাঙালিকে শােষণ, নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে মাত্র ২২টি পাঞ্জাবি পরিবারের নিকট যাদের সংস্কৃতিকে স্তব্ধ করে দেয়ার চেষ্টা চলছে তাদের সামান্যতম দাবিও ইয়াহিয়া মানেনি।
শরণার্থীদের সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, চরম অত্যাচার সহ্য করে লক্ষ লক্ষ মানুষ শরণার্থী হিসেবে। আমাদের দেশে এসেছেন অথচ তাদের জন্য বরাদ্দ ১.১০ পয়সা নিয়ে তাদের জীবনকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, কংগ্রেস ও সরকারি আমলারা, তাদের মাত্র ৭০/৭২ পয়সার জিনিসপত্র দিয়ে বিদায় করা হচ্ছে, শিশুদের দুধ দেয়া হচ্ছে না, চিকিৎসার অভাবে শত শত শিশু এবং অন্যান্য মৃত্যুবরণ করছেন।
আর যখন এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হচ্ছে তখন কংগ্রেসীদের মতে সেটা অপরাধ। তিনি বলেন, যেখানে দুর্নীতির বিচার করার জন্য থানা, পুলিশ নেই সেখানে যদি জনতা তার বিচার করেন তবে সেটাকে আমি মেনে নেব। কল্যাণপুরের যে ৯ জন ছাত্র এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে জেলে আটক আছেন তাদের জন্য আমাদের গর্ব অনুভব করা উচিত।
কল্যাণপুর ও খােয়াইয়ের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে কমরেড বিদ্যা দেববর্মা এম.এল.এ ও কমরেড শতীশ চক্রবর্তী, এছাড়া সমাবেশের অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন কমরেড মানিক সরকার, কামিনী সিংহ ও কাজল চক্রবর্তী।

সূত্র: দেশের ডাক
০৯ জুলাই, ১৯৭১
২৪ আষাঢ়, ১৩৭৮