You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.22 | ত্রিপুরায় কি শরণার্থীদের জন্য এ যাবত বাহির হইতে কোনাে কিছুই আসে নাই? | ত্রিপুরা - সংগ্রামের নোটবুক

জানিতে চাই!

ত্রাণ দপ্তর বােধহয় লুপ্তপ্রায় পুনর্বাসন অধিকারটিকেই আবার নতুন করিয়া চাঙ্গা করিয়া তােলা হইয়াছে নবাগত শরণার্থীদের দেখাশুনা করিবার জন্য। অনেক নতুন লােক নেওয়া হইয়াছে। পুরাতন পুনর্বাসন অধিকারটিকে কিছুকাল আগে কঙ্কাল মাত্র সার করিয়া, শহর হইতে অপসারণ করিয়া, শ্মশান যাত্রার জন্য শহরের পশ্চিম ভাগে জয়নগরে নির্বাসন দেওয়া হইয়াছিল, সেই পুনর্বাসন অধিকারটিই নাকি এখন মেদমাংসবহুল হৃষ্ট-পুষ্টাঙ্গ তথা পূর্ণাঙ্গ অধিকারে পরিণত হইয়াছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত সরকারি সংবাদ (প্রেস রিলিজ আকারে) দেওয়া উচিত ছিল। একেবারে সংবাদ না দেওয়ার চাইতে বিলম্বে দেওয়াও ভালাে। এখনও সময় আছে; বিস্তৃত বিবরণ প্রদান করিয়া ত্রিপুরা সরকার আমাদের কর্তব্য সম্পাদনে সহায়তা দানে বাধিত করিবেন কি?
আমাদের জানিবার আগ্রহটা ষােলআনাই জানাইবার নিমিত্ত। জাতি ও সমাজকে সবকিছুই জানাইবার উদ্দেশেই আমরা টই টই করিয়া ঘুরিয়া বেড়াই। জানানাে মানে জাগানাে, জানানাের অর্থ সতর্ক করা, জানানাের মূল উদ্দেশ্য হইল ওয়াকিবহাল করা এবং জানিবার ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা বাড়াইয়া দেওয়া। দেশ বা জাতির অগ্রগতি এই জানা-জানিতে ত্বরান্বিত হইয়া থাকে। এই ব্যাপারে সরকারি প্রচারদপ্তর হইল যন্ত্রী আর প্রেস (পত্রিকাগুলাে) করিয়া থাকে, যন্ত্রের কাজ। শরণার্থী সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশে ত্রিপুরায় যন্ত্রীর ভূমিকা অত্যন্ত নৈরাশ্যজনক। ফলে পত্রিকাসমূহ ঠিকমতাে কাজ করিতে পারিতেছে না। যন্ত্রীকে অর্থাৎ প্রচার দপ্তরকে শরণার্থী বা ত্রাণদপ্তর কোনাে কিছুতেই আমল দিতেছে না, অথবা প্রচারদপ্তরই শরণার্থী দপ্তরের ছায়া মাড়াইতেছে না বলিয়া শরণার্থী ও ত্রাণ সম্পর্কিত সংবাদ প্রেসরিলিজ মারফতে পত্রিকাগুলােতে পৌছাইতেছে না। কম হউক বেশি হউক, তামাম দুনিয়া বাংলাদেশাগত শরণার্থীদের ত্রাণ বাবদে ঔষধ, পথ্য, অন্ন ও অর্থ প্রদান করিতেছে। চিকিৎসক, নার্স, ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল, এ্যাম্বুলেন্স প্রভৃতিও আসিয়াছে, আসিতেছে এবং আসিবে। কলিকাতায় আগত (প্রাপ্ত) ত্রাণ সামগ্রী, বিশেষ করিয়া ওষুধ ও পথ্য বিমানবন্দরে স্তুপ হইয়া পড়িয়া আছে; খালাস করিয়া শরণার্থী শিবিরে পাঠাইবার মতাে ব্যবস্থাপনার অভাবে বহু জিনিস নষ্ট হইবার জন্য অপেক্ষা করিতেছে। ওষুধের গুদামে একেবারে ঠাসাঠাসি অবস্থা; বিষে অমৃতে মিক্সচারের আশঙ্কা দেখা দিয়াছে। পশ্চিমবঙ্গে শরণার্থী শিবির নির্মাণের জন্য ত্রিপালের একান্ত অভাবে শিবির কাঠামােগুলাে নষ্ট হইতেছে।
ত্রিপুরায় কি শরণার্থীদের জন্য এ যাবত বাহির হইতে কোনাে কিছুই আসে নাই? অথবা ত্রিপুরায় কি কোনাে জিনিসেরই অভাব নাই? শরণার্থী ত্রাণ কি স্বয়ংসম্পূর্ণ? না, নির্বিকার- উদাসীন? শিক্ষা অধিকারের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, গত ১৫ জুন সমস্ত স্কুল খুলিবার নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। ঐ দিন হইতে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মচারীগণকে স্কুল কাজে যােগদানের নির্দেশ প্রদান করিয়া বলা হইয়াছে এখনও যে সকল স্কুলে অস্থায়ী শরণার্থী শিবির চালু আছে, সেই সকল স্কুলের প্রধান শিক্ষক, পরিদর্শক, অফিসার ও শিক্ষকগণ শরণার্থীদের তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃপক্ষকে দীর্ঘ ছুটির জন্য ছাত্রদের ক্ষতি এবং বিদ্যালয় খােলার গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করার চেষ্টা করিবেন। শিক্ষা অধিকার ও ত্রাণ অধিকার শিরােমণিগণ যাহা ঘরে বসিয়া করিতে পারেন, তাহা তাহারা না করিয়া উভয় দপ্তরের অধস্তন কর্মচারী পর্যায়ে লাঠালাঠি পর্যন্ত গড়াইবার মতাে কাণ্ড-কারখানা করিয়াছেন। মােট কথা এখনও শরণার্থী শিবির নির্মাণের কাজ ত্রাণ অধিকার সমাপ্ত করিতে পারেন নাই। এই পারেন নাই সংবাদটাও প্রেসে দেওয়া যাইত। তৎসঙ্গে কেন পারেন নাই, কিসের অভাব, কবে পর্যন্ত পারিবেন- প্রভৃতি তথ্যও ত্রাণ অধিকার চিত্তের মণিকোঠা হইতে প্রচার দপ্তরকে পরিবেশন করিতে পারিতেন। এই অধিকার কি কাজ করিতেছে না? নিশ্চয়ই করিতেছে। যদি কাজই হইতেছে তবে উহা প্রচারে দেওয়া হইতেছে না কেন? যাহাকে বলা চলে আকাজ বা কুকাজ। যেমন কাঁচা ছন দিয়া শরণার্থী শিবির নির্মাণের ফলে বৃষ্টির জল, বাহিরে পড়ার আগেই ঘরে পড়ে; হাজার বার শত কর্মচারী নিয়ােগ করা হইয়াছে, শিবিরসমূহে পাইকারি খুচরা বেপরােয়া দুর্নীতি চলিতেছে বলিয়া নিয়ত পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হইতেছে। এই সংবাদগুলাে ত্রিপুরা সরকারের ত্রাণদপ্তরের অযােগ্যতা ও অপদার্থতার উলঙ্গ চিত্র ছাড়া আর কিছুই নহে। আমরা ত্রাণ দপ্তরের নিকট সঠিক তথ্য জানিতে চাই।

সূত্র: ত্রিপুরা
২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
৫ আশ্বিন, ১৩৭৮