ত্রিপুরাবাসী আর্তসেবায় ত্যাগ স্বীকারে কুণ্ঠিত নহে
জনসংযােগ ও পর্যটন অধিকারের মহকুমা জনসংযােগ
অধিকারীকের সেমিনার উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সিংহের ভাষণ
আগরতলা, ১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১: শরণার্থীদের প্রতি ত্রিপুরার মানুষ যে মানবিক আচরণ প্রদর্শন করেছেন—তা প্রকৃত অর্থেই প্রশংসাৰ্হ। সামগ্রিক অর্থে ত্রিপুরার জনসাধারণের অর্থনৈতিক অবস্থা বিশেষ বলীয়ান নয়, তথাপি যখন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কাতারে কাতারে মানুষ গৃহ হারিয়ে, প্রাণ রক্ষার তাগিদে ত্রিপুরায় এসে শরণার্থী হিসেবে উপস্থিত হলেন তখন ত্রিপুরার মানুষ দরদি মন নিয়ে তাদের সেবায় এগিয়ে এসেছেন।
শুধু তাই নয়, ত্রিপুরার ছয় লক্ষ আদিবাসী ও পূর্বে দশ লক্ষ উদ্বাস্তু যারা এখানে এসে মাত্র কিছুকাল ধরে বসবাস করছেন, যাদের বলতে গেলে আর্থিক বুনিয়াদ গড়ে ওঠেনি, তারা শরণার্থীদের থাকার জন্য আশ্রয় শিবির গড়ে তােলার জন্য নিজের জোতভূমি ছেড়ে দিয়েছেন।
আজ সকাল এগারটার সময় মহাকরণ ভবনে ত্রিপুরা সরকারের জনসংযােগ ও পর্যটন অধিকারের বিভিন্ন শাখা ও বিভিন্ন মহকুমার অফিসারদের এক সমাবেশে আলােচনা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী শ্রী শচীন্দ্র লাল সিংহ ঐ কথাগুলাে বলেন।
জনসংযােগ ও পর্যটন অধিকারের মহকুমা জনসংযােগ অধিকারের চার দিনের সেমিনারের আজ ছিল। তৃতীয় দিন। বর্তমানের বিভিন্ন সমস্যা এবং এই সমস্যায় জনসংযােগ আধিকারীকদের ভূমিকা এই বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সিংহ আলােচনা করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা ভিন্ন অপরাপর প্রদেশের আর কোথাও শরণার্থীদের জন্য কেউ জোতের ভূমি ছেড়ে দিয়েছেন বলে তার জানা নেই। তিনি আবেগের সঙ্গে বলেন, যে ত্রিপুরার মানুষ কোনােদিনই আর্তের সেবায় ত্যাগ স্বীকারে কুণ্ঠিত হননি।
ত্রিপুরার মানুষের এই মানবিকতাবােধ এবং সাথে সাথে যে দৃঢ় মনােবলের দৃষ্টান্ত প্রতিনিয়ত দেখা যাচ্ছে তার উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী শ্রী শচীন্দ্র লাল সিংহ বলেন যে, সম্প্রতি আগত শরণার্থীদের ও ত্রিপুরা বাসীর মনােবল ক্ষুন্ন করার জন্য শত্রু রাষ্ট্রের নাশকতামূলক কার্যকলাপ ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপস্থিত জনসংযােগ অধিকারের কর্মীদের উদ্দেশ্য করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন যে, এই মুহূর্তে মনােবল অটুট রাখার জন্য তাদেরকে সর্বোতভাবে কাজ করে যেতে হবে।
প্রসঙ্গত তিনি বলেন যে, একদিকে যেমন স্থানীয় জনসাধারণের মনােবল গড়ে উঠতে পারে এমন প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে তেমনই যে সমস্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ শরণার্থীদের দেখার জন্য এই রাজ্যে আসছেন শরণার্থীদের প্রতি তাদের যে সহানুভূতির ভাব পরিলক্ষিত হয় তাদের সেই মনােভাবের কথা শরণার্থীদের মধ্যে যথােপযুক্তভাবে প্রচার করে তাদেরকে জানিয়ে দিতে হবে। সমগ্র বিশ্বের মানবাত্মা আজ সাড়ে সাত কোটি মানুষের শুভাকাক্ষী।
তিনি জনসংযােগ কর্মীদের উপদেশ দিয়ে বলেন, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে ত্রিপুরার মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নেও এখানকার সাড়ে পনের লক্ষ নাগরিকদের কল্যাণ সাধনে প্রতিটি জনসংযােগ কর্মীকে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, জনসংযােগ কর্মীদের কাজ খুবই দায়িত্বপূর্ণ। তারা জনসাধারণকে বিভিন্ন বিষয়ে জানিয়ে তাদের ভাবাবেগের উপর প্রভাব বিস্তার করে তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারেন।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, দেশের এই বর্তমান পরিস্থিতিতে জনসংযােগ বিভাগের প্রতিটি কর্মী জদের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকবেন, ত্রিপুরার সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত থাকবেন এবং তারা যাতে বিভিন্ন পরিকল্পনার কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারেন সে বিষয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করবেন।
সেমিনারে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন মহকুমার জনসংযােগ অধিকারীগণ জানান, ত্রিপুরার প্রতিটি মহকুমায়। জনসংযােগ অফিস স্থাপিত হওয়ায় সেখানকার জনসাধারণ এর মধ্যে উৎসাহের ভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।
সূত্র: ত্রিপুরা
২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
৫ আশ্বিন, ১৩৭৮