বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির সভায় বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য
১৫ ডিসেম্বর ১৯৭২
চট্টগ্রাম
ভাষণের অডিও শুনতে এখানে ক্লিক করুন।
বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবী ভাই ও বোনেরা,
আপনারা আমার আন্তরিক ধন্যবাদ গ্রহণ করুন। সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রাম দু বচ্ছর পূর্বে করা হয়, এর পূর্বে এরকম কোন প্রোগ্রাম করা হয়নি। যার জন্য ১৯৭০ সালে লক্ষ লক্ষ লোক জীবন দেয়। আমাদের সৌভাগ্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। সরকার এবং রেডক্রসের সহযোগীতায় এবং ইন্টারন্যাশনাল রেডক্রসের সহযোগীতায় একটা প্রোগ্রাম গ্রহণ করা হয়েছে। সমস্ত দ্বীপবর্তী অঞ্চলগুলো এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে আপনারা প্রায় বিশ হাজার ভলান্টিয়ার আছেন। যারা নিঃস্বার্থভাবে দেশের কাজে এগিয়ে এসেছেন। আপদ বিপদ – বিপদের সময় আপনারা যাতে কাজ করতে পারেন এবং দুঃখী মানুষের পাশে দাড়াতে পারেন এবং পূর্বের থেকে আপনারা জানতে পারেন কী অবস্থা হচ্ছে, তখন আপনারা সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারেন। আপনাদের দু’রকমের কাজ হয় – করতে পারেন আপনারা। যখন জলোচ্ছাস, সাইক্লোন, ঝড় আসে, তখন দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন। তাদের সাহায্য করতে পারেন। বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারেন। হেডকোয়ার্টারে খবর দেবার পারেন। সরকারের সহযোগীতায় রেস্কিউ করতে পারেন, রিলিফ করতে পারেন এবং পূর্বের থেকে মানুষকে সেফ স্থানে নিয়ে আসতে পারেন। আরেকটা কাজ, সাইক্লোন থেকে রক্ষা পাওয়ার আরেকটা কাজ আছে। সেই কাজটাই বিশেষ করে আমি আজ আপনাদের অনুরোধ করব যে, বহু গাছ, জঙ্গল, বন আমাদের শেষ হয়ে গেছে। এ বন জঙ্গল শেষ হওয়ার জন্যই বাংলাদেশের দিকে ঝড় খুব বেশী হচ্ছে। আপনাদের কর্তব্য এখন হবে যখন সাইক্লোন থাকবে না, যাতে বেশী গাছ উৎপাদন হয় চর এরিয়া দিয়ে। চরগুলোতে যেমন ভালো – বিশেষ ভাবে নারিকেল গাছ, সুপারী গাছ এবং জঙ্গল যাতে অন্যান্য গাছপালা সৃষ্টি হয় সেদিকে আপনাদের খেয়াল রাখা দরকার এবং সকলকে বুঝানো দরকার। সেইটুকু আমি অনুরোধ করব আপনাদের এখন, যখন আমাদের ঝড়ের সম্ভাবনা থাকে না তখন আপনারা যেভাবে ঝড়ের জন্য মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকেন, তেমনি আপনারা যাতে মানুষকে সংঘবদ্ধ করতে পারেন এবং প্রত্যেককে গাছ লাগাবার জন্য উৎসাহী করতে পারেন সেদিকে আপনাদের বিশেষভাবে খেয়াল রাখা উচিৎ। কারণ তাহলে ঝড়ের হাত থেকে অনেকটা আমরা উদ্ধার পেতে পারি। তৃতীয়ত, সরকার যে প্রজেক্টগুলো গ্রহণ করে বর্ডারে মানে সমগ্র উপকূলবর্তী দ্বীপগুলোতে এবং তার সমুদ্রের পাশে যে অঞ্চলগুলোতে যে এমব্যাকমেন্টের কাজ করছে, আমি নিজে যেয়ে ভোলাতে যে এমব্যাকমেন্ট করে দিয়ে এসেছিলাম, এমনি যদি আপনারা জনগণের সাহেয্যে যেখানে সরকার যেখানে এমব্যাকমেন্ট করতে যাবে জনগণকে সংঘবদ্ধ করে নিয়ে সেই এমব্যাকমেন্টগুলোকে ভালোভাবে করতে পারেন তাহলে অনেক সময় আপদ থেকে বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। শুধু ঝড়ের সময় প্রস্তুতি নিলেই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না, ঝড়ের আগেই আমাকে প্রস্তুতি নিতে হয় যাতে ঝড় কম হয় এবং ঝড় না আসে এবং ঝড় থেকে রক্ষা পেতে পারি। সেদিকে আপনারা খেয়াল আমি খুব অত্যন্ত সন্তুষ্ট হব। আমি জানি আপনারা আমার কথা শুনেন, আমাকে ভালোবাসেন, আমি বিশ্বাস করি। এবং এইদিন যে ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা ছিল এবং জলোচ্ছাসের সম্ভাবনা ছিল, তখন দেখেছি যে আপনারা সমস্ত রাত্রে আপনাদের ডিরেক্টর, আপনাদের চেয়ারম্যান, আপনাদের যারা রেডক্রসের সদস্যরা ছিলেন, তারা আমার সঙ্গে সঙ্গে রাত জেগেছিলেন। আমাদের রেডিও যখন চলতেছিল, আপনাদের ওয়ারলেসও চলতেছিল, সরকারের ওয়ারলেস চলতেছিল, আমাদের যে রিলিফ ডিপার্টমেন্ট তারাও সমস্ত জেগে ছিল, পুলিশ ডিপার্টমেন্ট জেগে ছিল, আপনারাও সেখানে সমস্ত জেগে ছিলেন যাতে যদি কোন এমন কোন কিছু হয়, তাহলে যেন মোকাবেলা করতে পারি। আমি আপনাদের খবর পাচ্ছিলাম। আপনাদের ডিরেক্টর আমাকে – আপনাদের চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে বারবার খবর দিচ্ছিলেন। এবং এদিকে সরকার এবং রিলিফ ডিপার্টমেন্টও হুঁশিয়ার হয়ে গিয়েছিল, আমরা সেদিন প্রস্তুত ছিলাম। আল্লাহর রহমতে, সকলের দোয়ায়, তাই বাংলাদেশের উপর হয় নাই। যদি হত তবে সব্বোনাশ হয়ে যেত। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেছে সেজন্য আপনারা আল্লাহর কাছে মানে খোদার কাছে মোনাজাত করবেন। জনসাধারণ সকলেই মোনাজাত করবেন। এ কয়দিন আমাদের বিপদ থেকে রক্ষা করেছে আর ভবিষ্যতে যদি কোনদিন এরকম বিপদের সম্ভাবনা হয়, যেভাবে আপনারা এবার এগিয়ে এসছিলেন, ভবিষ্যতেও সেভাবে এগিয়ে আসবেন এটা আমি আশা করি। এবং ঐ জাগা (জায়গা) যারা আমাদের রাজনৈতিক কর্মী আছে, সরকারী অফিসার আছে, আপনারা যারা স্বেচ্ছাসেবী আছেন, সংঘবদ্ধ ভাবে দুখী মানুষের পাশে দাড়াবেন এবং পূর্বের থেকে প্রিপেয়ারড থাকবেন। এই আশা নিয়ে আপনাদের আমি – কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি। আপনারা সুখে থাকুন। আমি দোয়া করি, আল্লাহ আপনাদের সহায় হোক।
জয় বাংলা।
Reference:
পিপলস ভয়েস, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, প্রকাশনা – শেকড় সন্ধান