You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.19 | মুক্তিযুদ্ধ জোরদার করার জন্য বাঙলাদেশের পার্টিগুলাে দৃঢ়বদ্ধ | সপ্তাহ - সংগ্রামের নোটবুক

মুক্তিযুদ্ধ জোরদার করার জন্য বাঙলাদেশের পার্টিগুলাে দৃঢ়বদ্ধ

বাঙলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রাম বিষয়ে পরামর্শদাতা কমিটি স্থির করেছেন যে তারা এখন থেকে প্রতি পক্ষকাল অন্তত একবার করে বাঙলাদেশের অস্থায়ী সরকারের কার্যাবলী ও মুক্তিযুদ্ধে অগ্রগতি পর্যালােচনার জন্য আলােচনায় বসবেন। মুজিবনগরের কমিটির ৭ নভেম্বরেরে বৈঠকে এই বিশেষ সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে বিশেষত মুক্তিবাহিনী এই সময় পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের একেবারে মূল কেন্দ্রগুলােতে আঘাত দিতে শুরু করেছে এবং বাঙলাদেশের মধ্যেই মুক্তাঞ্চল গঠন করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে এ অবস্থায় অসামরিক শাসনব্যবস্থা ও মুক্তাঞ্চলগুলাের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা দরকার। তার জন্য প্রয়ােজন স্থানীয় জনগণের সক্রিয় সহযােগিতা। এক কথায় স্বাধীনতাযুদ্ধ বর্তমানে তীক্ষ পর্যবেক্ষণের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে প্রসঙ্গত, বাঙলাদেশ অস্থায়ী সরকারের পরামর্শদাতা কমিটি আওয়ামী লীগ, (মুজাফফর আহমেদের) ন্যাপ, (ভাসানী) ন্যাপ, বাঙলাদেশ কমিউনিটি পার্টি ও বাঙলাদেশ জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল প্রায় দুমাস আগে।
পরামর্শদাতা কমিটি বাঙলাদেশের মুক্তাঞ্চলগুলােতে প্রতিরক্ষার জন্য একটি জনপ্রিয় কমিটি গঠনের সুপারিশ করেছে। এই জনপ্রিয় কমিটি পরামর্শদাতা কমিটির মতনই বাঙলাদেশের সমস্ত দলের প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত হওয়া উচিত।
৮ নভেম্বরের একটি বৈঠকে মুক্তিযােদ্ধাদের ছাত্রসংস্থাগুলাে একই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। বৈঠকে অন্যন্যদের মধ্যে মুজাফফারপন্থী ন্যাপ, সরকারের পার্টি আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ কমিডনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠনগুলােও উপস্থিত ছিল। বৈঠকের অব্যবহিত পরেই স্টুডেন্টস্ ইউনিয়ন মুক্তবিবৃতিতে সমস্ত ক্ষেত্রেই পরামর্শদাতা কমিটির নেতৃত্বে বাঙলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প জ্ঞাপন করে। আওয়ামী লীগের কোনাে কোনাে পক্ষ অবশ্য এই ধরণের ঐক্যের বিরুদ্ধে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কারণ তাদের দলের সাম্প্রতিক সম্মেলনে তারা মুজাফফর ন্যাপ ও বাঙলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সমস্ত ক্ষেত্রে ঐক্যের আহ্বানকে খতিয়ে দেখার প্রস্তাবটি বাতিল করে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের মধ্যেকার এই সভ্যরা বলেছেন যে, যেহেতু গত ১৯৭০-এর নির্বাচনে অন্যান্য দলগুলাে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিযােগীতায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে অতএব অন্য সমস্ত দলকে নিয়ে ন্যাশন্যাল লিবারেশন ফ্রন্ট গঠনের কোন প্রশ্নই ওঠে না।
রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের মতে, আওয়ামী লীগের এই অংশটি ভুলে গেছেন যে গত নির্বাচনের পরবর্তী অবস্থার প্রভূত পরিবর্তন হয়েছে। জনগণ এখন তাদের রাজনৈতিক অধিকার অস্ত্রের দ্বারা বুঝে নেবার চেষ্টা করছেন। ভাষ্যকরদের আরাে অভিমত, এখন ব্যালটের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন হচ্ছে অস্ত্রের সাহায্যে ক্ষমতা পুনরুদ্ধার।
নানা বিরােধীতা সত্ত্বেও মুজাফফর ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি এবং জাতীয় কংগ্রেসের নেতারা বিশ্বাস করেন জনগণের প্রয়ােজনেই ঐক্য জোরদার হবে এবং ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট গঠন করা সম্ভব হবে।
সূত্র: সপ্তাহ, ১৯ নভেম্বর ১৯৭১