২০ নভেম্বর ১৯৭১ঃ রাধানগর আক্রমন, লে. কর্নেল নুরুন্নবী খান বীর বিক্রম এর বর্ণনায়
‘একাত্তরের ২০ নভেম্বর রোজ শনিবার ঈদের এই দিনে আমি তৃতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের ডেল্টা, ইকো এবং ব্যাটেলিয়ন হেড কোয়ার্টার কোম্পানির সৈনিকদের নিয়ে সিলেটের তামাবিল-ডাউকি সীমান্তবর্তী এলাকায় পাকিস্তানিদের শক্ত ঘাঁটি রাধানগরকে ঘিরে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজে নিয়োজিত ছিলাম। ঈদের দিন সকাল থেকেই পাকিস্তানিরা আমাদের প্রতিটি অবস্থানেই ব্যাপকভাবে আর্টিলারির গোলা নিক্ষেপ করতে থাকে। দুপুর ১টার দিকে পাকিস্তানিরা গোয়াইন ঘাট থেকে আসা গ্রাম্য সড়কপথকে আড়াল করে ব্যাপক আর্টিলারি এবং মর্টারের গোলার ফায়ার কভারে আমাদের ছাত্তার গ্রামের প্রতিরক্ষা অবস্থানের ওপর এক ভয়াবহ আক্রমণ পরিচালনা করে। ধীরস্থির প্রকৃতির সুবেদার আলী আকবর ছিলেন ঐ এলাকার প্রতিরক্ষা কাজে নিয়োজিত। সুবেদার বদি এবং তার প্লাটুন থেকে দুটি সেকশনকে সাথে নিয়ে তড়িতে সুবেদার আলী আকবরের অবস্থানে পৌঁছি। একটি অবস্থান থেকে বাইনোকুলারের সাহায্যে দেখতে পাই যে রাস্তার ওপর দু’টি মেশিনগান স্থাপন করে তার ফায়ার কভারে পাকিস্তানিদের একটি বিশাল দল রাস্তাকে আড়াল করে দ্রুতগতিতে আমার ছাত্তার গ্রাম অবস্থানের দিকে এগিয়ে আসছে। সুবেদার বদিকে সুবেদার আলী আকবরের সাহায্যে রেখে আমি পিছনে দুয়ারীখেল গ্রামে ৩ ইঞ্চি মর্টার দু’টির অবস্থানে দৌড়ে পৌঁছে যাই। মর্টার দুটির স্থান কিছুটা পরিবর্তন করে দ্রুত অগ্রসরমাণ পাকিস্তানিদের ওপর গোলা নিক্ষেপ করতে শুরু করি। ওদিকে সুবেদার বদি এবং সুবেদার আলী আকবরের অবস্থানগুলি থেকেও গোলা নিক্ষেপ শুরু হয়। মুহূর্তেই পাকিস্তানিরা রণে ভঙ্গ দিয়ে পিছু হটতে শুরু করে। সুবেদার বদি গ্রাম্য রাস্তার কভারে গোয়াইন সড়ক পর্যন্ত পাকিস্তানিদের ধাওয়া করে ফিরে আসেন।’ (ঈষৎ সংক্ষেপিত)