You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.17 | ৩০ কাৰ্ত্তিক, ১৩৭৮ বুধবার, ১৭ নভেম্বর ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

৩০ কাৰ্ত্তিক, ১৩৭৮ বুধবার, ১৭ নভেম্বর ১৯৭১

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত এক বেতার ভাষণে জনাব আব্দুল মালেক উকিল এম এন এ বলেন, সসানার বাংলার লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষ। শিশু যুবক-যুবতীকে নির্বিচারে হত্যার অপরাধে, লক্ষ লক্ষ নারীর শ্লীলতাহানি ও সতীত্ব নষ্ট করার অপরাধে, কোটি কোটি টাকার ধন-সম্পদ বিনষ্ট করা, লুটপাট ও ডাকাতির অপরাধে, প্রায় ৯৫ লক্ষ শরণার্থী আবাল বৃদ্ধবণিতা নির্বিশেষে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করার অপরাধে এবং অপর প্রায় ২ কোটি লোককে গৃহহারা-বাস্তুহারা এবং ছিন্নমূল করার অপরাধে, চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস করার অপরাধে, ইয়াহিয়া-টিক্কা-ভুট্টো-হামিদ, যেমন অপরাধী তেমনি এই জল্লাদচক্রের ক্ৰীড়নক সহযোগী এবং তাদের প্রত্যেকটি সক্রিয় সমর্থক ও তাবেদারগণও সমভাবে অপরাধী এবং সমভাবে শাস্তির যোগ্য। (খঃ ৫ পৃঃ ১৭০)

সিলেট সেক্টরের মুক্তিবাহিনী জাকিগঞ্জ দখল করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এদিন।

পাকিস্তান পরিকল্পনা কমিশন এক রিপোর্টে পূর্ব পাকিস্তানে অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে। ঐ রিপোর্টে বলা হয় অবিলম্বে ক্ষয়ক্ষতি সামলে নিয়ে শিল্পে অর্থবিনিয়োগ না করলে ধ্বংস অনিবার্য।

চট্টগ্রাম রেডিওর আঞ্চলিক সহকারী পরিচালক জনাব আবদুল বাহারকে দুস্কৃতকারীরা হত্যা করেছে (দৈঃ পাঃ)

মুক্তিবাহিনী দর্শনায় একটি পাক মিলিটারী ট্রেন উড়িয়ে দেয়। চট্টগ্রামের কক্সবাজারে পাক ফাইটার প্লেনকে মুক্তিবাহিনী ভূমি থেকে গুলী করে বিধ্বস্ত করে।

এ সময়ে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর তৎপরতা সম্বন্ধে সাংবাদিক D. R. Mankekar লিখেছেনঃ“By mid-November, all movements were completed and the ordinance factories had already stepped up production to meet the extra needs of operations of a military operation, it need be.” (PCS; p-36)

ভোর সাড়ে ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ঢাকায় কারফিউ জারি করা হয়। কারফিউর সময় সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে ঢাকা নগরীর বিভিন্নস্থানে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়। সেনাবাহিনী এ সময় গোটা নগরী তল্লাশি করে কয়েকশ’ তরুণকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে আটক করে।

কুমিল্লা, খুলনা, বরিশাল জেলার বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ হয়।

করাচীতে পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামত উপেক্ষা করে যদি পুতুল সরকার গঠন করা হয় তবে বিপ্লব অনিবার্য। পাকিস্তানের জনগণ কোন অবস্থায় একটি পুতুল সরকার গ্রহণ করবে না।

পাকবাহিনীর এক ব্যাটালিয়ন সেনাদল ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করলে ভারতীয় বিএসএফ দল সীমান্ত অতিক্রমের অভিযাত্রা প্রতিহত করে। এ অভিযনে বিএসএফের একজন অফিসারসহ সাতজন প্রাণ হারায়। (PCS. P43) পাক সেনারা ঢাকার অদূরে শেখর নগর গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে। মুক্তিবাহিনী অবস্থান নিয়েছে এই সংবাদের এ ধ্বংসলীলা চালায় বলে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ এক সংবাদ প্রকাশিত হয়। উল্লেখ্য, গত ২৭ অক্টোবর এ ঘটনা ঘটেছিল বলে পরে জানা যায়।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী এক বক্তৃতায় বলেন, ইতিহাস তুমি সাক্ষী রবে, সাড়ে ৭ কোটি মানুষের এই ন্যায় সত্য ও স্বাধীনতার সংগ্রাম ব্যর্থ হবে না-হতে পারে না। ইনশাল্লাহ আমরা বিজয়ী হবই। (খঃ ৪ঃ পূঃ ৬০৪)

ভারত সফরত ব্রিটিশ ওভারসীজ ডেভেললপমেন্ট দপ্তরের মন্ত্রী রিচার্ড উড ১৬ নভেম্বর বোম্বে পৌছানোর পর বলেন, পূর্ব বঙ্গের নিকট গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার জন্য ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক পাকিস্তানকে চাপ দেওয়া হবে। জাতিসংঘ কিংবা কমনওয়েলথ কর্তৃক কার্যকর সমাধানের প্রস্তাব পেশ করা সম্ভব নয়। (দি ডেইলি টেলিগ্রাফ,)

ঢাকা থেকে প্রাপ্ত এক সংবাদে, সাপ্তাহিক ‘দি পিপল’ জানায়, ঢাকায় গেরিলা অপারেশনের ফলে এক হাজার লোক নিহত এবং কয়েক হাজার জনকে পাক সরকার গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত লোকদের ওপর পাকহানাদার বাহিনী অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছে। উল্লেখ্য, গত ক’ মাস ধরে বহু মৃতদেহ পাকসেনারা ঢাকার অদূরে সাঈদাবাদ ভাগাড়ে চাপামাটি দিয়েছে। বলে জানা যায়।

ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়ঃ রাজনৈতিক সংবাদদাতা সিএস পন্ডিত বলেন, দু’সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে ভারত সরকার সমগ্র দেশে জরুরী পরিস্থিতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতিদানের মাধ্যমে মুক্তিবাহিনীকে প্রকাশ্যে সমর্থনদান করবে।

দি টাইমস্-এ এই সংবাদ উদ্ধৃত করে আরও বলা হয়, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সংগে জরুরী আলোচনার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ইতোমধ্যে দিল্লী পৌঁছেছেন। (দি টাইমস্)

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী