২৮ কাৰ্ত্তিক, ১৩৭৮ সােমবার, ১৫ নভেম্বর ১৯৭৯
ঢাকা থেকে প্রেরিত আরও একটি সংবাদে বলা হয়, খাদ্য-শস্যবাহী একটি জাহাজ মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ক্ষতগ্রস্ত হয়। মিপেট মাইন-এর সাহায্যে জাতিসংঘের চিহ্নধারী জাহাজটির ক্ষতিসাধন করা হয় বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ত্রাণ সংস্থার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। (দি অবজার্ভার ১৪ নভেম্বর) উল্লেখ্য, অবরুদ্ধ বাংলাদেশের রয়েছে ৪০ মাইল উপকূলীয় এলাকা এবং ৪০ হাজার বর্গ মাইল অধ্যুষিত সামুদ্রিক এলাকা স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জ্বীবিত একদল সুসংগঠিত নাবিক ও ছোট দুটি জাহাজ পদ্মা ও পলাশের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অভ্যুদয় হয়। (লেখক)
চালনা বন্দরের নিকট “সিটি অব সেন্ট অলবান্স”নামক একটি ব্রিটিশ মালবাহী জাহাজ মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দু’টি জলযান থেকে জাহাজটির উপর গোলা নিক্ষেপ করা হয়। গত শুক্রবার (১২ নভেম্বর) ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটি মেরামতের জন্য কলকাতা পৌঁছায়। (দি টাইমস ১৫ নভেম্বর)
সামরিক সরকার বেসামরিক গভর্ণরের উপদেষ্টা মেঃ জেঃ রাও ফরমান আলী খুলনায় ভারতের বাংলাদেশ প্রচারণা সম্পর্কে পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষতি না করে পশ্চিম বঙ্গকে স্বাধীনতা প্রদানের আহবান জানান। (পাঃ ৭ঃ ৬২৭)
বেলোনিয়ায় মুক্তি বাহিনীর দখলকৃত এলাকায় পাক বিমান বাহিনীর ৪টি জঙ্গীবিমান বোমাবর্ষণ করে। ৪০ জন সাধারণ নিরীহ লোক নিহত হয়। (লেখক)
সোভিয়েত ইউনিয়ন, বেলজিয়াম, অষ্ট্ৰিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং পশ্চিম জার্মানী সফরের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, এই আলাপ-আলোচনায় অনেকগুলো দেশ শেখ মুজিবের মুক্তি দেয়া খুবই প্রয়োজনীয় বলে মত প্রকাশ করেছেন। ভারত ও বাংলাদেশের জনগণকে সম্মিলিতভাবে সকল সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে। যে পর্যন্ত না বাংলাদেশ পরিস্থিতির একটা সন্তোষজনক সমাধান হচ্ছে, সে পর্যন্ত ভারত তার সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করার ঝুঁকি নিতে পারে না। শ্রীমতী গান্ধী বলেন, ‘We have silenced some Pakistani guns, we have dealt with their tanks and we have brought down some of their intruding aircraft… The Muktibahini is facing very courageously; it is a very difficult fight but they are fighting very bravely and they have our good wishes, and they have our support also … I have full confidence that all parties will respond to this challenge and together. We will be able to come out of what is a dark period for us and for the people of Bangladesh. We will come out of it and they will be able to make a new life for themselves.” (The Years of Endeavour. P. 584-85)
গণচীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্ৰীমতী গান্ধীর কাছে এক জরুরী তারবার্তা প্রেরণ করেন। (সংবাদপত্র)
জামাতে ইসলামীর নেতা অধ্যাপক গোলাম আযম পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদটি একজন পূর্ব পাকিস্তানীকে দেয়ার দাবি জানান। উল্লেখ্য, তথাকথিত উপনির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা জামাতসহ ডানপন্থী (মৌলবাদীদের) মিলিত জাতীয় পরিষদ সদস্য সংখ্যা হয় ৯০, বাকি ২০ টি আসনে (নির্বাচন তারিখ ৭ ডিসেম্বর) সাফল্যের আশা করছিলেন। অর্থাৎ পিপিপির ৯৩ আসনের বিরুদ্ধে সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জনের আশায় উন্মুখ ছিল জামায়াত ও ইসলাম পছন্দ পার্টিগুলো।
পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়, গত ২৫ মার্চের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়োজিত চারজন সিএসপি ও একজন ইপিসিএস অফিসারের মৃত্য হয়েছে। এদের মধ্যে কুষ্টিয়ার এডিসি নাসিম ওয়াকার আহমেদ ৩১ মার্চ চুয়াডাঙ্গার এসডিও মোহাম্মদ ইকবাল ১৫ এপ্রিল, নওগাঁর এসডিওমোহম্মদ নিসারুল হামিদ ১৬ এপ্রিল, সিরাজগঞ্জের এসডিও এ, কে, শামসুদ্দিন ২০মে এবং যশোরের সাব জজ মোজাফফর হোসেন (ইপিসিএস) ৩ সেপ্টেম্বর মারা যান।
নভেম্বর (১-১৫) তারিখের মধ্যে ভারত-পাকিস্তান চারবার প্রতিবাদ করে স্ব-স্ব সরকারের মুখপাত্র বক্তব্য রেখেছেন। এসব প্রতিবাদের বিষয়বস্তু ছিল সীমান্ত অতিক্রম, ১১ দিন ব্যাপী কমলপুরের যুদ্ধ, বেলোনিয়ার ও শিকারপুর যুদ্ধ সম্বন্ধীয়।
উল্লেখ্য, রয়টার সংবাদদাতা (নভেম্বর ১৯) জানায়, according to high-ranking Indian borer officials 75 Indian soldiers and at least 450 Pakistani troops had been killed in the action. (KCA, p. 24991)
রাওয়ালপিন্ডি থেকে “দি অবজার্ভার”-এর সংবাদদাতা গেভিন ইয়াং কর্তৃক প্রেরিত এক সংবাদ বিশ্লেষণে বলা হয়, নিরপেক্ষ পাকিস্তানীরা শেখ মুজিবকে মুক্তি দিয়ে তাঁর সঙ্গে। রাজনৈতিক আলাোচনা অনুষ্ঠানের দাবী জানিয়েছেন। তা সত্ত্বেও ভুট্টো শেখ মুজিবের নাম উচ্চারণ করতেও রাজি নয়। (দি অবজার্ভার ১৪ নভেম্বর)
১৪ নভেম্বর ভারতীয় মন্ত্রিসভার ‘রাজনীতি বিষয়ক কমিটি’র এক সভায় মিসেস গান্ধী বলেন, পূর্ববংগ সমস্যার গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ কর্তৃক ইয়াহিয়া খাঁনকে রাজি করাবার জন্য সপ্তাহখানেক সময় দেওয়া উচিত। দি টাইমস-এর সংবাদদাতা পিটার হ্যাজেলহার্ষ্ট কর্তৃক প্রেরিত এই সংবাদে আরও বলা হয়, আগামী কিছুকালের মধ্যে আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দ সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হলে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা ভারতের পক্ষে ন্যায়সঙ্গত হবে বলে শ্রীমতী গান্ধী মনে করেন। ইন্দিরা গান্ধীর বক্তব্য থেকে তাঁর সহকর্মীরা পরিষ্কার বুঝতে পারেন, আন্তর্জাতিক উদ্যোগের মাধ্যমে সংকটের অবসান সম্পর্কে তিনি আশাবাদী নন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে তিনি জরুরী অবস্থা ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তার আগে বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দের সংগে তিনি এ সম্পর্কে আলোচনা করবেন। (দি টাইমস, ১৫ নভেম্বর)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী