You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.31 | ১৫ পৌষ ১৩৭৮ শুক্রবার, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

১৫ পৌষ ১৩৭৮ শুক্রবার, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭১

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক তৎপরতা পুনরুজ্জীবনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ও কারগরি সহায়তার প্রয়োজন নিরুপনের জন্য ডিসেম্বর শেষ সপ্তাহে ভারতের উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদল ঢাকায় ছ’দিন ধরে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিশদ আলাপ-আলোচনা চালান। এইসব আলাপ-আলোচনায় বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য যথাশীঘ্র সচল করা এবং এই উদ্দেশ্য আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা পুণঃপ্রতিষ্ঠার বিষয় একটি মুখ্য স্থান অধিকার করে একই সময়ে বাংলাদেশ সরকার ও সোভিয়েত বাণিজ্য প্রতিনিধিডলের মধ্যে ঢাকায় অনুষ্ঠি আলোচনায় উভয় দেশের মধ্যে অবিলম্বে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য শুরু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

 -এদিন বাংলাদেশের কম্র্যানিষ্ট পার্টি অফিস উদ্ধোধন করা হয়ঃ The communist Party, which had been banned in East Pakistan since 1954 and had worked under ground for 17 years, formally resumed public activity when its officers in Dacca were opened on Dec.31. The Party  Leader, Mr. Moni Sing, said that it would support the government’s efforts to make Bangladesh a secular and Socialist country.

-নয়াদিল্লীতে শ্রীমতী গান্ধী এক সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশে আইন ও শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতির কথা বলেন। শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন ও ঢাকায় কতিপয় বিহারী মুসলিম রাজাকার নিধনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, The western press tended to blow some of those incidents out of proportion. Some sections of the Western press were ‘printing horrible pictures’ of incidents relating to some twenty deaths while the annihilation of a million people earlier and the buy chery of 280 intellectuals on the eve of the surrender seemed to have made no impact. On the whole, Mrs. Gandhi said, the people of Bangladesh had behaved with remarkable restraint after liberation considering what they had gone through. Mrs. Gandhi expressed the hope that most of the refugees would return home by the end of February 1972. Although at an earlier stage, a great majority of them did not wish to go back partly because of the fear of being killed and partly because they could not foresees the liberation, there was no reason for them to stay on now as their country had been liberated (Statesman)

বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীসভা কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থাদির মধ্যে কেবলমাত্র পাকিস্তানী মালিকাধীন কল-কারখানা ও ব্যবসায়িক সংগঠনকে সরকারী মালিকানাধীনে আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে এইসব পরিত্যক্ত কল-কারখানা পুনরায় সচল করার জন্য নতুন ব্যবস্থাপনা বোর্ডগঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। (সংবাদপত্র)। দেশের অর্থনৈতিক তৎপরতা পুনরুজ্জীবন-বিশেষতঃ শিল্প ব্যাংক ও ইনসিওরেন্স প্রতিষ্ঠানসমূহ পুনরায় সচল করার প্রচেষ্টা যাতে সফল এবং প্রতিশ্রুত নতুন সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়, তদুদ্দেশ্যে মন্ত্রিসভা কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থাদি প্রসঙ্গত স্মরণযোগ্য। ৩১ শে ডিসেম্বর মন্ত্রীসভা কেবলমাত্র পাকিস্তানী মালিকানাধীণ কল-কারখানা ও ব্যবসায়িক সংগঠনকে সরকারী মালিকানাধীনে আনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন একই সঙ্গে এইসব পরিত্যক্ত কল-কারখানা পুনরায় সচল করার জন্য নতুন ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত অনুসারে দেশের সমস্ত পরিত্যক্ত শিল্প ইউনিটকে মোট ছ’টি অঞ্চলে ভাগ করে প্রতিটি ইউনিটের পরিচালনার জন্য শিল্প দফতরের উপ-পরিচালক বা সহকারী পরিচালক, ঋণদানকারী ব্যাংকের প্রতিনিধি, মিল ব্যবস্থাপক, রেজিষ্ট্রিকৃত শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এবং সরকার মনোনীত আর একজন সদস্যের সম্বায় মোট পাঁচ বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা বোর্ড গঠনের ব্যবস্থা ঘোষিত হয়।

এইসব ব্যবস্থাপনা মূলতঃ যে বিবেচনা থেকে এই সিদ্ধান্তটি গৃহিত হয় তা ছিল নতুন সাধিনতার উৎসাহ-উদ্দীপনার মাঝে শ্রমিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে যদি ন্যায়ভিত্তিক ও গঠনমূলক সহযোগিতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা যায় তবে শিল্প ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাঙালী ম্যানেজমেন্ট কর্মীদের সংখ্যাল্পতাজনিত তীব্র সমস্যা দূর করার পাশাপাশি এইসব উৎপাদন যন্ত্রের মালিকানার সামাজিকীরণ ফলপ্রসু করে তোলা সম্ভব। বস্তুতঃ রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট আর্থ-সামাজিল লক্ষ্য ঘোষণা এবগ বাস্তবে তা কার্যকর করার জন্য দলীয় সঙ্কীর্ণতামুক্ত ও ন্যায়-নীতিভিত্তিক প্রশসানিক নিরপেক্ষতার প্রতি তাজউদ্দিনের অবিচল নিষ্ঠাই নতুন সরকারের অন্তর্বতী শিল্প-ব্যবস্থাপনার নীতিতে প্রতিফলিত হয়। ৩১ শে ডিসেম্বর মন্ত্রীসভা ব্যাংকসমূহের প্রশাসক নিযুক্ত করে। ১৯৭২ সালের ১ জানুয়ারী থেকে ব্যাংকসমূহ অস্বাভাবিক কার্জকর্ম শুরু হয় ব্যাংক ও ইন্সুওরেন্স কোম্পানীসমূহ জাতীয়করণ করা হয়, ৭ই জানুয়ারী। (বাংলাদেশ অব্জারভার/মূলধারা’ ৭১)

‘ভেঙ্গেছে দুয়ার এসেছ জ্যোর্তিময়, তোমারই হোক জয়’

Reference:

একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী