You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.15 | ৮ অগ্রহয়াণ ১৩৭৮ বুধবার ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ | একাত্তরের দশ মাস - রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী - সংগ্রামের নোটবুক

৮ অগ্রহয়াণ ১৩৭৮ বুধবার ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১

[মার্কিন সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরে আগমণ নিয়ে মুক্তিবাহিনীদের মাঝে প্রচণ্ড ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। দ্রুত আত্মসমর্পণের চেষ্টায় প্রচণ্ড লড়াই চলছে বিভিন্ন এলাকায়। লেঃ জেঃ নিয়াজী শর্তসাপেক্ষ আত্মসমপর্ণের প্রস্তাব মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে পাঠালেন। ইসলামাবাদের মার্কিন দূতাবাস বহু চেষ্টা করেন সেদিন জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানকে ধরতে পারেনি। ভারত সরকারের কাছে নিয়াজীর শর্তসাপেক্ষ।

আত্মসমর্পনের বার্তা পৌঁছে। ভারত সরকার এ প্রস্তাব সঙ্গে সঙ্গে নাকচ করে দিলেন। বিনাশর্তে আত্নসমর্পন করতে হবে। জেনারেল মানেকশ, তাঁর শেষ বার্তায়  সকাল ন’টার মধ্যে বেতারে জানাতে হবে বিনাশর্তে আত্নসমর্পন করেছেন কিনা। বেতার ফ্রিকোয়েনসিও জানিয়ে দেন।] — (লেখক)

—যৌথবাহিনীতে সামিল হয়ে টাংগাইল মুক্তিবাহিনীর ছয়হাজার যোদ্ধা ঢাকার দিকে এগিয়ে যায়। বিগ্রেডিয়ার ক্লের বিগ্রেড যখন কড্ডায় অবস্থান নিয়েছিল তখন নবীনগর সাভারের রাস্তা ধরে। বিগ্রেডিয়ার মানসিংয়ের নেতৃত্বে যৌথবাহিনী ঢাকার দিকে এগুচ্ছিল। সন্ধ্যায় তারা নবীনগর ঢাকা যশোহর রোডের সংযোগ স্থলে পৌঁছে যায়। জাহাঙ্গীরনগরে হানাদার বাহিনীর সাথে যৌথবাহিনীর তুমুল যুদ্ধ হয়। রাত তিনটায় চরম সময় ঘনিয়ে এলো। যৌথবাহিনী হানাদার ঘাঁটির পঞ্চাশ গজের মধ্যে পৌঁছে যায়। হানাদারদের সত্তুর আশাটি লাশ যৌথবাহিনীর হাতে এসে যায়। তবু তারা আত্নসমর্পণ করছিল না। রাত সাড়ে চারটায় সাভারের হানাদার ঘাঁটির পতন ঘটলো। এখানে একশ চল্লিশ জন নিহত ও একশ সত্তুর জন আহত হলো। যৌথবাহিনীর পক্ষে বারজন শহীদ ও পাঁচ জন আহত হয়। এ যুদ্ধে বিগ্রেডিয়ার মানসিং (বাবাজী) মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিলেন ও দিলেন।

নিরাপত্তা পরিষদে ব্রিটেন এবং ফ্রান্স খসড়া প্রস্তাবে ভারত ও পাকিস্তানকে অবিলম্বে স্থায়ী যুদ্ধ বিরতি কার্যকর করার ও সংশ্লিষ্ট জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষ অনুযায়ী নির্বাচিত গনপ্রতিনিধিদের সাথে রাজনৈতিক সমাধানের আহবান জানানো হয়। উপমহাদেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পারে এইরুপ কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্যও সদস্য রাষ্ট্র সমূহের প্রতি আবেদন জানানো হয়।

ভারতীয় লক্সভায় শ্রিসমরগুহ, মধুণ্ডাবতে, এস, এম ব্যানারর্জি সহ সংসদের উভয়কক্ষে সদস্যরা বঙ্গোপসাগরে মার্কিন সপ্তম নৌবহরের প্রবেশ সম্পর্কে সকারের কাছ থেকে বিবৃতি দাবি করেন। সকার অবশ্য এ ব্যাপারে কোন বিবৃতি দেননি।

   ইউ, পি, আই সংবাদ সংস্থার খবরে প্রকাশ পাকিস্তানের সহ প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো আজ নাটকীয়ভাবে সবকটি খসড়া প্রস্তাব ছিরে ফেলে সদলবলে নিরাপত্তা পরিষদ থেকে বেরিয়ে যান। পূর্বে তিনি তাঁর ভাষণে বলেন, এটাই বোধ হয় আমার শেষ বক্তৃতা। এখানে আমরা আত্নসমর্পণ মেনে নিতে আসিনি। জাতিসংঘকে জালিয়াতি ও ধোঁকার পীঠস্থান আখ্যা দিয়ে ভুট্টো বলেন, জাতিসংঘ শুধু কথার ফুলঝুরি ছুতিয়ে চলেছে, ব্রিটেন এবং ফ্রান্সকে আক্রমণ করে পাক প্রতিনিধি ভুট্টো সাহেব বলেন, এই দু’টি দেশগ সুস্পষ্ট ভাবে কোনও পক্ষ না নেওয়ার ফলেই পাক ভারত যুদ্ধ সম্পর্কে কোনরকম চুক্তি সম্পাদিত হতে পারল না। সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রশংসা করে তিনি বলেন, এরা একটি নির্দিষ্ট পথ বেছে নিয়েছেন। চীনা প্রতিনিধিদের দিকে তাকিয়ে ভুট্টো বলেন, ন্যায় নীতির পক্ষে দাড়িয়ে চীন যা করল তাঁর জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ থাকবো। ভুট্টোর শেষ কথাঃ চললাম যুদ্ধ করতে। বুধবার রাত ২টা পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে মূলতবি রাখা হয়। উল্লেখ্য জেনারেল নিয়াজী ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন ঢাকা থেকে এই সংবাদ আসার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরী বৈঠক ডাকা হয়। (আঃ বাঃ প ১৬,১২,৭১)

আমেরিকায় ভারতীয় দূত শ্রীলক্ষ্মী কান্ত ঝা (এল, কে, ঝাঁ) সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, পাকসৈন্য ও বিহারীদের সরিয়ে নিতে মার্কিন সপ্তম নৌবহর যদি বাংলাদেশে বেড়াতে চায় তাহলে এই একতরফা ব্যবস্থার দরুন পরিস্থিতি দুরুহ হয়ে উঠবে এবং সমস্ত ব্যাপারটি অনেক বিপদজনক হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ থেকে যদি পাকসৈন্য সরিয়ে নেওয়া হয় তা হলে এই কাজকে আমরা শত্রুতা বলেই গণ্য করব। (অঃ বঃ পঃ ১৬:১২:৭১)

-১৫ তারিখের রাত্রে চারজন ভারতীয় অধিনায়ক বসলেন ঢাকা বিজয়ের পরিকল্পনা করবার জন্য। দুশমন্দের মতগতি দেখে মনে হচ্ছে ওরা সহজে আত্মসমর্পণ করবে না। সুতুরাং এবার শেষ আঘাত এবং কঠিন আঘাত আনতে হবে। জওয়ানরা ঢাকার উপকন্ঠ ঘিরে ফেলেছে, কিন্তু পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তারা আর অগ্রসর হতে পারছেনা। টাঙ্গাইলের হেড কোয়ার্টারে তখন চারজন অধিনায়ক বসে সিদ্ধান্ত নিলেন ঠিক হল, জয়দেবপুরের কালাম আর অগ্রসর হবেনা। সাভারের কলাম আক্রমণ চালিয়ে এই অবসরে মিত্র বাহিনীর এক ব্যাটালিয়ন ও কাদেরিয়া বাহিনী এক ব্যাটালিয়ান সাভারকে পাশ কাটিয়ে মিরপুরের দিকে অগ্রসর হবে। এই পরিকল্পনা অনুসারে মিত্র ও মুক্তিবাহিনী দুই ব্যাটালিয়ন সৈন্য সাভারের রাজাকার ক্যাম্প (পাক বাহিনীর ঘাঁটি) বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা এড়িয়ে সাভারের বাজারের কাছা কাছি অবস্থান নিল। তারা অধিনায়কদের পরবর্তী নির্দেশের প্রতীক্ষায় সাভারেই রাত্রিযাপন করল।

-একজন ভারতীয় মুখপাত্র সন্ধ্যায় নিয়াজি ও মানেকশ’র মধ্যে বার্তা বিনিময়ের খবর দেন। ঢাকায় নিরুপায় পাকিস্তানী সেনানায়ক নিয়াজি এখন চান যুদ্ধ বিরতি। তার এই আরজি ভারতের সেনানায়ক জেনারেল মানেকশ সমীপে পাঠিয়ে দিয়েছেন। দিল্লির মার্কিন দূতাবাস। জেনারেল মানেকশ বলেছেন, যুদ্ধ বিরতি নয়, আত্মসমর্পণ করুন। আমি আশা করি, বাংলাদেশে আপনার আজ্ঞাবহ সৈনিকদের অবিলম্বে যুদ্ধ থামাতে বলবেন, এবং আমার আগুয়ান সেনাবাহিনী যেখানেই দেখা যাবে সেখানে তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করার ও হুকুম দেবেন।

-ঢাকার ওপর আজ বিকাল পাঁচটা থেকে আগামীকাল সকাল নটা পর্যন্ত বিমানবাহিনীর আক্রমণ বন্ধ। তবে স্থলবাহিনী এবং মুক্তিফৌজ যথারীতি কাজ চালিয়ে যাবেন। জেনারেল মানেকশর উত্তরও গিয়েছে মার্কিন দূতাবাস মারফৎ।

-গণপ্রজনাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার একতরফাভাবে ঘোষনা করেছে যে, যদিও বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য নয় (বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্য হয়) তবু তারা জাতিসংঘ সনদ এবং জেনেভা চুক্তিকে সম্মান দেবে। (আঃ বাঃ পঃ ১৬.১২.৭১)

-ভারত সরকারের জনৈক মুখপাত্রকে একজন মার্কিন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, পশ্চিম পাকিস্তানীর সৈন্য এবং অবাঙ্গালী অসামরিক জনসাধারণকে সরানের জন্য আমেরিকা কোন ব্যবস্থা নিলে তাকে নয়া দিল্লী কীভাবে দেখবেন? মুখপাত্রটি বলেন, যুদ্ধ বন্দীদের নিরাপদে রক্ষার ব্যবস্থা করা আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বিজয়ী দেশেরই দায়িত্ব। (আঃ বাঃ প)

-মার্কিন সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগের এসে হাজির হয়। এই বহরে আছে পরমাণু শক্তিচালিত বিমানবাহিনী জাহাজ এন্টারপ্রাইজ। সঙ্গে আরো সাতটি রণতরী। এদিন সিঙ্গাপুর থেকে ইউ পি আই এ খবর দেয়।

-মার্কিন সপ্তম নৌবহরের সাত আটটি জাহাজ সোমবার সিঙ্গাপুর অতিক্রমের পর মালাক্কা প্রণালীতে প্রবেশ করে ভারত মহাসাগরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সিঙ্গাপুরের নির্ভযোগ্য মহল থেকে আজ এ খবর জানানো হয়। ভারতীয় নৌবহর কোন পর্যবেক্ষন জাহাজ মার্কিন জাহাজের গতিবিধি লক্ষ্য করেছে কিনা জিজ্ঞাসা করা হয়ে ভারতীয় মুখপাত্র নেতিবাচক উত্তর দেন।

-টোকিও থেকে এপি জানিয়েছিল, কুড়িটি সোভিয়েত রণতরীও ভারত মহাসাগর এসে জড়ো হল। জাপানী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, গত ৯ ডিসেম্বর জাপানের দক্ষিণতম প্রান্ত ও কোরিয়া উপদ্বীপের মধ্যবর্তী সুসীমা প্রণালীর ভিতর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রবাহী একটি সোভিয়েত ফ্রিগেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারে এমন একটি ডুবোজাহাজও বঙ্গোপসাগরের দিকে পাড়ি দেয়।

-নয়াদিল্লীতে একজন সরকারী মুখপাত্র বলেন, গোড়ায় বলা হচ্ছিল, মার্কিন নৌবহর শুধু মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধার করতেই আসছে। কিন্তু বিগত ৩৬ ঘন্টা ধরে বলা হচ্ছে রক্তপাতের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় পাকবাহিনী ও বিহারী মুসলমানদের অপসারণের জন্যই ওই নৌবহর আসছে।

–আনন্দবাজার পত্রিকায় ৭ কলাম ব্যাপী সংবাদ শিরোনামঃ

  গভর্ণর মালিক সহ অসামরিক শাসকদের পদত্যাগ

  রেডক্রসের ছত্রচ্ছায়ায় আশ্রয়

  নয়াদিল্লী থেকে রাজধানীর রাজনৈতিক সংবাদদাতার প্রতিবেদেনঃ

‘জঙ্গিশাহীর পূর্বঞ্চলের রাজধানী খোদ ঢাকাতেই এখন সামরিক সরকার ভেঙ্গে পড়েছে। মিত্র ও মুক্তিবাহিনী যখন শেষ দুর্গ ঢাকার প্রতিরক্ষা বেষ্টনী ভাঙ্গা শুরু করেছে প্রশাসকদের মধ্যে তখনই পদত্যাগের ও আন্তর্জাতিক রেডক্রসের নিরাপদ আস্তানায় আশ্রয় নেবার হিড়িক পড়ে গেছে। আর এই পদত্যাগকারীদের সর্বাগ্রে রয়েছেন পুতুল সরকারের প্রধান গভর্ণর ডাঃ এ এম মালিক স্বয়ং।

-দখলদার খান সেনাদের প্রধান লেঃ জেঃ এ, এ, কে, নিয়াজি অবশ্য এখনও গোঁ ছাড়েননি। তিনি নাকি শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবেন। তাতে যদি ঢাকা ধ্বংস হয় হবে। এই তাঁর অভিমত। অগত্যা উপায়হীন হয়ে ভারতীয় জওয়ান ও মুক্তিবাহিনীর সৈন্যরা সামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপর গোলার আঘাত হেনে চলেছেন।

-ঢাকায় রেডক্রস আন্তর্জাতিক কমিটির প্রতিনিধি মিঃ রেমণ্ড তার বার্তায় জেনেভার সদর দফতরকে জানিয়ে ছিলেন যে, এই সমস্ত অফিসারদের জন্য ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি চেয়ে তাকে যে খবর দেওয়া হয়। রেডক্রসের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থা এই প্রথম “বাংলাদেশ সরকার” এর কথা বললেন। আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি জেনেভাস্থ তাঁদের সদরদফতর থেকে মিত্র ও মুক্তি বাহিনীর যুক্ত কমাণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেনঃ ঢাকা এলাকায় সংগ্রামরত সৈনিকদেরও যেন এই সংবাদ জানিয়ে দেওয়া হয়। পদত্যাগকারীদের যেন রক্ষা করা হয়। উল্লেখ্য স্বাধীন বাংলাবেতার কেন্দ্র ও আকাশবাণী থেকে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল নিরপেক্ষ এলাকা ঘোষণার সরকারী নির্দেশ জানান হয়। দিল্লীস্থ রেডক্রস প্রতিনিধি মিঃ পাসকুয়েরের কাছে বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশ পৌঁছে যায়।

-জাতিসংঘ পোলিশ প্রতিনিধির প্রস্তাবে বাঙালীদের মনে কৌতুহল সৃষ্টি হয়। পর্যবেক্ষকদের ধারণা পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবার ঈঙ্গিত বলে মনে করেন। একটি ব্রিটিশ-ফারসী আপোষ প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করেই পাক ভারত সংঘর্ষ অবসানের চেষ্টা চলেছে। ভারত, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশের প্রতিনিধি সঙ্গে আরও আলোচনা জন্য নিরপত্তা পরিষদের বৈঠক মুলতবি রাখার প্রস্তাব আনেন ব্রিটেনের স্যার কলিন ও ক্লাউ, ১০-০ ভোটে তাঁর প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। সর্বশেষ খবরে জানা যায়, আজ (১৬ ডিসেম্বর) ভারতীয় সময় রাত ৯টায় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক বসতে পারে। চীন বৈঠক মুলতুবি রাখার প্রস্তাবে নিরপেক্ষ ছিল।

-পাকিস্তানী ঘাঁটি খাদিম নগরের ডানদিক থেকে মিত্রবাহিনী ও বামদিক থকী চার নম্বর সেক্টরের মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করে। সিলেট মুক্ত হয়েছিল ডিসেম্বর ১৭ (১০: খ পৃঃ ৭৬১)

মার্কিন-সপ্তম নৌবহরের বিভিন্ন বর্ণনাসহ কিসিং কন্টেম্পরারী আর্কাইভস লিখেছেঃ

              U.S Warship sent to Bay of Bengal

“It was reported from Saigan and Washington on Dec 18 that elements of the U.S. Seventh Fleet had left positions of South Vietnam on Dec.10 and were moving towards the Bay of Bengal. The task force, which consisted of the aircraft carrier Enterprise, an amphibious assault ship, a guided missile frigate, four guided missile destroyers and a landing craft, passed secretly through the Straits of Malacca in two groups on Dec 13-14 and was reported Dec. 15 t have entered the Bay of Bengal. Indian official spokesmen stated in New Delhi on Dec 15 that Mr, Jha had sought clarifications in Washington about the movements of the Seventh Fleet, but that it had not been forthcoming.

  U.S official spokesman refused to discuss the movements of the task force, but Mr. Melvin Laird, the Defence Secretary, Stated on Dec 14 that the Administration had “certain” contingency plans for evacuation of American citizens from East Pakistan. This explanation was received with scepticism in New Delhi, Where it was pointed out that 114 U.S citizens had already been evacuated from Dacca on Dec.12, citizens and that the 47 Americans still in East Pakistan had remained there of their own free will. On Dec.15 officials stated in Washington that the ships might help to evacuate the Pakistani forces from East Pakistan if a cease-fire were agreed upon and it was generally In support of this theory, the Indian press pointed out: (1) that Major-General Farman Ali Khan (military adviser to the Governor of East Pakistan) had proposed a cease-fire and the repartition of the Pakistani forces to West Pakistan on Dec.10, with President Yahya-Khan’s approval; (2) that the President had countermanded this proposal on Dec. 11’ apparently after learning of the movements of the Seventh Fleet, and had assured Liet-General Niazi (the Pakistani Commander in East Pakistan), in a message which was intercepted and decoded by the Indian Army, that the United States and China would intervene to save Pakistan; (3) that General Niazi had

            The Statesman commented for which “there must hardly be a parallel in the history of warfare.”

                                    (KCA,PP.25072)

পাকিস্তানের সহ প্রধানমন্ত্রী জেভ, এ, ভুট্টোর নিরপত্তা পরিষদের ভূমিকা সম্বন্ধে কিসিং কন্টেম্পরারী আর্কাইভস লিখেছেঃ

 When the Security council met on Dec. 15 at Mr. Bhutto’s request he made violent speech in which he accused the Council of “dilatory tactics and “filibustering”, called the U.N a fraud and a farce”. and denounced Britain and France for the neutral attitude. He then tore up his notes and walked out, declaring that “I will not be party to the ignominious surrender of part of my country.” (K.C.A pp. 25072-3)

             জাতিসংঘের দুটি খসড়া প্রস্তাব ছিল নিম্নরূপঃ

Two draft resolution were submitted on Dec.15: (1) An Anglo-French resolution calling for a cessation of hostilities, the urgent conclusion of a comprehensive political settlement, and the appointment by the Secretary-General of a special representative to lend his good offices, in a particular for the solution of humanitarian problems”. (2) A Polish resolution calling for a peaceful transfer of power to the representative of the people lawfully elected in December 1970” and negotiations between India and Pakistan for troop withdrawals in the western theatre.

(K.C.A PP. 25073)

-যুদ্ধের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও ঢাকার পাকসেনাদের অবস্থা প্রসঙ্গে মঈদুল হাসান লিখেছেনঃ চূড়ান্ত লড়াই-এ ঢাকার সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির আশংকা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু সমগ্র আকাশ জুড়ে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একচ্ছত্র অধিকার, ঢাকার পাকিস্তানী সামরিক অবস্থানের বিরুদ্ধে তাদের নির্ভুল ও ক্রম আক্রমণ রচনা, ভারতীয় নৌবাহিনী কর্তৃক পলায়্ন উপযোগী সকল সমুদ্র যানের ধ্বংস সাধন। ভারতীয় স্থল বাহিনীর পূর্ব পরিকল্পিত অভিযানের মুখে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খণ্ড বিখণ্ড পাকিস্তানী বাহিনীর পরাজয় বরণ, ঢাকার ভিতরে সর্বত্র বিরুদ্ধাচারী মানুষ সুযোগের প্রতীক্ষারত অগণিত মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকার চারিপাশে ভারতের ও বাংলাদেশের মিলিত বাহিনীর ক্রম সম্মুচিত বেষ্টনী এবং শেষ ভরসার স্থল আমেরিকা ও চীনের প্রতিশ্রুত হস্তক্ষেপ পুনরায় পিছিয়ে যাওয়া এই সমস্ত কিছুর একত্র সমাবেশের ফলে ঢাকায় পাকিস্তানী সেনানায়কদের মনোবল উঁচু রাখার সামান্যতম অবলম্বন কোথাও ছিল না। (মূলধারা ৭১ পৃ ২২৯)

-ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী মার্কিন প্রেসিডেন্ট মিঃ রিচার্ড নিক্সনের কাছে যে পত্র লিখেন তা নিম্নরূপ। এই পত্রে তিনি ভারতের নীতিগত ভূমিকার বিশ্লেষণ করেছেন এবং কতিপয় মার্কিন মুখপাত্রের উক্তির প্রত্যুত্তর দিয়েছেন। এ পত্র এক ঐতিহাসিক দলিল।

            Mrs. Gandhi’s Letter to President Nixon

In a letter of Dec. 15 to President Nixon, Mrs, Gandhi strongly defended Indian’s policy and protested against the attacks upon it by U.S spokesmen in the UN and elsewhere.

“ I am writing at a movement of deep anguish at the unhappy turn which the relations of our two countries have taken.” Mrs. Gandhi said,” I am setting aside all pride, prejudice and passion and trying as calmly as I can to analyse once again the origins of the tragedy which is being enacted. There are moments in history when brooding tragedy and its dark shadows can lightened by recalling great moments which has inspired millions of people to die for liberty was declaration independence by the United States of America. That declaration stated that whenever any form of government becomes destructive of man’s inalienable rights to life, liberty and the pursuit of Happiness, it was the right of the people to alter or abolish it.

“ All unprejudiced persons objectively surveying the grim events in Bangladesh since March 25 have recognized the revolt of 75,000000 people, a people who were forced to the conclusion that neither their life nor their liberty, to nothing of the possibility of pursuit of happiness, was available to them The world press, radio and television have faithfully recorded the story. The most perceptive of America scholars who are knowledgeable about the affairs of this subcontinent revealed the anatomy of East Bengals frustrations.

“The tragic war which is continuing could have been averted if, during the nine months prior to the Pakistan attack on us Dec.3, the great leaders of the world had paid some attention to the fact of the revolt had tried to see the reality of the situation and searched for genuine basis for reconciliations. I wrote letters along these lines. I undertook a tour in quest of a time when it was extremely difficult to leave the country in the presenting to some of the leaders of the world what situations was. There was sympathy and support of the refugees but disease itself was ignored.

“War could also have avoided if the power, influence and authority of all States and above all of the United States had go Sheikh Mujibur Rahman released. Instead we were told that a civilian administration was being installed. Everyone knows that this civilian Administration was a farce. Today farce has turned into tragedy. Lip service was paid to the need for a political solution, but not a single worthwhile step was taken to bring this about. Instead the rulers of West Pakistan went ahead holding farcical elections to seats which had been arbitrarily declared vacant.

“There was not even a whisper that anyone from the outside world had tried to have contact with Mujibur Rahman. Our earnest pleas that Sheikh Mujibur Rahman should be released or that even if he were to be kept under detention, contact with him might be established [were 

 Not considered practical, on the ground that the U.S.A could not urge policies which might lead to the overthrow of President Yahya Khan. While the Unites States recognized that Mujib was a core factor in the situation and that unquestionably in the long run Pakistan must acquiesce in the direction of greater autonomy for East Pakistan, arguments were advanced to demonstrate the fragility of the situation and of Yahya Khan’s difficulty. Mr. President, May I ask you in a sincerity, was the release or even secret negotiations with a single human benig namely Sheikh Mujibur Rahman, more disastrous than the waging of war?

“The fact of the matter is the matter is that the rulers of West Pakistan got away with the impression that they could do what the liked, because no one, not even the United States would choose to take a public position that, while Pakistan’s integrity was certainly sacrosanct human rights and liberty were no less so ad that there was a necessary interconnection between the inviolability of States and the contentment of their people.

“Despite continues defiance by the rulers of Pakistan of the most elementary facts of life, we would still have tried our hardest to restrain the mounting pressure as we had for nine long months and war could have been prevent3ed had the rulers of Pakistan not launched a massive attack on us by bombing our airfields in Amritsar, Pathankot, Srinagar, Avantipur, Uttarial, Jodhpur, Ambala and Agra in broad day light on Dec.3 at a time when I was away in Calcutta my colleague the Defence Minister was in Patna and was due to leave for Bangalore in the south and another senior colleague of mine the Finance Minister was in Bombay. The fact that this initiative was taken at this particular time of our absence from the capital showed particular time of our absence from the capital showed perfidious intentions. IN the face of this could we simple sit back trusting that the rulers of Pakistan or those who were advising them and peaceful constructive and reasonable intent?

We are asked what we want. We seek nothing for ourselves. We do not want any territory of what was east.

Pakistan and now constitutes Bangladesh. We do not want to any territory of West Pakistan. We do want lasting peace with Pakistan. But will Pakistan give up its ceaseless and yet pointless agitation of the last 24 years over Kashmir? Are they willing to give up their hate campaign and posture of perpetual hostility towards India.
How many times in the last 24 years have my father and I offered pact of non-aggression to Pakistan? It is a matter of recorded history that each time such an offer was made. Pakistan rejected it out of hand.

We are deeply hurt by innuendoes and insinuations that it was we who have precipitated the crisis or in any way thwarted or hindered a solution. During my visits to the United States, the United Kingdom, France, Germany, United States, the United Kingdom, France, Germany, Austria and Belgium the point. I emphasized, publicly as well as privately was the immediate need for a political settlement.  We awaited nine months for it. When Dr. Kissinger cam in August 1971. I had emphasized to him the importance of seeking an early political settlement. But we have not received even to this day the barest frame work of a settlement which would take into account the facts as they are and not was we imagine them to be.

“But That as it may, it is my earnest and sincere hope that with all the knowledge and deep understanding of human affairs you as President of the United States and reflecting the will the aspirations and idealism of the great American people will at least let me know were precisely we have gone wrong before your representatives or spokesmen deal with us with such harshness of language.

An official Indian spokesman confirmed on Dec. 20 that Mrs. Gandhi had received a reply from President Nixon but declined to disclose its contents (KCA, PP- 25073)

              পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন সংগঠনের ভূমিকা

-গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ব্যাপারে মার্কিন নীতির প্রতিবাদে দক্ষিণ ও মধ্য কলকাতা যুব কংগ্রেস (মহাজাতি সদন) এর পক্ষ থেকে বুধবার যুক্তভাবে কলকাতায় মার্কিন দূতবাস-এর সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে পরে তারা দূতবাসের সামনে প্রেসিডেন্ট নিকসন ও ইয়াহিয়া খার দু’টি কুশপুত্তলিকা দাহ করেন এবং মার্কিন বিরোধী ধ্বনি দেন।

  মৌলানা আবুল কালাম আজাদ কলেজের ছাত্রদের পক্ষ থেকেও মার্কিন সপ্তম নৌবহরের আগমনের প্রতিবাদে এ দিন মার্কিন দুতবাসের সামনে বিক্ষোভ জানানো হয়।

  বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং অন্যান্য সংঘঠন কলকাতার মার্কিন নীতির বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে বিক্ষোভের তোড়জোড় চালাচ্ছেন।

ভারতীয় যুব কংগ্রেস সভাপতি শ্রী প্রিয়রঞ্জন দাস মুন্সী এম, পি জানানঃ শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর বলিষ্ঠ পদক্ষেপের পিছনে দলমত নির্বিশেষে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এবং স্বাধীন বাংলাদেশের সমর্থনে ১৯ ডিসেম্বর রবিবার বেলা ১টায় রাজা সুবোধ মল্লিক স্কয়ারে এক যুব ছাত্র সমাবেশ হবে। তিনি কলকাতা চব্বিশ পরগনা নদীয়া হাওড়া ও হুগলী জেলা যুব কংগ্রেস এবং ছাত্র পরিষদকে পতাকা ও ফেসঅটুন সহ ওই সমাবেশ মিছিল করে যোগ দিতে বলেছেন।

নিখিল ভারত যুব কংগ্রেসের সভাপতি শ্রী প্রিয়রঞ্জন দাস মুন্সী ও পশ্চিমবঙ্গের যুব সঙ্গের সাধারণ সম্পাদক শ্রীগুরুদাস দাশগুপ্ত এক যৌথ বিবৃতিতে জানাচ্ছেন জে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চূড়ান্ত সাফল্যের মুখে। আর পশ্চিম রনাঙ্গনে ভারতীয় বাহিনী হানাদেয়ার পাকিস্তানী আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ভারতের অখণ্ডতা রক্ষার সংগ্রামে রত।

আনন্দের বিষয় এই জাতীয় সংকটের মুখে ভারতের অকৃত্রিম বন্ধু সোভিয়েত সকার এই নতুন মার্কিন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ধিককার দিয়েছেন। মার্কিন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যুব সমাজের বিক্ষোভকে ভাষা দেবার জন্য আমরা আগামী শুক্রবার ১৭ ডিসেম্বর সারা পশ্চিম বাংলায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দিবস হিসাবে ব্যাপক্তম ঐক্যের ভিক্তিতে মিছিল ও সমাবেশ, মারফত বিক্ষোভ আহবান জানাচ্ছি। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এদিন দুপুর ১১টায় সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে কলকাতা হাওড়া, নদীয়া, হুগলী, ও চব্বিশ পরগনা যুবকর্মীরা জমায়েত হয়ে মার্কিন দূতবাসের সানে বিক্ষোভ সংঘঠিত করবেন। [ আনন্দবাজার পত্রিকা ১৬.১২,৭১]

১৫ ডিসেম্বর বেলা তিনটার পর ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর চীফ অব স্টাফ জেনারেল স্যাম মানেকশ পরদিন (১৬ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার মধ্যে আত্নসমর্পণ করার জন্য পাকিস্তান বাহিনীর প্রতি এফ জরুরী নির্দেশ জারী করেন। তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী বেলা ৫টা থেকে ভারতীয় বিমান বাহিনী কর্তৃক বোমাবর্ষণ বন্ধ রাখা হবে। সকাল ৯টার মধ্যে লেফটেনেন্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজঈ আত্নসমর্পণ করতে রাজী না হলে পুরোদমে বোমাবর্ষণ শুরু করা হবে বলে তিনি সাবধান বাণী উচ্চারণ করেন। (‘দি গার্ডিয়ান’ ১৬ ডিসেম্বর)

১৬ ডিসেম্বর দি গার্ডিয়ান-এর সম্পাদকীয় নিবন্ধে ভূট্টো কর্তৃক ভারতের এক হাজার বছর যাবৎ যুদ্ধ করার প্রতিজ্ঞা সম্পর্কে বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরণের হাস্যকর কথা বলার মানে হয়না।

এই নিবন্ধে আরও বলা হয়, ভারত কর্তৃক পশ্চিম পাকিস্তানে বড় রকমের সামরিক আক্রমণ চালানো হবে না বলে বিশ্বাস করার সংগত কারণ রয়েছে। ইয়াহিয়ার সৈন্যবাহিনীকে তাড়িয়ে বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা করে, শরণার্থঈদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপজুক্ত পরিবেশ

Reference:

একাত্তরের দশ মাসরবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী