লাহাের বিমানবন্দরে ছিনতাইকৃত ভারতীয় বিমান ধ্বংস
ভারত সরকারের তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার
নয়াদিল্লী ২ ফেব্রুয়ারি (ইউএন,আই) – ছিনতাইকারীরা শেষ পর্যন্ত ছিনতাইকৃত ভারতীয় ফকার বিমানটিকে আজ ভারতীয় সময় রাত্রি ৮-৩৫ মিনিটে লাহোের বিমানবন্দরে ধ্বংস করে দিয়েছে।
পাকিস্তান রেডিও ঐ মর্মে ঘােষণা করে বলেছে যে, প্রথম বিস্ফোরণের পরে আরাে দুটি বিস্ফোরণ ঘটে।
প্রথম বিস্ফোরণের সময় ছিনতাইকারীরা বিমানটির মধ্যেই ছিল এবং পরে আগুন ছড়িয়ে পড়লে তারা লাফিয়ে পড়ে প্রাণে বাঁচে।
দমকল বাহিনীকেও ছিনতাইকারীরা বাধা দেয় বলে সংবাদে বলা হয়েছে।
বিমানটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়েছে। ছিনতাইকারীরা সামান্য আহত হওয়ার পর তাদেরকে হাসপাতালে পাঠানাে হয় বলেও সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখযােগ্য যে, গত শনিবার ইন্ডিয়ান এয়ার লাইনস এর উক্ত ফকার বিমানটি শ্রীনগর থেকে জম্মু যাওয়ার পথে ছিনতাই হয় এবং লাহাের বিমান বন্দরে বিমানটিকে অবতরণ করতে বাধ্য করানাে হয়।
ভারত সরকার লাহাের বিমান বন্দরে ভারতীয় ফকার বিমান ধ্বংসের ঘটনায় তীব্র ধিক্কার জানিয়েছে।
প্রতিরক্ষা দপ্তরের জনৈক মুখপাত্র বলেছেন যে “পাকিস্তান হাইকমিশনার আজ সন্ধ্যায় ছিনতাইকৃত বিমানটিকে ফেরৎ পাঠানাে হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও এই ঘটনা ঘটায় আমরা বিস্মিত ও মর্মাহত।”
বিমানটি ফিরিয়ে দেবার ব্যাপারে পাকিস্তানের অহেতুক বিলম্বে ভারত সরকার লজ্জা প্রকাশ করেছে এবং বিমানটি ফিরিয়ে দেবার ব্যাপারে পাকিস্তান সরকার কি ব্যবস্থা করেছে তা অবিলম্বে জানাতে বলেছে। আজ ভারত সরকার দ্বিতীয় একটি স্মারকপত্র মারফত এ বক্তব্য ব্যক্ত করেছে।
গত ৩০ জানুয়ারি উক্ত ভারতীয় বিমানটি ছিনতাই করে লাহােরে নীত হয়। ঘটনার তিনদিন পরও বিমানটি এখনাে ভারতের বুকে ফিরে আসে নি। তবে বিমানের ২৬ জন যাত্রী ও ৪ জন চালক গতকাল ভারতে ফিরে এসেছে। পাকিস্তান সরকার ছিনতাইকারীদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে বিমানটি থেকে বের করে আনতে চাইছে। পাকিস্তান নাকি শক্তি প্রয়ােগের পক্ষপাতী নন। ভারতের পাকিস্তান হাই কমিশনের প্রেস কাউন্সিলর শ্রী এম তাই বুট একথা আজ সাংবাদিকদের বলেছেন। শ্ৰী বুট ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে আশ্বাস দিয়েছেন, ছিনতাইকারীরা বিমান ছেড়ে বেরিয়ে আসার অব্যহিত পরেই ওটিকে ভারতে ফিরে আসার ব্যবস্থা করা হবে।
পাকিস্তান সরকারকে প্রদত্ত ভারতের আজকের স্মারকপত্রটি ইসলামাবাদস্থ ভারতীয় হাই কমিশন মারফৎ প্রেরিত হয়। এই স্মারকপত্রে বলা হয়েছে, ভারতীয় ফকার বিমানটিকে ভারতে ফিরিয়ে আনার জন্য একজন চালক দু’দিন অপেক্ষা করে ছিলেন। আরাে বলা হয়েছে, ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং বেসরকারী বিমান পরিবহন মন্ত্রকের পক্ষ থেকে পাকিস্তান সরকারকে বার্তা পাঠানাে সত্ত্বেও এখনাে উক্ত দেশের সরকারি মালপত্র এবং ডাক নিয়ে বিমানটিকে এখনাে এদেশে ফিরে আসবার ব্যবস্থা করে দেয় নি। ভারত সরকার পাক সরকারের এ আচরণে অত্যন্ত লজ্জা বােধ করছে।
বিমান ছিনতাইকারীদের ভারতে ফিরিয়ে দেবার দাবি প্রত্যাখ্যান করার যৌক্তিকতা পাকিস্তান সরকার আজ আবার সাড়ম্বরে প্রকাশ করেছে। এ সম্পর্কে পাকিস্তানের স্পষ্ট মনােভাব হল, ছিনতাইকারীরা ভারতের নাগরিক নন-তারা কাশ্মীরী। পাকিস্তানের মতে কাশ্মীর যেহেতু ভারতের অংশ নয়, তাই কাশ্মীরের লােকও ভারতের নাগরিক নন।
অতএব এদের ভারতে ফিরিয়ে দেবার প্রশ্নই ওঠে না। ছিনতাইকারীকে রাজনৈতিক আশ্রয়দানের সপক্ষে পাকিস্তানের এই ওজর ভারতের কার্যকরী হাইকমিশনারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তান বেতার ঘােষণা থেকে এ সংবাদ জানা গেল।
বিমান ছিনতাই রােধে কঠোর আইন প্রণয়নের প্রস্তাব
জম্মুর এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী শ্রী জে এম সাদিক বলেন বিমান ছিনতাইয়ের অভিযােগে ধৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর সাজা দানের ব্যবস্থা করার জন্য কাশ্মীর সরকার একটি আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেছেন।
শ্রী সাদিক বলেন এ সমস্ত কার্যকলাপ রােধের বিরুদ্ধে সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হলে রাজ্য পুলিশ, গােয়েন্দা পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার মধ্যে সংযুক্তি দরকার। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি সংযােগ রক্ষা করছে না বলে তিনি অভিযােগ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী আজ পরিষ্কার জানান অন্যতম ছিনতাইকারী মহম্মদ হাসিম কুরেশী একটি কেন্দ্রীয় সংস্থার কাজ করতেন। গত বছর কুরেশী স্বয়ং কর্তৃপক্ষকে রাজ্যে বিমান ছিনতাইয়ের সম্ভাবনা প্রকাশ করেন। তখন তাে রাজ্য পুলিস কুরেশীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থা জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেয়।
সংবাদে প্রকাশ, শ্রী কুরেশী সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সাব ইন্সপেক্টর ছিলেন। অবশ্য দিল্লীর তথ্যাভিজ্ঞ মহল এ সংবাদের সত্যতা স্বীকার করেন নি। অথচ শ্রী সাদিক তাকে কেন্দ্রীয় সংস্থার কর্মী বলে চিহ্নিত করেছেন।
শ্রী সাদিক আরে জানান, অপর ছিনতাইকারী মহম্মদ আশরাফ কুরেশীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও প্রতিবেশী। মুখ্যমন্ত্রী সমগ্র ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত দাবি করেছেন। তিনি জানান, কুরেশীকে কি করে কেন্দ্রীয় সংস্থায় নেওয়া হল রাজ্য-পুলিস তা তদন্ত করছে।
মুক্তিফ্রন্টের নায়ক কে?
তথ্যাভিজ্ঞ মহলের সংবাদে প্রকাশ পাকিস্তানে অবস্থিত তথাকথিত মুক্তিফ্রন্টই এই বিমান ছিনতাই সংগঠিত করেছে। মুক্তিফ্রন্টের প্রধান শ্রী মকবুল আমেট বুটও একজন পাকিস্তানী নাগরিক। শ্রীবুট ১৯৬৬ সালে ভারতে অনুপ্রবেশ করেন। ডাকাতি, সিঁদেল চুরি ও হত্যা প্রভৃতি অভিযােগে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু শ্ৰী বুট ১৯৬৮ সালে জেল ভেঙে পালিয়ে যান। তারপরই কাশ্মীরে সশস্ত্র বিদ্রোহ করার উদ্দেশ্য সামনে রেখে তিনি মুক্তি ফ্রন্ট’ সংগঠিত করতে থাকেন। যতদূর জানা গিয়েছে এই তথাকথিত মুক্তিফ্রন্টের লন্ডনে একটি শাখা আছে। শ্রী তারেক আবদুল্লা সেই শাখার নেতা।
সূত্র: কালান্তর, ৩.২. ১৯৭১