You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.18 | পূর্ব-বাংলায় গুলিবর্ষণ সম্পর্কে তদন্ত করা হবে- ইয়াহিয়া খানের নতি স্বীকার | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

পূর্ব-বাংলায় গুলিবর্ষণ সম্পর্কে তদন্ত করা হবে ইয়াহিয়া খানের নতি স্বীকার

নয়াদিল্লী, ১৭ মার্চ (ইউ এন আই) – সম্প্রতি পূর্ব পাকিস্তানে সৈন্যবাহিনীর গুলি বর্ষণের ফলে যে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে পাকিস্তানের জঙ্গী সরকার সে সম্পর্কে তদন্তের জন্য শেখ মুজিবর রহমানের দাবি পূরণে বাধ্য হয়েছে। এবং ইতিমধ্যেই তদন্ত কমিশন গঠনের ঘােষণা করা হয়েছে। এই ঘােষণা নিঃসন্দেহে শেখ মুজিবর রহমানের বিরাট জয়।
শেখ মুজিবরের অন্যান্য দাবি পূরণের সূত্র হিসাবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া সামরিক সরকারের পরিবর্তে একটি অন্তবর্তীকালীন বেসামরিক সরকার গঠন করার জন্য প্রস্তুত আছেন বলে জানা গেছে।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এবং শেখ মুজিবর রহমানের যে আলােচনা চলছে আজ তার দ্বিতীয় দিন। এক ঘন্টা কাল স্থায়ী এই অসমাপ্ত বৈঠক শেষ করে ফিরে আসার পর শেখ মুজিবর রহমান সাংবাদিকদের নিকট বলেন যে এ আলােচনা চলবে। তিনি আলােচনার বিস্তারিত তথ্য জানাতে এবং এ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে অসম্মত হন। শেখ মুজিবর সাংবাদিকদের নিকট ঘােষণা করেন যে আওয়ামী লীগের ৪ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অসহযােগ আন্দোলন চলতে থাকবে।
আগামী ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যােগদানের শর্ত হিসাবে শেখ মুজিবর রহমানের ৪টি দাবির মধ্যে রয়েছে ঃ (১) সামরিক আইন প্রত্যাহার করা (২) সৈন্য বাহিনীকে ব্যারাকে পাঠাতে হবে (৩) নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা (৪) সৈন্যবাহিনীর গণহত্যা সম্পর্কে তদন্ত।
আজ আলােচনার দ্বিতীয় দিনে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক শাসন কর্তা লে. জে. টিক্কা খান সৈন্য বাহিনীর গণহত্যা সম্পর্কে এক তদন্ত কমিশন গঠনের কথা ঘােষণা করেন। প্রাদেশিক হাইকোর্টের অন্যতম বিচারপতির পরিচালনাধীনে এই তদন্ত কমিশন নিযুক্ত করা হবে। এই কমিশনে ৪ জন সদস্য থাকবেন। সামরিক বাহিনী, পুলিস, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্ এবং বেসামরিক দপ্তর থেকে এক জন করে সদস্য গ্রহণ করা হবে। এই তদন্ত কমিশনের গঠনধারা থেকেই বুঝা যায় যে, এই কমিশন সামরিক বাহিনীর অনুগত হবে না।
পর্যবেক্ষণগণ মনে করেন যে, একটি অন্তবর্তী বেসামরিক সরকার গঠনের ফরমূলা সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে শেখ মুজিবরের একটা আলােচনা হয়েছে। এই সময় প্রাক্তন আইন মন্ত্রি ও পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি শ্রী ও আর কর্নলিয়াসের ঢাকায় উপস্থিতির ফলে পর্যবেক্ষক মহলের উপরােক্ত অভিমত সঠিক বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।
একটি খবরে জানা যায় যে, জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও শেখ মুজিবরের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের শেষাংশে শ্ৰী কর্নলিয়াস ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সেক্রেটারি আলােচনায় অংশ গ্রহণ করেন। নথিপত্র আলােচনার সময় উভয় পক্ষের কোনাে সহযােগী উপস্থিত ছিলেন না।
ঢাকা থেকে সাংবাদিকদের এক রিপোের্ট জানা যায় যে, জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও শেখ মুজিবর রহমানের আলােচনায় অপেক্ষাকৃত শ্লথ গতি সত্ত্বেও জনগণ শান্ত রয়েছে।
আওয়ামী লীগ প্রভাবাম্বিত ঢাকা বেতার কেন্দ্রের রাজনৈতিক ভাষ্যকার বলেছেনঃ
এশিয়ার ইতিহাসে এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। এখন থেকে একই রাষ্ট্রের একাংশে প্রাচুর্য ও অন্য অংশে দারিদ্র্য-এই পরিস্থিতির অবসান ঘটবে।
বেতারে ইসলামাবাদের সরকারকে সতর্ক করে দেওয়া হয় যে পূর্ব পাকিস্তানের ৭ কোটি মানুষের উপর ঔপনিবেশিকতার শৃঙ্খল চাপিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য যেন মুখের ন্যায় কোন হিংস্র সামরিক অভিযান পরিচালিত করা না হয়। পূর্ব পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করার কোন অপচেষ্টাকেই সহ্য করা হবে না। আজ শেখ মুজিবর রহমানের ৫২ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ঢাকা বেতার থেকে এক অভিনন্দন জানানাে হয়।

সূত্র: কালান্তর, ১৮.৩. ১৯৭১