ধ্বংসপ্রাপ্ত বিমানের জন্য ক্ষতিপূরণ এবং বিমান ছিনতাইকারীদের প্রত্যর্পণের দাবি
পাক-সরকারের কাছে ভারতের কড়া নােট
নয়াদিল্লী, ৯ ফেব্রুয়ারি – কেন্দ্রীয় সরকার পাকিস্তান সরকারকে আবার জানিয়ে দিয়েছেন ভারতীয় বিমান ছিনতাই সম্পর্কে পাক সরকারের মনােভাব সম্পূর্ণ অসহযােগিতামূলক, নেতিবাচক ও বিঘ্ন সৃষ্টিকারী পাক সরকারকে এই মর্মে হুশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে পাক সরকার যদি ধ্বংসপ্রাপ্ত বিমানটির জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে এবং ২ জন ছিনতাইকারীকে ভারতে বিচারের জন্য ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করে তাহলে অবস্থার অবনতি ঘটতে পারে।
ভারতীয় বিমান ছিনতাই-এর ব্যাপারে দায়িত্ব অস্বীকার করে ৫ ফেব্রুয়ারি ইসলামাবাদ থেকে যে মৌখিক বিবৃতি দেওয়া হয় ভারত সরকার সেটি অগ্রাহ্য করে পাকিস্তান হাই কমিশনকে কড়া জবাব দিয়েছেন।
ভারতীয় বিমান ছিনতাই এর ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে পাক-সরকারের বিরুদ্ধে চিঠিতে অভিযােগ করা হয়েছে।
ভারতীয় বিমানটি ছিনতাই করার ব্যাপারে পাকিস্তানে দায়িত্ব প্রমাণ করার জন্য ১১ টি ঘটনা উত্থাপন করা হয়েছে। এগুলিতে বলা হয়েছে নিজেদের দোষ কবুল করার পর এমনকি ছিনতাইকারীরা যখন বিমানটি ধ্বংস করে ফেলার ভয় দেখাচ্ছে তখনও তাদের নিরস্ত্র করা হয়নি এবং উপরন্ত রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
দুষ্কৃতকারী ও তাদের সহযােগীদের সঙ্গে খােলাখুলিভাবে সংহতি প্রকাশ করা হয়েছে। বিমান ছিনতাইকারীগণকে নিরস্ত্র করার চেষ্টা পর্যন্ত করতে পাক সরকার অস্বীকার করেছেন। দুজন দুষ্কৃতকারীকে খােলাখুলি ভাবে বিমানবন্দর এলাকায় চলা ফেরা করতে হয়েছে— এমন কি তাদের সঙ্গীদের নিকট টেলিফোন করার সুযােগও দেওয়া হয়েছে। শ্রী ভুট্টো মিঞা মহম্মদ আলি কালুর প্রভৃতি রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সলা পরামর্শ করার খেলাখুলি সুযােগ দেওয়া হয়েছে।
বিমান থেকে বেরিয়ে আসার পরও বিমান দস্যরা যখন দমকল বাহিনীকে আগুন নেভানাের কাজে বাধা দেয় তখন তাদের আটকানাে হয়নি। সৈন্যবাহিনী পুলিস ও বিমান কর্মীদের চোখের সামনেই বিমানটি ধ্বংস করে।
চিঠিতে আরাে বলা হয়েছে পাক সরকার ব্যাপারটি সম্মানজনক ভাবে মীমাংসা করার এবং ক্ষতিপূরণ দানের বদলে অপ্রাসঙ্গিক বাইরের ঘটনার অবতারণা করে বিষয়টি গুলিয়ে দেবার চেষ্টা করেছেন। এমনকি তারা ভারতের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক সংহতি প্রশ্ন পর্যন্ত তুলেছেন।
ভারতীয় বিমান ছিনতাই এর ষড়যন্ত্র যে পাকিস্তানের ভেতরেই গজিয়ে উঠছে- এ সম্বন্ধে হুশিয়ার করে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার গত সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানকে যে নােট দেন তার উল্লেখ করে বর্তমান নােটে বলা হয়েছে। কিছুদিন আগেও আন্তর্ঘাতমূলক কাজের সঙ্গে লিপ্ত থাকার অভিযােগে পাকিস্তান হাই কমিশনের ফাস্ট সেক্রেটারি জাফর ইকবাল রাঠোরকে অবাঞ্ছিত ব্যক্তি বলে ভারত থেকে বহিষ্কার করা হয়।
সূত্র: কালান্তর, ১০.২.১৯৭১