ডাক আসিয়াছে
ডাক আসিয়াছে। রক্তের ডাক। চোখের জলের ডাক। ভালােবাসার ডাক।
গণতন্ত্রের পতাকাকে ঊর্ধ্বে তােলার জন্য ভারতবর্ষের কত শহীদ দধীচির মত মৃত্যুবরণ করিয়াছেন। গণতন্ত্রের পতাকাকে উর্ধ্বে তােলার জন্য বাংলাদেশের কত শহীদ দধীচির মত মৃত্যুবরণ করিয়াছেন। তাদের মহান ঐতিহ্য আজ ডাক দিতেছে। তাদের রক্ত ডাক দিতেছে। তাদের স্বপ্ন ডাক দিতেছে।
ঐ শােনাে জননীর কান্না পুত্রের মৃতদেহের সামনে তিনি ডুকরাইয়া কাঁদিয়া উঠিয়া বলিতেছেন? কে এমন সর্বনাশ করিল?
বাংলাদেশের ঘরে ঘরে আজ এই কান্না, এই আর্তনাদ কে এমন সর্বনাশ করিল? বাঙলাদেশের দিকে দিগন্তে আজ এই রুষ্ট প্রশ্ন : কে এমন সর্বনাশ করিল।
কে শ্ৰেণীসংগ্রামের নামে শরিকী সংঘর্ষের রক্তে গােটা দেশে বন্যা বহাইল? কে যুক্তফ্রন্ট ভাঙিল? কে দেশকে পুলিস ও মিলিটারির হাতে তুলিয়া দিল? কে আজ নিজ দলের আধিপত্যের স্বার্থে এমনকি দেশের সীমাবদ্ধ গণতন্ত্রকেও হত্যা করিতে উদ্যত? কে বিরােধী দলের নির্বাচন প্রার্থী ও কর্মী হত্যা করিয়া ভােটদাতাদের ভয় দেখাইতেছে?
ঐ শােননা জননীর কান্না। বাঁশদ্ৰোণীর কমিউনিস্ট নিতাই মুখােপাধ্যায় স্ত্রী ও কন্যার সহিত ঘুমাইতেছিল। ভাের রাতে মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীরা পুলিসের পরিচয়ে ঘরে ঢুকিয়া নিতাইকে হত্যা করে। ঐ শােন জননীর কান্না।
চলাে পুত্রহারা মায়ের ডাকে সাড়া দাও।
চলাে। সদ্য বিধবা জ্যোৎস্নার ডাকে সাড়া দাও। চলাে। সদ্য পিতৃহারা কন্যার ডাকে সাড়া দাও। চলাে। বিচার করি। চলাে। ভয় নাই। আমরা কয়েক কোটি। উহারা কয়েকজন। চলাে। ভয় নাই। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সংগ্রামে আমরা কোনদিন পরাজিত হই নাই। চলাে। ভয় নাই। ইতিহাস আমাদের পক্ষে।
চলাে। শহীদের ডাক রক্তের ডাক জননীর ডাক আসিয়াছে। আজ ভােট। আজ বাংলাদেশে অন্ধকারকে পরাস্ত করিতে হইবে।
সূত্র: কালান্তর, ৯.৩.১৯৭১