You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.09 | সাপ্তাহিক সপ্তাহ-এর সম্পাদকীয়: রণাঙ্গনের অনেক পিছনে | সপ্তাহ - সংগ্রামের নোটবুক

রণাঙ্গনের অনেক পিছনে

রণাঙ্গন এখান থেকে অনেক দূরে। আমি যুদ্ধক্ষেত্রে যাইনি। গিয়েছিলাম যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রায় মাইল চল্লিশ পিছনে যাদের জন্য যুদ্ধ তাদেরই মনেবলে পরিচয় নিতে আর দেখতে মুক্তি সংগ্রামের সঙ্গে তারা কতখানি জড়িত এবং কিভাবে জড়িত।
সীমান্তের কোন লক্ষণই এখানে নেই। দুই রাষ্ট্রের বিভক্তিসূচক কোন নামের ফলক অথবা সীমান্ত বেড়া কিংবা সরকারি বিজ্ঞপ্তি লেখা দুর্বোধ্য পরিভাষাবহুল কোন সাইনবাের্ড নেই। শুকনাে বাঁশপাতা ছড়ানাে গ্রাম্য পথের উপর দিয়ে যেতে যেতে কানে আসছিল মাঝে মাঝে ঘুঘুর ডাক আর শিমুল ফল ফাটার অতি পরিচিত শব্দ। কখন যে এদেশের মাটিতে গিয়ে দাড়ালাম বুঝতেই পারিনি। | লােকে বলছিল সােনাইখালের অর্ধেকটা নাকি ওদের, আর বাকি অর্ধেকটা আমাদের। আন্তর্জাতিক আইনের এই হাস্যকর নির্দেশের স্বীকৃতি জলে স্থলে বাতাসে কোথাও নেই। | এপার থেকেই চোখে পড়ে ওপারে বটতলায় ফেস্টুন সংগ্রাম পরিষদের। ওপারে বটতলার ছায়ায় দুটো টেবিল আর কয়েক বেঞ্চি পেতে বসে আছে সংগ্রাম পরিষদের কয়েকজন নেতা সঙ্গে কয়েকজন ভলান্টিয়ার। চতুর্দিকে কিছু ছেলে বুড়াের ভীড়।
বটতলায় একটা বিশাল ট্রাক দাঁড়িয়ে, তাতে খাবার ও অন্যান্য মালপত্র বােঝাই হচ্ছে। এসব রসদ যাবে এখান থেকে মাইল খানেক পেছনে অ্যাডভানসড় ক্যাম্পে। তারপর সেখান থেকে প্রয়ােজনমতাে রণাঙ্গনে যাবে।
আমাদের আন্দোলনেও যা দেখেছি এখানেও তাই। দশ থেকে চৌদ্দ পর্যন্ত বয়সের অসংখ্য ছেলে ইতঃস্তত কিলবিল করছে। ওদের দেখে মনে মনে হবে কাজের চেয়ে অকাজ এবং গােলমাল চঁাচামেচিই ওরা বেশি করছে। “অ্যায়”। হঠাৎ কর্মকর্তাদের একজন একটি বছর বারাের ছেলেকে ধমকের সুরে ডেকে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে কানে কানে কি একটা বললেন। তারপর একটা খালি পিঠে একটা চাপড় মেরে বললেন ‘যা ছুটউে চাইলে যা, দেরি করবি নে।’ হুকুম পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছোড়ার লিকলিকে পা দুটোতে যেন হরিণের মাংসপেশী সজাগ হয়ে উঠল। ছুটল কিছুদূর খালের পার ধরে ছুটে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে গেল। সামরিক ভাষায় যাকে কুরিয়ার বলে এই মুক্তি সংগ্রামে এই কিশােরেরাও তাই।
অসংখ্য জোয়ান ছেলে ট্রাকে মাল ভর্তি করেছে। এদের অধিকাংশই সেই গ্রামের এবং পাশের গ্রামের
সূত্র: সপ্তাহ, ৯ এপ্রিল ১৯৭১