You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.07 | বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি অভিনন্দন | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি অভিনন্দন

.. শ্রমিক শ্রেণী তাদের ভাইদের সাহায্যের জন্য তাদের আয়ের একাংশ দিয়েছেন তিনি তারও উল্লেখ করেন।
হাঙ্গেরীর কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি আন্দ্রে গাইনেস জানান যে, বাঙলাদেশের নিরস্ত্র জনগণের উপর পাক-বাহিনীর আক্রমণকে সমগ্র হাঙ্গেরীর জনগণ তীব্রভাবে নিন্দা করে। তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে ত্রাণসামগ্রী প্রেরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঘােষণা করেন যে, কেবল মাত্র জাতীয় গণতান্ত্রিক বিধি ও মানবিক অধিকার মেনে নেওয়ার মধ্যে দিয়েই বাঙলাদেশের সকল সমস্যার সমাধান হতে পারে।
পােলিশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিকে ব্যুরিকভস্কি বলেন যে, বাংলাদেশের ঘটনাবলীতে’ পােল্যান্ডের জনগণ গভীরভাবে আঘাত পেয়েছে, তারা শরণার্থীদের সাহায্যে যােগ দিয়েছে। তিনি ঘােষণা করেন যে, ‘বাঙলাদেশের জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমেই যতশীঘ্র সম্ভব শরণার্থীদের তাদের দেশে ফিরে যেতে হবে।”
জামান কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কুর্ট এর্লরেকন বাঙলাদেশের সংগ্রামী জনগেণর সঙ্গে পূর্ণ ভ্রাতৃত্বমূলক সংহতি জ্ঞাপন করেন।
বৃটিশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি উইলিয়াম ওয়েনওয়েন্ট বর্বর অত্যাচারের তীব্র নিন্দা করে বিশদভাবে দেখান যে, তার পার্টি প্রথম থেকেই মুজিবর রহমান ও অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি দাবি করে আসছে। তিনি বলেন, প্রতিটি শােভন বৃটিশ নরনারীই ইয়াহিয়া খানের বর্বরতাকে অত্যন্ত ঘৃণা করেন ও বাঙলাদেশ সগ্রামকে ন্যায়সগ্রাম’ বলে মনে করেন। তিনি বলেন, বৃটিশ কমিউনিস্ট পার্টি শুধু মাত্র বাঙলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তিই চায় না, তাঁদের কাছে গ্রহণযােগ্য রাজনৈতিক সমাধানের জন্য আপস আলােচনাও চায়।
জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি নৰ্ডেন তাঁর ভাষণে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে জার্মান গণতান্ত্রিক কমিউনিস্ট পার্টির ‘গভীর একাত্মতা ও ঘনিষ্ঠ মৈত্রীর কথা ঘােষণা করেন। তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির বৃদ্ধি ও সুসংহতিরও প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভারত সােভিয়েত চুক্তির গুরুত্ব ভারতের জাতীয় সীমানা ও সােভিয়েতের শান্তি স্থাপন প্রচেষ্টার বিবৃতির উর্ধ্বে। তিনি ওয়াশিংটন-বন পিকিং ইসলামবাদ অক্ষের শান্তি বিরােধী ভূমিকার নিন্দা করেন।
তিনি জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের অগ্রগতির বিশদ বিবরণ দেন। তিনি ইউরােপীয় দেশসমূহের সম্পর্কের উন্নতির ও যুদ্ধ পরবর্তীকালের সীমান্তের স্বীকৃতির প্রকাশ ও পশ্চিম বার্লিনের চুক্তির উপর জোর দেন। ভারত সরকার কর্তৃক জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের স্বীকৃতির দাবিতে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অনলস প্রচেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
ফরাসী কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি বেলােস ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তির যুক্তফ্রন্ট গঠনের লাইনকে পূর্ণ-সমর্থন জানান। হাঙ্গেরির প্রতিনিধিও অনুরূপ সমর্থন প্রকাশ করেন। পােলিস প্রতিনিধি আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা ও সকল কমিউনিস্টের সম্ভ্রম সৃষ্টিকারী ভারতের ভবিষ্যৎ গঠনে এই পার্টির ভূমিকাকে অভিনন্দন জানান।
বৃটিশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দুইদেশের পার্টির সংগ্রামের ঐক্য দেখিয়ে বলেন যে, ভারতের পার্টির সংগ্রাম ভারতের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার সঙ্গে জনগণের সামাজিক ও আর্থিক মুক্তির মধ্য দিয়ে সমাজতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির ঐক্যকে রূপ দিচ্ছে।

সূত্র: কালান্তর, ৭.১০.১৯৭১