মৌলনা ভাসানী, আহ্বান
পাকিস্তানের জঙ্গী শাসকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনার জন্য মৌলনা ভাসানী বাঙলাদেশে সর্বদলীয় কমিটি গড়ে তােলার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এই কমিটির অন্যতম প্রধান কাজ হবে ট্যাক্স বন্ধ আন্দোলন পরিচালনা করা। দেরীতে হলেও এই আহ্বানের তাৎপর্য আছে। যে সমস্ত দল ইয়াহিয়ার সামরিক শাসন ও আক্রমণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে সেই সমস্ত দলের ঐক্য এবং সংহতি ব্যতীত সংগ্রামে সাফল্য অর্জন করা কঠিন। এই সংহতি ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে সংগ্রাম করার অর্থ হচ্ছে অহেতুকভাবে শক্তিক্ষয় এবং আক্রমণকারীদের বিভিন্নভাবে সুবিধা দেওয়া। এই সর্বদলীয় ঐক্য যে বাঙলাদেশের জনমানসে এক বিরাট আশা ও সাহস সঞ্চার করবে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। অতএব মৌলনা ভাসানীর এই আহ্বান এক সর্বনিম্ন কর্মসূচীর ভিত্তিতে সকল দলকে ঐক্যবদ্ধ করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
কিন্তু মৌলনা সাহেব এক সঙ্গে সর্বদলীয় সরকার গঠনের কেন আহ্বান জানাননি বলা কঠিন। কারণ বর্তমান অবস্থায় বাঙলাদেশে সংগ্রামের প্রধানরূপ যেহেতু সশস্ত্র সংগ্রাম এবং যেহেতু সেখানে একটা সরকার গঠিত হয়েছে ও তার নেতৃত্বে বিভিন্ন জেলায় সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে, সেই কারণেই সর্বদলীয় কমিটি গঠনের সঙ্গে সর্বদলীয় সরকার গঠনের আহ্বান অত্যন্ত জরুরী এবং গুরুত্বপূর্ণ।
বাঙলাদেশে আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত পাক সেনার বিরুদ্ধে কোন দল, যতই শক্তিশালী হােক না কেন, এককভাবে পরাক্রমশালী শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পূর্ণ সাফল্য অর্জন করতে পারে না। তাই লড়াই নিছক সামরিক লড়াই হয়, এটা রাজনৈতিক সগ্রামও বটে। জেনে রাখা দরকার যে ইয়াহিয়া খানের পেছনে সাম্রাজ্যবাদ ও চীন উভয়ে সক্রিয় সাহায্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অতএব বাঙলাদেশে ঐক্যবদ্ধ কমিটি ও সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রশ্নটি একেবারে মৌলিক। সর্বদলীয় কমিটি ও সর্বদলীয় সরকার, সমস্ত শ্রেণীর মানুষকে সুসংগঠিত করতে পারে এবং সশস্ত্র লড়াইয়ে সাধারণ মানুষকে উদ্ধৃদ্ধ করতে সক্ষম। এই দুই শ্লোগান পরস্পরের অনুপূরক। এই শ্লোগানই বাঙলাদেশের মানুষকে নতুন সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবে।
সূত্র: কালান্তর, ৪.৬.১৯৭১