শত্রুকে যারা সাহায্য করছে
যুদ্ধের সময় কোন ব্যক্তি বা গােষ্ঠী যখন শত্রু পক্ষের সাহায্য করে তখন তাদের শত্রু হিসাবে গণ্য করা হয় এবং তদনুসারে শাস্তিও দেওয়া হয়। বাঙলাদেশের সাত কোটি নরনারী এখন কার্যত পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদারদের সঙ্গে সর্বাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত। বাঙলাদেশের এই মুক্তি সংগ্রামের প্রতি ভারত সরকার, ভারতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনীতিক দল ও ব্যক্তিরা অকুণ্ঠ সমর্থন ঘােষণা করেছে। পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে ভারতের কূটনীতি সম্পর্ক এখনও বজায় থাকলেও বাঙলাদেশের হানাদারদের শত্রু হিসেবেই সর্বত্র ধিক্কার দেওয়া হচ্ছে। এদের সঙ্গে যারা সহযােগিতা করে তারা এপার বা ওপারের যে কোন পারের লােকই হােক বাঙলাদেশের মুক্তিযােদ্ধা এবং ভারতের নাগরিকদের তারা শত্রু, ওপারে মুক্তি যােদ্ধার এই ধরনের শত্রুদের তালিকা করে একের পর একজনকে চরম শাস্তি দিচ্ছেন। মুর্শিদাবাদ জেলার বাজনাবাদ, খাসমহল, কাগজমজী, ধনিরামপুর, সাগরপাড়া প্রভৃতি অঞ্চলের কিছু ভারতীয় ব্যবসায়ী দৈনিক ১৫০-২৫০ টিন কেরােসিন, ২০০ বস্তা লবণ সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানী হানাদারদের কাছে পাচার করছে। বাঙলাদেশ সরকার যখন প্রতিদিন আহ্বান জানাচ্ছে শত্রুদের ভাতে-পানিতে মারাে তখন এদেশের একদল লােভী ব্যবসায়ী দিনের পর দিন শক্রর হাতে নিত্য প্রয়ােজনীয় জিনিসপত্র তুলে দিচ্ছে। এর ফলে কেবল মুর্শিদাবাদের ঐ সব অঞ্চল নিষ্প্রদীপ হয়ে পড়েছে তাই নয়, এদেশের বাজারের দরও হু হু করে চড়ছে। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে যারা এইভাবে জাতির স্বার্থের বিরােধিতা করে শত্রুকে সাহায্য করে তাদের যদি অবিলম্বে আইনের দরবারে হাজির করা না হয়ে তবে ভবিষ্যতে যে কোন আপতকালিন পরিস্থিতিতে এই লােভী ব্যবসায়ীর দল শত্রুর স্বার্থে অন্তর্ঘাত কাজের শক্তি হয়ে দাঁড়ায়। এই ব্যবসায়ীদের নিরস্ত করার জন্য যে এনফোর্সমেন্ট দপ্তরের দায়িত্ব আছে তাদের নীরবতা আরও বিস্ময়কর। তবে কি একথা বুঝতে হবে এই পাচার ব্যবসায় স্থানীয় এনফোর্সমেন্ট দপ্তর জড়িয়ে পড়েছে? তা যদি না হয় তবে যে কথা জনসাধারণ জানে তা এদের চোখে পড়ে না কেন। দেশের মধ্যে চোরাই ব্যবসা এবং তাকে মদত দেওয়া এক জিনিস কিন্তু সেই ব্যবসা যদি শত্রুর সঙ্গে হয় এবং তাকে মদত দেওয়া হয় তবে তার বিচার স্বতন্ত্র। একথা ঐ ব্যবসায়ীরা এবং এনফোর্সমেন্ট বিভাগ মনে রাখলে ভাল করবে।
সূত্র: কালান্তর, ২.৬.১৯৭১