You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.21 | বাঙলাদেশের সংগ্রাম বিশ্বের সমর্থন পাবেই- চট্টগ্রামের উপাচার্যের দৃঢ় প্রত্যয় | কালান্তর - সংগ্রামের নোটবুক

বাঙলাদেশের সংগ্রাম বিশ্বের সমর্থন পাবেই
চট্টগ্রামের উপাচার্যের দৃঢ় প্রত্যয়

নয়াদিল্লী, ২০ জুন-বিশ্বের বিভিন্ন সরকারের ওপর বাঙলাদেশের জনগণ “এখনও বিশ্বাস হারায়নি।” চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ, আর, মল্লিক আজ এখানে একথা বলেন।
ইউ, এন, আই জানিয়েছে, ড. মল্লিক সহ তিনজন সদস্য বিশিষ্ট এক প্রতিনিধিদলকে এখানে ভারতীয় প্রেসক্লাবে সংবর্ধনা জানানাে হয়। ড. মল্লিকের অন্যান্য সদস্যরা বাঙলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. আনিসুস জামাল ও মূতজাত পাক-জাতীয় পরিষদ সদস্য সুবিদ আলি।
এক মর্মস্পর্শী ভাষণে ড, মল্লিক বলেন, “আজ না হয় আগামীকাল বিশ্বের জনগণ এবং সরকারগুলি আমাদের উদ্দেশ্যের পেছনে যুক্তি খুঁজে পাবেন।”
ক্ষোভের সঙ্গে ড. মল্লিক বলেন, কোন কোন রাষ্ট্র “আমার দেশে নারী, পুরুষ এবং শিশুর নির্বিচার হত্যার প্রতি চোখ বন্ধ করে রেখেছেন এবং পাকিস্তানের ঘটনাকে ঐ রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ বিষয়রূপে দেখছেন।”
তিনি বলেন, “আমরা বাঙালীরাই কেবল সংগ্রাম করতে বাধ্য হচ্ছি তাই নয়, আগামীকাল পশ্চিম পাকিস্তানে আমাদের ভাইদেরও উঠে দাঁড়াতে হবে এবং তাদের মুক্তির অধিকার, সাম্য এবং ন্যায় বিচারের জন্য পাকিস্তানী জুন্টার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে।
ড. মল্লিক বলেন,-আমাদের দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই করে যাব। বাঙলাদেশের জনগণের মনােবল এত তীব্র ড. মল্লিক বলেন যে, ৬০ বছরের বৃদ্ধরাও মুক্তিফৌজের যােগদান করার জন্য এগিয়ে আসছেন। আমরা যখন মুক্তিফৌজের জন্য ১ হাজার লােক চাচ্ছি তখন মৃত্যুর মুখে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য ৩ হাজার লােক এগিয়ে আসছেন।
পাকিস্তানের সামরিক জুন্টা যে অপপ্রচার করছে তার তীব্র প্রতিবাদ করে ড. মল্লিক বলেন, বাঙলাদেশে কোন বাঙালী অবাঙালী দাঙ্গা হয় নি।
পাকিস্তানী প্রচার যন্ত্রের ফাঁদে আরব দেশগুলি পা দেওয়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাঙলাদেশ সরকারের সীমাবদ্ধ ক্ষমতা দিয়ে পাকিস্তানী প্রচারের বিরােধিতা করা সম্ভব হচ্ছে না। তা সত্ত্বেও আরব দেশগুলির মনে যে ধারণা দৃঢ়মূল হয়েছে যে, বাঙলাদেশের প্রতিষ্ঠা একটি ঐশ্লামিক জাতির সংহতি বিনষ্ট করবে তা দূর্বল করার জন্য মুসলমানদের বিরুদ্ধে পাক-ফৌজেরা যে নৃশংস বর্বরতার অনুষ্ঠান করেছে তা তাদের জানানাের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি পাকিস্তানের এই অপপ্রচারও খণ্ডন করেন যে, ২৫ মার্চ ইয়াহিয়ার ফৌজ আক্রমণ না করলে বাঙলাদেশের জনতাই তাদের আক্রমণ করত। তিনি বলেন ২৫ মার্চ রাত্রিতে শহরের পুলিস এবং ই, পি, আর সৈন্যদের ঘুমন্ত অবস্থায় আক্রমণ করে হত্যা করা হয়।

সূত্র: কালান্তর, ২১.৬.১৯৭১