বাঙলাদেশের মানুষের কাছে ইয়াহিয়ার বক্তব্যের মূল্য নেই
কলকাতা, ২৮ জুন (ইউ এন আই) – পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বক্তৃতায় বাঙলাদেশের মানুষের কাছে কোনও প্রস্তাবই করা হয়নি। এই মুহূর্তে বাঙলা দেশের জনগণ মুক্তির জন্য সংগ্রাম করছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ইয়াহিয়ার বক্তৃতা নিয়ে কিছু বলাও তাই নিষ্প্রয়ােজন।
বাঙলাদেশ মিশনের জনৈক মুখপাত্র এই মন্তব্য করে আজ বলেন, “আমরা আমাদের দেশ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীকে তাড়িয়ে দিয়ে আমাদের মাতৃভূমি সম্পূর্ণ মুক্ত করতে বদ্ধ পরিকর।”
তিনি বলেন, ইয়াহিয়ার বক্তৃতা আর একবার এই ঘটনাকেই সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে যে, পাকিস্তানে গণন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে। সেই সঙ্গে বাঙলাদেশের অধিকত অঞ্চলে স্বাভাবিক অবস্থায় যাবতীয় পাকিস্তানী দাবিও এই বক্তৃতার মধ্য দিয়ে নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে। ইয়াহিয়ার বক্তৃতায় স্পষ্টতই বাঙলাদেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে পাক সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা স্বীকৃত হয়েছে।
পাকিস্তানের কলকাতাস্থ প্রাক্তন ডেপুটি হাইকমিশনার শ্রী কে এম শাহাবুদ্দীন ইয়াহিয়ার বেতার ভাষণ সম্পর্কে বলেন, পাক প্রেসিডেন্টের বাঙলাদেশ সম্পর্কে কিছু বলবার অধিকার নেই। বাঙলাদেশ সার্বভৌম ও স্বাধীন রাষ্ট্র।
ইয়াহিয়া খান তার ব্যক্তিগত শাসনকে স্থায়ী করার এবং গণতন্ত্রের স্বাসরােধ করার যে কদর্য চেষ্টা করছেন, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সমস্ত দেশ তার নিন্দা করবে বলে তিনি আশা করেন।
পশ্চিম-পাকিস্তানের জনগণকে হুশিয়ার করে দিয়ে শ্রীশাহাবুদ্দিন বলেন, “সে দিন খুব সুদূর নয় যেদিন জেনারেল ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তানেও অনুরূপ গণহত্যা শুরু করবে।” পাক প্রেসিডেন্টের ভাষণে এটা স্পষ্ট যে তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য পাকিস্তানের উপর নিজেকে জবরদস্তি চাপিয়ে দেওয়া প্রেসিডেন্ট করে রাখতে চান এবং গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক রীতিনীতির তিনি কোনও পরােয়া করেন না।
সূত্র: কালান্তর, ২৯.৬.১৯৭১