“বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে বিজয় সুনিশ্চিত” বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘মুক্তিযুদ্ধ’তে প্রত্যয় প্রকাশ
(স্টাফ রিপাের্টার)
এখানে প্রাপ্ত পূর্ব পাকিস্তানের তথা বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র মুক্তিযুদ্ধ’তে এই প্রত্যয় প্রকাশ করা হয়েছে যে, “বাঙলাদেশের মুক্তি-সংগ্রামে বিজয় সুনিশ্চিত”। ঐ মুখপত্রে “মুক্তি, না হয় মৃত্যু সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, “বাঙলাদেশ হইতে দস্যু সর্দার ইয়াহিয়া খানের বর্বর সৈন্যদরকে নিশ্চিহ্ন করে মাতৃভূমির পরিপূর্ণ স্বাধীনতা কায়েম করার জন্য অস্ত্রহাতে দুর্বার সংগ্রাম চালাইয়া যাওয়ার কঠোর সংকল্প কমিউনিস্ট পার্টি’ ঘােষণা করিয়াছে। কমিউনিস্ট কর্মীরা মুক্তিফৌজের যােগদান করিয়া শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই ও করিতেছেন।” দেশবাসীর প্রতি কমিউনিস্ট পার্টির আবেদন এই শিরােনামায় বলা হয়েছে “বাঙলাদেশের যুব-সম্প্রদায়ের নিকট কমিউনিস্ট পার্টি আহ্বান জানাইতেছে যে, হানাদার সৈন্যরা যখন আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে শশানে পরিণত করিতেছে, আমাদের মা-বােনেদের ইজ্জত নষ্ট করিতেছে তখন আপনারা চুপ করিয়া বসিয়া থাকিতে পারেন না। আপনারা ইহার বদলা নিন, হাজার হাজারে বাঙলাদেশের সেনাবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীতে যােগদান করুন এবং সশস্ত্র সংগ্রাম দ্বারা হানাদার সৈন্য নিশ্চিত করিয়া স্বাধীন ও নতুন বাঙলা গড়িয়া তুলুন।” “বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে বিজয় সুনিশ্চিত” এই শিরােনামার সংবাদে একস্থানে বলা হয়েছে, “বাঙলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শত্রু-মিত্র চিহ্নিত হইবে। এই লড়াইয়ে শত্রু সাম্রাজ্যবাদের সমর্থন পুষ্ট পশ্চিম পাকিস্তানের একচেটিয়া পুঁজিপতি গােষ্ঠী ও সামন্তবাদ, শ্রেণী এবং উহাদের প্রতিভূ ইয়াহিয়া চক্র ও উহাদের সামরিক বাহিনী। ইহার মিত্র বাঙলাদেশের সকল শ্রেণীর সমগ্র জনগণ (ইয়াহিয়ার চক্রের সহযােগী মুষ্ঠিমেয় বেইমান ছাড়া) এবং পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচ, পাঠান, সিন্ধী প্রভৃতি নিপীড়িত জাতির জনগণ এবং পাঞ্জাবের সীমান্তবাদী একচেটিয়া পুঁজিবাদী শােষণে জর্জরিত গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষ। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শত্রু মিত্রকে চিহ্নিত করিতে হইবে। ইতিপূর্বে দেখা গিয়াছে, বাঙলাদেশের গণতান্ত্রিক শক্তির একাংশের মধ্যে সাম্রাজ্যবাদ, বিশেষতঃ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের সম্পর্কে মােহ রহিয়াছে। আজ বাস্তব অভিজ্ঞতার আলােকে একথা উপলব্ধি করিতে হইবে যে, সাম্রাজ্যবাদীরা ইয়াহিয়া চক্রের সহিত গাঁটছড়ায় আবদ্ধ। ইয়াহিয়ার অস্ত্রদাতা। উহারা বাঙলাদেশের স্বাধীনতা সগ্রামের অন্যতম প্রধান শত্রু। পক্ষান্তরে দুনিয়ার সকল গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রবর্গ বাঙলাদেশের বন্ধু। এশিয়া আফ্রিকার কোন কোন দেশে বাঙলাদেশের, সংগ্রাম সম্পর্কে বিভ্রান্তি আছে সত্য কিন্তু ইহা কাটাইয়া তুলিয়া আফ্রো-এশিয়া রাষ্ট্রবর্গের সমর্থন সংগ্রহ করিতে হইবে। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রবর্গ বিশেষতঃ সােভিয়েত ইউনিয়ন, পূর্ব জার্মানী, চেকোশ্লভকিয়া, হাঙ্গেরী বুলগেরিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্র খুনী ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সােচ্চার হইয়া উঠিয়াছে। তৃতীয়তঃ বাঙলাদেশের স্বাধীনতার লড়াইয়ে দ্রুত ও সুনিশ্চিত বিজয় অর্জন এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য সমর্থন লাভের জন্য সকল সংগ্রামী শক্তির সমবায়ে জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট গঠন অপরিহার্য। বাঙলার মুক্তি সংগ্রাম সকল শ্রেণীর সমস্ত মানুষের সর্বাধিক সমাবেশের জন্য একান্ত জরুরী। ভিয়েতনাম, আলজিরিয়া প্রভৃতি দেশের মুক্তিসংগ্রামে ইহার দৃষ্টান্ত রহিয়াছে। কাজেই আওয়ামী লীগ, ন্যাপ (ওয়ালী মােজাফফার) ও কমিউনিস্ট পার্টিসহ সকল সংগ্রামী দল ও সংগঠনকে সর্বনিম্ন কর্মসূচীর ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করা দরকার।”
সূত্র: কালান্তর, ১২.৭.১৯৭১