বাঙলাদেশের উপর অসাধারণ আলােকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন
(স্টাফ রিপাের্টার)
কলকাতা, ১১ সেপ্টেম্বর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আজ সকালে কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রচার দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্ৰীমতী নন্দিনী সৎপথী বাঙলাদেশের উপর একটি অসাধারণ আলােকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। প্রদর্শনীটি ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খােলা থাকবে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় সংহতি সমিতির উদ্যোগে বাঙলাদেশের পটভূমিকায় ফ্যাসিবাদী সামরিক একনায়কত্বের বিরুদ্ধে যে সারা ভারত ছাত্র শিক্ষক কনভেনশন ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে চলেছে সেই কনভেনশনকে কেন্দ্র করেই ঐ আলােকচিত্র প্রদর্শনী। কমিউনিস্ট নেতা শ্রী ভূপেশ গুপ্ত প্রদর্শনী চত্বরে নির্মিত শহীদ বেদীতে মাল্যার্পণ করেন।
প্রদর্শনীতে ৩০০-র অধিক আলােকচিত্রে শেখ মুজিবরের নেতৃত্বে মার্চ মাসের অসহযােগ আন্দোলন, ইয়াহিয়া-ভুট্টো- মুজিব আলােচনা, ২৫ মার্চের পর সামরিক বাহিনীর নৃশংসতা ও অপহিত মুক্তি-সংগ্রামের বিশদ বিবরণ ফুটে উঠেছে। প্রদর্শনীর একস্থানে বাঙলাদেশ মুক্তি-সংগ্রাম প্রসঙ্গে বাঙলাদেশ মন্ত্রিসভার পরামর্শদাতা কমিটিভুক্ত বহু বিশিস্ট নেতার প্রতিকৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য।
প্রদর্শনী উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়ােজিত এক সভায় শ্রীগুপ্ত সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত পরামর্শদাতা কমিটিকে “বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ঐক্যের প্রতীক” রূপে অভিহিত করে তাকে ঐকান্তিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান।
শ্রীগুপ্ত বলেন, বাঙলাদেশের সগ্রাম বিশ্বজোড়া সাম্রাজ্যবাদবিরােধী, স্বাধীনতা, শান্তি, প্রগতি ও গণতন্ত্রের সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িত প্রমাণ বিশ্বের সবচেয়ে ঘৃণিত সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ বর্বর ইয়াহিয়াকে যখন বিপুল পরিমাণে অস্ত্রসম্ভার সরবারাহ করছে তখন ভারতের সঙ্গে সােভিয়েত ইউনিয়নের মৈত্রী চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এই চুক্তি শুধু ভারতের নিরাপত্তার রক্ষাকবচ নয়, বাঙলাদেশের মুক্তি-সংগ্রামের পক্ষে বিপুল উৎসাহ প্রদানকারী শক্তিবিশেষ।
তিনি জানান, যেহেতু বাঙলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা, শান্তি, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় ধ্বজা তুলে ধরে লড়াই করছেন, সে কারণে ঐ সংগ্রামকে জয়যুক্ত করা আমাদের আদর্শগত কর্তব্য। “এটা যুদ্ধ, সত্যাগ্রহ নয়। তাই সশস্ত্র সহায়তা চাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যথেষ্ট পরিমাণে হাতিয়ার পেলে মুক্তিযােদ্ধারা অতিশীঘ্র। ঢাকা দখল করবেন। তার জন্যই চাই বাঙলাদেশের স্বীকৃতি।”
তিনি স্বীকার করেন, বাঙলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভারত সরকারের প্রতিনিধিদের খােলাখুলি আলােচনা সে পথে একটি বিশেষ পদক্ষেপ। তিনি আরও জানান, বাঙলাদেশের সংগ্রামের সাফল্য পশ্চিম পাকিস্তানের প্রগতিশীল আন্দোলনের বিকাশ তরান্বিত করবে।
সূত্র: কালান্তর, ১২,৯,১৯৭১